আদালতের নথি পরিদর্শন নিয়ে বিচারকের সিদ্ধান্ত মনঃপুত না হওয়ায় বিচারককে হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক আদালতের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন এক আইনজীবী। গত সোমবার রাজশাহীর বাগমারা সহকারী জজ আদালতে এই ঘটনা ঘটেছে।
আদালতসূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বাগমারা সহকারী জজ আদালতে নথি পরিদর্শন নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছিল। নথিতে কাটাছেঁড়া, নথির পাতা গায়েব হওয়া, কজলিস্টের পাতা ছিঁড়ে নেওয়া, এধরনের বেশকিছু সমস্যার প্রেক্ষিতে বাগমারা সহকারী জজ আদালতের বিচারক নিয়ম করেন, নথি পরিদর্শন করার সময় আদালতের কোনো একজন স্টাফকে সঙ্গে রাখতে হবে।
নিয়ম মোতাবেক গত সোমবার আদালতের কার্যক্রম চলাকালে রাজশাহী আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আলী আকবর প্রামাণিক আদালতের বিচারকের উপস্থিতিতে বেঞ্চ সহকারীর কাছে নথি চান। বিষয়টি বুঝতে পেরে বিচারক সংশ্লিষ্ট নথিটি অফিস সহায়কের হাতে তুলে দিয়ে ওই আইনজীবীকে দেখাতে বলেন। নথি পেয়ে ওই আইনজীবী সেটি দেখা শুরু করেন। এসময় বিচারক নথি পরিদর্শনের নিয়ম সম্পর্কে আইনজীবীগণকে অবহিত করেন এবং আদালত পরিচালনায় সব আইনজীবীর সহযোগিতা চান।
কিন্তু হঠাৎ ওই আইনজীবী দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘পিয়নের উপস্থিতিতে আমি কোনো নথি দেখব না’। প্রকাশ্য আদালতে বিচারককে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি কে, আপনি চেনেন? আপনি জানেন, আমি কে? আমি কেবল একজন অ্যাডভোকেটই নই। আমি আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
এরপর তিনি আদালতকক্ষ ত্যাগ করতে থাকেন এবং আদালতের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে অন্য আইনজীবীদের আদালত ত্যাগে বাধ্য করতে তাদের ধমকাতে থাকেন। এরপরও কিছু আইনজীবী এজলাসের ভেতরে থেকে গেলে তিনি বাইরে গিয়ে তাদের শাসাতে থাকেন। ফলে সকল আইনজীবী আদালত থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এভাবে তিনি বিচারকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য আদালতে হুমকি প্রদান করেন এবং জোরপূর্বক আদালতের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। আদালতের কার্যক্রম এভাবে বন্ধ করার ঘটনা নিয়ে বিচারক, আইনজীবী ও সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বাগমারা সহকারী জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী আব্দুর রাজ্জাকের কাছে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নথি পরিদর্শনের সময় আদালতের একজন স্টাফ সঙ্গে রাখাটা আইনেরই বিধান। এজন্য বিচারককে হুমকি, জোরপূর্বক আদালতের কার্যক্রম বন্ধ করা ও আদালতের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ করা আদালত অবমাননা ও ফৌজদারি অপরাধ। উক্ত আইনজীবীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে জেলা ও দায়রা জজের কাছে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আইন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে অবহিত করার প্রক্রিয়া চলছে। আদালত অবমাননার মামলা রুজু করার প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি জানান।