যশোরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) তিন কিশোর হত্যার ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর করা এক রিটের শুনানি নিয়ে আজ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সানজিদ সিদ্দিকী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
এর আগে, চলতি মাসে ভুক্তভোগী তিনটি পরিবার ওই রিট করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরদিন নিহত এক কিশোরের বাবা যশোর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়কসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া সংশোধনের জন্য কেন্দ্রে থাকা আরও আট কিশোরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একই দিন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল লাইছকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। পরে কমিটি ২৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়।
তিন কিশোর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই কেন্দ্রের চার কর্মকর্তা এবং তুলনামূলক বয়সে বড় ১২ কিশোরকে দায়ী করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। কমিটি বলেছে, বিচার বসিয়ে পেটানোর কারণে ৩ কিশোর নিহত ও ১৭ কিশোর আহত হয়। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ ১০ দফা সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ ঘটনার জন্য যশোর কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আবদুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান ও ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর শাহানূর আলমকে দায়ী করা হয়।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কমিটি বলছে, গত ৩ আগস্ট চুল কাটা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ওই দিন এক কিশোরকে চুল কেটে দিতে বলেন ওই কেন্দ্রের গার্ড নূর ইসলাম। কিন্তু ওই কিশোর শতাধিক বন্দীর চুল কেটে ক্লান্ত থাকায় সেদিন আর চুল কাটতে রাজি হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নূর ইসলাম অভিযোগ করেন। এ ঘটনার জেরে নূর ইসলামকে মারধর করা হয়। পরে গত ১৩ আগস্ট আবদুল্লাহ আল মাসুদ ওই মারধরের ঘটনার জন্য বিচার বসান। সেখানেই বিচারের নামে কিশোরদের পেটানো হয়। এতে ৩ কিশোর মারা যায় এবং ১৭ জন আহত হয়।