দেশের সব জেল সুপারকে আসামির ওকালতনামায় স্বক্ষরের জন্য আসামি ভিতরে কি বাহিরে আছে, তা নিশ্চিত হয়ে ওকালতনামায় স্বাক্ষর ও রেজিস্ট্রিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ওকালতনামায় ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর ছাড়া আসামি জামিনে মুক্ত হওয়ার ঘটনায় আজ সোমবার (১৯ অক্টোবর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে ওকালতনামায় ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর ছাড়া জামিনে মুক্ত হওয়া আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে আসামিকে পুনরায় বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি এ মামলার আইনজীবী ও ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলারকে ভবিষ্যতে এ রকম কাজ না করার জন্য সতর্ক করে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
আদালত তার আদেশে দেশের সব জেল সুপারকে আসামির ওকালতনামায় স্বক্ষরের জন্য আসামি ভিতরে কি বাহিরে আছে, তা ভেরিফাই করে ওকালতনামায় স্বাক্ষর ও রেজিস্ট্রিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
একইসঙ্গে ওকালতনামায় সংশ্লিষ্ট ডেপুটি জেলারের পূর্ণনামসহ স্বাক্ষরের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এসব আদেশ কার্যকরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের আইজি, আইজি প্রিজন ও সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি মাহজাবিন রাব্বানী দীপা। ডেপুটি জেলারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ আলী আজম। আসামিপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল ও শামীমা আক্তার।
এর আগে করোনা পরিস্থিতিতে ওকালতনামায় ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর ছাড়া হাইকোর্ট থেকে জামিন এবং পরবর্তী সময়ে আসামি জামিনে থাকা অবস্থায় আসামি জেলে আছে বলে ডেপুটি জেলার স্বাক্ষর দেন। ওই ঘটনায় গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার খন্দকার মো. আল মামুন আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ঘটনার বিবরণ দেখা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে যখন দেশের সব আদালত ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চলছিল, তখন প্রত্যেকটি মামলার ডকুমেন্ট ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠাতে হতো। সেই সময়ে এনআরবি ব্যাংকের জাল দলিল সৃজন, অতিমূল্যায়ন দেখিয়ে প্রায় ১১ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির দুই মামলায় জিওলোজাইজ সার্ভে করপোরেশনের প্রোপাইটর ও চিফ মো. মিজানুর রহমান কনক গত ১৫ জুন জামিনপ্রাপ্ত হন।
তখন শর্ত দেওয়া হয়, নিয়মিত কোর্ট খোলার এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন রেগুলার (পুনরায় আবেদন করে) করে নিতে হবে। কেননা, তখন হাইকোর্টে এফিডেভিট করে ই-মেইলে আবেদন করা হতো না।
এরপর যখন আংশিক শারীরিক উপস্থিতিতে কোর্ট চালু হলো ও এফিডেভিট করা চালু হলো, তখন এফিডেভিট সেকশন দেখতে পেলো, আসামির দুটি মামলার একটিতে ওকালতনামায় ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর নেই। এফিডেভিট সেকশন এফিডেভিট না করায় আসামিপক্ষের আইনজীবী শামীমা আক্তার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন।
পরে আইনজীবী আদালতে ওকালতনামায় স্বাক্ষর এফিডেভিটের জন্য নিয়ে আসলে আদালত দেখতে পান, আসামি জামিনে বাইরে থাকা অবস্থায় জেলের ভিতরে আছেন বলে ডেপুটি জেলার স্বাক্ষর করেন এবং তারিখও জেলে থাকার সময়ের দেন।
এরপর গত ৫ অক্টোবর আদালত এক আদেশে সংশ্লিষ্ট ডেপুটি জেলারকে ১১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে উপস্থিত হয়ে এর কারণ ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দেন। সেদিন ডেপুটি জেলার খোন্দকার মো. আল মামুন আইনজীবীর মাধ্যমে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য সময় প্রার্থনা করেন।