যৌতুক মামলা দায়েরের এক সপ্তাহের মাথায় এবার বিচারকের বিরুদ্ধে মারধরের মামলা করেছেন তাঁর স্ত্রী। ওই বিচারক হলেন মো. মাসুদ রানা। তিনি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আফতাবনগর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নীলফামারীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কর্মরত। তাঁর স্ত্রী ফারজানা নাসরিন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
ফারজানা গত ১৪ সেপ্টেম্বর যশোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দিন হোসাইনের আদালতে যৌতুকের মামলাটি করেন। সেটি আমলে নিয়ে আগামী ১৪ অক্টোবর ওই বিচারককে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তলব করা হয়েছে। এরপর গত মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) টি এম মুসার আদালতে মারধরের মামলাটি হয়। এটি গ্রহণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেছেন বিচারক।
জানা গেছে, বিচারক মাসুদ রানা ২০১৯ সালের ২১ জুন এক মেয়েকে বিয়ে করেন। যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করে না পেয়ে ওই বছরের ৪ নভেম্বর তাঁকে তালাক দেন। আগের বিয়ের কথা গোপন করে মাসুদ চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিকভাবে ফারজানাকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে যৌতুকের দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে মারধর শুরু করেন।
মারধরের ঘটনায় আদালতে করা আরজি সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচ লাখ টাকার দেনমোহর ধার্য করে মাসুদ রানার সঙ্গে ফারজানার বিয়ে হয়। সে সময় ফারজানার বাবা পাঁচ লাখ টাকার বিভিন্ন মালামাল ও দুই লাখ টাকার সোনার অলংকার যৌতুক হিসেবে দেন। কিন্তু ননদ রানী খাতুন ও তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমানের পরামর্শে ঢাকার পূর্বাঞ্চলে প্লট কেনার জন্য বিভিন্ন সময় ফারজানার কাছে যৌতুক হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন মাসুদ রানা।
আরজিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ফারজানা বিভিন্ন সময় মাসুদকে পাঁচ লাখ টাকা দেন। কিন্তু আরও পাঁচ লাখ টাকার দাবিতে তাঁকে নির্যাতন করতে থাকেন মাসুদ। এ ঘটনায় ফারজানা আদালতে মাসুদের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেন। সেটি আপস-মীমাংসার জন্য মাসুদ রানা, রানী ও জিয়াউরকে নিয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকায় ফারজানার বাবার বাড়িতে যান। সেখানে এসেও পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করা হয়। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মাসুদ মারধর করলে ফারজানা জখম হন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিচারক মাসুদ রানা বলেন, ‘করোনার কারণে গত কয়েক মাসে আমি যশোরেই যাইনি। তাহলে নির্যাতন করলাম কেমনে? আমার আগে বিয়ে ছিল, এ কথা কখনো গোপন করিনি। বরং আগের স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার জন্য ফারজানা আমাকে ফেসবুকে ও সরাসরি প্রভাবিত করেছেন। বরং বিয়ের পরে জানতে পেরেছি, আগের স্বামীর ঘরে ফারজানার মেয়ে রয়েছে। বিয়ের আগে সেটা ফারজানা গোপন করেছেন। বিয়ের পর বিষয়টা সামনে এলে আমার স্বজনেরা মেনে নিতে পারেননি। এ কারণে আমাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। তাঁর কাছ থেকে যৌতুকের টাকা নেওয়া বা মারধরের কোনো প্রশ্নই আসে না। মূলত আমার পেশাগত ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই এসব অভিযোগ করা হয়েছে।’