নওগাঁয় আদালতের নথি জালিয়াতির অভিযোগে জেলা পরিষদের সদস্য জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলামকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বিচারকের নির্দেশে জহুরুলের ছেলে জোবায়ের হোসেনকে (২৩) আটক করেছে পুলিশ।
আদালতের নথি জালিয়াতির অভিযোগে করা মামলায় জেলা পরিষদের সদস্য জহুরুল ইসলাম গতকাল বুধবার (২৬ আগস্ট) আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে নওগাঁর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৫-এর বিচারক সোহেল রানা তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ।
এদিন মামলাটির শুনানি শেষে এজলাসকক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় জহুরুলের লোকজনের বিরুদ্ধে বাদী শাহানূর ইসলামকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বিচারকের নির্দেশে জহুরুলের ছেলে জোবায়ের হোসেনকে (২৩) আটক করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে মামলার বাদী অ্যাডভোকেট শাহানূর রহমান জানান, মামলার শুনানি শেষে এজলাসকক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় জহুরুলের ছেলে জোবায়ের হোসেনের নেতৃত্বে ছয়-সাতজন তাঁকে মারধর করেন। কক্ষের বারান্দায় হইচই শুনে বিচারক এজলাস থেকে নেমে এসে ঘটনা শোনার পর জোবায়েরকে আটকের নির্দেশ দেন।
মামলার আরজি ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি জহুরুলকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে আইনজীবী শাহানূর ইসলাম, তাঁর চাচা খাজাম উদ্দীন ও রিপন হোসেনের বিরুদ্ধে বদলগাছী থানায় মামলা করেন। এ মামলার শুনানির পর ৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে আদালত সমন জারি করেন। এই সমন আসামিদের কাছে বদলগাছী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহাবুর রহমানের পৌঁছে দেওয়ার কথা। কিন্তু মাহাবুর আসামিদের বাড়ি না গিয়ে সমনটি পেয়েছেন বলে খাজাম উদ্দীনের সই জাল করে আদালতে নথি জমা দেন। প্রকৃতপক্ষে সমন না পাওয়ায় আসামিরা আদালতে নির্দিষ্ট দিনে হাজির হতে পারেননি। এ কারণে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
শাহানূর সমনে খাজাম উদ্দিনের সই জাল করা হয়েছে বলে আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন। এতে তিনি বলেন, বর্ণিত ঘটনার সময় তিনি প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ইতালি ছিলেন। এএসআই মাহাবুর, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) জুবায়ের হোসেন ও বাদী জহুরুল যোগসাজশ করে হয়রানি করতে আদালতের নথি জালিয়াতি করেন। এ অভিযোগ আমলে নেন আদালত। আদালতের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম বিষয়টি তদন্ত করেন। তিনি তদন্তে অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে ২০১৮ সালের ৬ মে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন।
ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম স্বপ্রণোদিত হয়ে নথি জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। এতে এসআই জুবায়ের, এএসআই মাহাবুর ও জেলা পরিষদের সদস্য জহুরুলকে আসামি করা হয়।
আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর ঘটনাটি তদন্ত করেন। তিনি গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর আদালতে মাহাবুর ও জহুরুলকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই দিনই আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। সমন পেয়ে আদালতে হাজির হলে ৯ ফেব্রুয়ারি এএসআই মাহাবুরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে জহুরুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এই মামলায় আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন জহুরুল ইসলাম। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক সোহেল রানা জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জানতে চাইলে আদালত পুলিশের পরিদর্শক ফিরোজ হোসেন বলেন, জোবায়ের হোসেন বর্তমানে আদালত কারাগারে রয়েছেন। আদালত চত্বরে মারামারির ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।