সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পরিচয়ে প্রতারণাকারী এক টাউটকে আটক করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আতোয়ার হোসেন নামের ওই টাউটকে আটক করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির টাউট উচ্ছেদ সাব-কমিটির সদস্যরা। পরে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়।
এ সময় প্রতারক আতোয়ারের সঙ্গে থাকা একটি পকেট ডায়েরির ভেতরে পাওয়া গেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, সংসদ সদস্য রাজ্জাক, টাঙ্গাইলের এসপি, ডিবি’র ওসি, পিবিআইসহ অনেকের মোবাইল নাম্বার।
জানা গেছে, শেরপুরের শ্রীবরদী থানার চরশিমুলচূড়া গ্রামের মো. আব্দুল আজিজের (৭০) বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণচেষ্টা মামলা হয়। ওই ধর্ষণচেষ্টার অপরাধে থানায় মামলা হওয়ার পর থেকে পলাতক আব্দুল আজিজ। পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানতে পারেন আজিজের দ্বিতীয় ছেলে পিকআপ চালক আশকর আলী। এরপর আশকর তার হেলপারের সঙ্গে মামলার বিষয়টি আলাপ করে। হেলপার তার বোন জামাই আতোয়ার হোসেনকে উকিল বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। আলাপকালে আতোয়ার হোসেন নিজেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং মামলাটি থেকে চিরতরে অব্যাহতি করিয়ে দিতে ১ লাখ টাকা খরচ দাবি করে। এরপর আব্দুল আজিজের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে আতোয়ার শেরপুর কোর্টে ওই মামলার জামিন শুনানি করতে যায়। সেখানে আদেশ হয়েছে জানিয়ে আরও ৩০ হাজার টাকা নেয় এবং আদেশের কপি চাওয়া হলে আদালত তা পরে দেবেন বলে জানায়। পরদিন আজিজকে ফোন করে আরও ১০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে আতোয়ার।
কিন্তু জামিন হয়েছে জেনেও ধর্ষণচেষ্টা মামলায় বাড়িতে সমন যাওয়ায় আজিজ তার কথিত উকিল আতোয়ারকে ফোন করেন। তখন আতোয়ার তাদের ঢাকার নবীনগরে আসতে বলেন এবং বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টে হাজির হতে বলে তাদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
মামলা থেকে চিরতরে অব্যাহতির আশ্বাসে আসামি আব্দুল আজিজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে দ্বিতীয় ছেলে ও তার বন্ধুসহ হাজির হন। এ সময় আতোয়ার আজিজের জামিন হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে একটি জাল নথি সরবরাহ করে। কিন্তু আজিজের ছেলের বন্ধু ওই নথিটি জামিননামা নয় বলে উল্লেখ করলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরইমাঝে প্রতারণার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির টাউট উচ্ছেদ সাব-কমিটির নেতাদের কানে আসে। এরপর তারা সন্দেহজনকভাবে তাদের সকলকে সমিতি ভবনে হাজির করে আতোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান। প্রতারক আতোয়ারের সঙ্গে থাকা যাবতীয় নথি জাল বলেও শনাক্ত করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির টাউট উচ্ছেদ সাব-কমিটি।
প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আতোয়ার হোসেন বলেন, ২০১১ সালে টাঙ্গাইলে বেসরকারি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৩ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর আইন পড়ে পাস করা হয়নি। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে টাঙ্গাইল কোর্টে মক্কেলদের থেকে মামলা নিয়ে উকিল ধরে আদেশ পাইয়ে দিতাম। অল্প কয়েকদিন হলো হাইকোর্টে এসেছি।
উল্লেখ্য, আইনজীবীদের পেশাগত মর্যাদা রক্ষায় অভিযানের পাশাপাশি সম্প্রতি এক নির্দেশনায় ‘টাউট’ শব্দকে সংজ্ঞায়িত করেছে এ সংক্রান্ত সাব-কমিটি। এর ফলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য ব্যতীত অন্য কেউ বিচারপ্রার্থী মক্কেলের নিকট হতে মামলা-মোকদ্দমা গ্রহণ/পরামর্শ প্রদান ও আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন না। সদস্য ব্যতীত অন্য কেউ এমনটি করলে তিনি ‘টাউট’ হিসেবে গণ্য হবেন।
সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল জব্বার ভূঁইয়াকে টাউট উচ্ছেদ সাব-কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে আরও দায়িত্বে আছেন মার-ই-য়াম খন্দকার, মো. হুমায়ুন কবির, আমীরুল ইসলাম খোকন, মোহাম্মদ মহসিন কবির, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন রতন, রাশেদা আলম ঐশী, ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া, মো. সাহাবু্দ্দীন খান লার্জ এবং মোহাম্মদ রবিউল হোসেন।