কারাবন্দি জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনার দুটি জাতীয় পরিচয়পত্রকে কেন্দ্র করে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সময় টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে ড. মিজানুরের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সাজ্জাদ হোসেন, ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ, অ্যাডভোকেট বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া ও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এ নোটিশ পাঠান।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর, নির্বাচন কমিশনের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট মো. শাহাবুদ্দিন, সময় টিভির বার্তাপ্রধান ও প্রতিবেদককে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ড. মিজানকে জড়িয়ে প্রচারিত প্রতিবেদন প্রত্যাহার ও সংবাদ সম্মেলন করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর সময় টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার নমুনা পরীক্ষায় প্রতারণা মামলায় কারাবন্দি জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনার জাতীয় পরিচয়পত্রের তদবিরে নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান।
সময় টিভিতে সম্প্রচার হওয়া এ সংক্রান্ত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ড. মিজানুর রহমান। মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, সময় টিভির কাছে নির্বাচন কমিশন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নামে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলে, যার সূত্র ধরে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সময় টিভি নিরলসভাবে আমার নাম উল্লেখ করে ক্রমাগতভাবে মিথ্যা, সূত্রহীন এবং অবিশ্বাস্য সংবাদ প্রচার করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি একজন অধ্যাপক এবং সারাবিশ্বে আমার অসংখ্য শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ী রয়েছেন। এমন মিথ্যা অভিযোগ আমার সম্মানের অপরিমেয় ক্ষতি করেছে এবং করে যাচ্ছে।’
‘গত ২ সেপ্টেম্বর সকালে কোনো রকম পূর্বসম্মতি ছাড়াই সময় টিভির দুই সাংবাদিক আমার বাসায় আসেন। আমি ভদ্রতাবশত তাদের সঙ্গে কথা বলি। তারা আমাকে সরাসরি প্রশ্ন করেন যে ডা. সাবরিনার দুটি এনআইডি আছে আমি জানি কিনা। এরপর আমাকে তারা বলেন যে, নির্বাচন কমিশন সময় টিভিকে জানিয়েছে, আমার সুপারিশে দ্বিতীয় আইডি করা হয়েছে, আমি নির্বাচন কমিশনে স্বশরীরে সাবরিনাকে নিয়ে গেছি এবং সেখানে নাকি আমার ভিজিটিং কার্ড পাওয়া গেছে।’
‘আমি এ কথা শুনে খুবই অবাক হই এবং সাংবাদিকদের পরিষ্কারভাবে জানাই যে, ডা. সাবরিনাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না, তার সঙ্গে আমার কখনও সাক্ষাৎ হয়নি। আমি কখনও নির্বাচন কমিশনে পা রাখিনি এবং যেহেতু সাবরিনাকে চিনি না, কাজেই আমার পক্ষে তাকে কার্ড দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ কথা বলার পরপরই সময় টিভির সাংবাদিকরা কোনো বাক্যালাপ না করে চলে যান। এমন অসাংবাদিকতাসুলভ আচরণে খটকা লাগায় আমি সময় টিভির হেড অব নিউজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি সারাদিন আমার ফোন উপেক্ষা করেন, তবে বিকালের দিকে তিনি ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, অফিসের বাইরে থাকায় তিনি ফোন রিসিভ করতে পারেননি এবং আশ্বস্ত করেন যে, সময় টিভি আমাকে জড়িয়ে কোনো ভ্রান্তিমূলক রিপোর্টিং করবে না।’
তথাপি সাক্ষাৎকারের ২৪ ঘণ্টা পর সময় টিভির প্রতিবেদক আমার নাম জড়িয়ে রিপোর্ট করে। সেই রিপোর্টের শিরোনামে বিশেষভাবে আমার নাম এবং সাব-হেডিংয়ে আমাকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
রিপোর্টে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট মো. শাহাবুদ্দিন বিবৃতি দেন যে, ‘আমি নিজে নির্বাচন কমিশনে সাবরিনাকে নিয়ে গিয়েছি। তিনি বলেন, ‘ফাইলটায় দেখলাম মিজানুর রহমান স্যারের কার্ড আছে। তখন মিজানুর রহমান এসেছিলেন ওনাকে নিয়ে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে আমার কথা হয়নি…, তখন তিনি আমাদের সিনিয়র স্যারদের রুমে ছিলেন।’
ওই ভিডিও ক্লিপে আরও দেখানো হয় আমার পুরোনো ভিজিটিং কার্ডের আদলে বিকৃত একটি কার্ড ফর্মে আটকানো আছে, কিন্তু সেই ফর্মের কোথাও আমার নিজ হাতের লেখা, স্বাক্ষর বা সুপারিশমূলক লেখা নেই। এমনকি ফর্মে মিজানুর রহমান শব্দটিকে ঘষামাজা করা হয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে।
সময় টিভির আরেকটি ক্লিপে মো. শাহাবুদ্দীন আরও বলেন, ‘তখন আমাদের যে ডিভাইসটা ছিল-কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রিন্টে দেখা যায় যে অনেকের রেখাটা একটু ক্লিয়ার আসেনি। তাড়াহুড়া করে হয়েছে ২০০৭-০৮ এ। তখন মিজানুর রহমান স্যার এসেছিলেন ওনাকে নিয়ে, কিন্তু আমি তখন তো তাকে চিনতাম না, কারণ আমি তো তখন দেখেছি ফাইল, ফাইলে কী আছে, তারপরও কিন্তু ফাইলটা আটকিয়েছি, আটকানোর পরে আবার ডকুমেন্ট দেয়ার পরে কিন্তু আমি ভোটার করছি.. ডকুমেন্ট না দেয়ার আগ পর্যন্ত কিন্তু ভোটার হওয়ার জন্য এন্ট্রি করিনি… রেফারেন্স দিয়েছিল, কার্ড দিয়েছেন, ভিজিটিং কার্ড লাগানো আছে।’
‘কেবল অসমর্থিত মুখের কথার ভিত্তিতে একটি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে এভাবে সংবাদ সম্প্রচার দেশের আইন পরিপন্থী ও মানহানিকর। সময় টিভির এ সম্প্রচারের পর অন্যান্য প্রিন্ট মিডিয়া সংবাদটি কাভার করা শুরু করে এবং আজ দুপুর নাগাদ সারাদেশে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে আমার সারাজীবন শিক্ষকতার মাধ্যমে গড়ে তোলা সম্মানের অপরিমেয় ক্ষতি হয়েছে।’