নঈম মোরশেদ: দু’সপ্তাহে ধর্ষনের বিচার শেষ হওয়ায় অনেকে এখন রব তুলছেন “Justice Hurried Justice Buried.” আচ্ছা যাঁরা এটা বলছেন তাঁরা বলুনতো বিচার কতটা তাড়াতাড়ি হলে সেটাকে অন্যায্য তাড়াতাড়ি বলা হবে?
যে দেশে ধরে এনে মুরগী জবাই করার মত কিছু স্ট্রিট জাস্টিস জনপ্রিয়, যে দেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকে অনেক কাবিলজন সমর্থন করেন, এটার পক্ষে হাওয়া দেন, আর আম জনতা বুঝে না বুঝে সেটার সমর্থন করেন। সে দেশে পুলিশ আন্তরিকতার সাথে একটি মামলাতে হলেও দ্রুত তদন্ত করে দিল, ডাক্তার সাহেবরা আন্তরিকতার সাথে দ্রুত রিপোর্ট দিল, সকল সাক্ষীকে দ্রুত আদালতে হাজির করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলে কাজ করলো। বিজ্ঞ বিচারক কঠোর পরিশ্রম আর আন্তরিতার সাথে কাজ করে বিচার কাজটি সম্পন্ন করে আসামীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদানসহ দু’সপ্তাহের মাঝে পুরো বিচার কর্ম সম্পন্ন করলেন। সে বিচার কেবল দু’ সপ্তাহের মধ্যে হল বলেই কি “Justice Buried” হয়ে গেল?
আসলে এসবই আমাদের মানসিক সমস্যা ছাড়া আর কিছু নয়। এ মামলায় প্রমাণিত হয়েছে বিচারের সাথে জড়িত সকল পক্ষ সঠিকভাবে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে কাজ করলে যৌক্তিক সময় মধ্যে বিচার নিষ্পত্তি সম্ভব। কিন্তু বিদ্যমান মামলা জটের কারণে সকল মামলা হয়তো এখনও দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব নয়, (যে আদালতে সম্প্রতি একটি মামলা দু’সপ্তাহে নিষ্পত্তি হয়েছে সে আদালতেও বাকী সব মামলা যে অত দ্রুত সম্পন্ন করা যাচ্ছে তা কিন্তু নয়)। তবে বিচারক স্বল্পতা নিরসন করা হলে সে সমস্যাও দূর করা যাবে মনে করি।
এতদসত্ত্বেও কিছু কিছু মামলা যেমন, হত্যা, ধর্ষণ, অস্ত্র, অপহরন, হাতে নাতে ধৃত ছিনতাই ও ডাকাতি, মাদক, খাদ্যে বিষাক্ত মিশ্রন, নদী, খাল ও জলাধার অবৈধ দখল, অবৈধ পাহাড় কর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়, বেপরোয়া গাড়ি চালিযে মানুষ হত্যা বা পঙ্গু করণ, ভবন ও অপরাপর নির্মাণ কর্মে অবহেলা জনিত অপরাধ, অবৈধ জাল টাকা স্ট্যাম্প বা যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বস্তুর জালিয়াতি, দুর্নীতি, মজুতদারী, চোরাকারবারী, মানি লন্ডারিং ইত্যাদি যে সকল ঘটনায় কেবল প্রত্যক্ষ কোন ভিকটিম নয় পরোক্ষ ভিকটিম হিসেবে গোটা সমাজ এবং রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয় সে সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কিছু সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনাগত উদ্যোগ জরুরী মনে করি।
নঈম মোরশেদ: চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, রাঙ্গামাটি।