আমাদের সমাজে কিছু মানুষের ধারণা রয়েছে মেয়েরা পৈতৃক সম্পত্তি বা অংশীদারি সম্পত্তি মীমাংসার মাধ্যমে বুঝে না পেলে বাটোয়ারা মামলা করতে পারে না। কিন্তু এই ধারণা ভুল। মেয়ে বা ছেলে উভয়ই বাটোয়ারা মামলা করে পৈতৃক সম্পত্তি বুঝে নিতে পারবে। এ বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন অ্যাডভোকেট রীনা পারভিন মিমি।
বাটোয়ারা মামলা
মুসলিম আইনে বাটোয়ারার অর্থ – সহ অংশীদারদের মধ্যে তাদের নিজ নিজ অংশ অনুসারে তুল্যমূল্য ভাগ বণ্টন করে নেওয়াকে বুঝায়। বাবা বা মায়ের মৃত্যু হলে সন্তানেরা তাদের জমির মালিক হন। এছাড়া পরিবারের আত্মীয় বা আপনজনের সম্পত্তির ওয়ারিশ তাদের মৃত্যুর পর জমির অংশীদার হয়। আর এই অংশ যখন মীমাংসার মাধ্যমে বুঝে না পাওয়া যায় তখন বাটোয়ারা মামলা করে যার যার অংশটুকু বুঝে নেওয়া যায়।
বণ্টন মামলার উদ্ভব
পৈতৃক সম্পত্তি বা আপনজনের ওয়ারিশান সম্পত্তি মিলেমিশে বা সকলে একমত হয়ে ভাগ করে নেওয়া যায়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় এই মিলমিশটা হয়না। সম্পর্কের মাঝে গোলযোগ দেখা যায়। অনেক সময় দেখা যায় অসচেতনার কারণে কোন শরিক ভাগাভাগি না করে অন্যের কাছে তার অংশের জমি বিক্রি করে দেয়। এ পরিস্থিতিতে বাটোয়ারা মামলার সূত্রপাত ঘটে। আবার দেখা যায় সম্পতি ভাগ হয়নি কিন্তু অংশীদারদের মধ্যে কেউ নিজের নামে কিছু সম্পত্তি নামজারী (mutation) করে ফলেছেন। এবার শুরু হয় সম্পত্তির জন্য রক্তের সম্পর্কে দ্বন্দ। উদ্ভব হয় বাটোয়ারা মামলার।
মেয়েরাও বাটোয়ারা মামলা করতে পারে
আমাদের সমাজে কিছু মানুষের ধারণা রয়েছে মেয়েরা পৈতৃক সম্পত্তি বা অংশীদারি সম্পত্তি মীমাংসার মাধ্যমে বুঝে না পেলে বাটোয়ারা মামলা করতে পারে না। কিন্তু এই ধারণা ভুল। মেয়েরা সাধারণত ভাইদের কাছে বাটোয়ারার কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না। আর এই সুযগে ভাইয়েরা বোনের সম্পত্তি নিজেদের নামে জরিপ/রেকর্ড করিয়ে নেয়। কিছু বছর পর এই জমির হদিস পাওয়া যায়না। তবে বাটোয়ারা মোকদ্দমা করে জমি উদ্ধার করা যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় জমি দখলে থাকে না। তবে মাথায় রাখতে হবে বাটোয়ারা মোকদ্দমা করতে হলে শুধু মালিকানার অংশীদার হলেই হবে কোন দখলের প্রয়োজন নেই। তবে বাটোয়ারা মোকদ্দমার সাথে দখলের আবেদনও করতে হবে। ‘কোন বিধবা নারীও তাহার স্বামীর অংশের বাটোয়ারা চাইতে পারে।’ [এআইআর ২০১৬ ভিলিউম ২৯]
ছেলেরা কখন বাটোয়ারা মামলা করতে পারে
প্রত্যেক পুরুষ বা ছেলেরা মুসলিম আইন অনুযায়ী তাদের পৈতৃক সম্পত্তির দখল অসুবিধা মনে করলে বাটোয়ারা চাইতে পারে। কোন ভাই বা শরিক যদি মনে করে যৌথ সম্পত্তির কোন অংশ অপর শরিক বা ভাই কোন অংশ না জানিয়ে খারিজ করে নিয়েছে তবে সেও মনে করলে তার জমির ভাগ বাটোয়ারার জন্য মামলা করতে পারে। কোন যৌথ সম্পত্তির কোন অংশের দখলে কোন সহ অংশীদার ক্ষুব্ধ হলে তিনি বাটোয়ারা মামলা করতে পারেন। [১২ ডিএলআর ৭০৮; ৬ বিএলডি ১৫৫]
বাটোয়ারা মামলা করতে যেসব উপাদান থাকা আবশ্যক
প্রথমত, বাটোয়ারা মামলা যৌথ বা এজমালি সম্পত্তিতে যৌথ মালিকানা বা স্বত্বাধিকার থাকতে হবে।
দ্বিতীয়ত, পক্ষগণের সম্পত্তিতে মালিকানার বা স্বার্থের অভিন্নতা থাকতে হবে।
তৃতীয়ত, বাটোয়ারা মামলা করার জন্য অবশ্যই সর্বশেষ রেকর্ড যে স্থানে যে জরিপ হয়েছে, অর্থাৎ বিআরএস/বিএস/আরএস মহানগর জরিপ ইত্যাদিতে মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করে বণ্টন চাইতে হবে। আগের অর্থাৎ সিএস বা এসএ জরিপ অনুযায়ী নয়।
চতুর্থত, এজমালি সকল সম্পত্তি বাটোয়ারা মামলার বিষয়বস্তুতে আনতে হবে।
পঞ্চমত, দ্যা লিমিটেশন অ্যাক্ট এর ১৪৪ অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে বাটোয়ারার কারণ উদ্ভবের তারিখ হতে ১২ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। তবে ভুল এসএ রেকর্ড দ্বারা বাদীর স্বত্ব অন্যের নামে চলে গেলে এরূপ খতিয়ান প্রকাশের ৬ বছরের মধ্যে স্বত্ব ঘোষণার জন্য না আনলে তা তামাদিতে।
ষষ্ঠত, কোর্ট ফি আইনের ৭/১৭ ধারা অনুসারে ফি পরিশোধ করতে হবে।
সপ্তমত, সকল অংশিদারকে পক্ষ করতে হবে।
যদি ছেলে বা মেয়ে তার প্রাপ্য হিস্যা অনুযায়ী যৌথ বা এজমালি সম্পত্তির অংশ মীমাংসার মাধ্যমে আদায় করতে না পারে তবে তার উচিৎ হবে অযথা বেআইনি ঝামেলায় না জড়িয়ে বাটোয়ারা মোকদ্দমা করে নিজের অংশটুকু বুঝে নেওয়া।
রীনা পারভিন মিমি : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও সহযোগী সম্পাদক- ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম। Email- rinaparvinmimi18@gmail.com