প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানে ডিজিটাল সিস্টেম চালু করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এখন থেকে অনলাইনেও জমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) দেওয়া যাবে। আর আগামী বছরের জুলাই থেকে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় চলে যাবে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ফলে অনলাইনে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে জমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) প্রদান করা যাবে।
আজ বুধবার (২৮ অক্টোবর) ‘হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনলাইন ভিত্তিক ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার পাইলটিং (১ম পর্যায়) কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা এখন আমরা ম্যানুয়াল ও ডিজিটাল দুইভাবেই চালাব। তবে আগামী জুলাই থেকে ‘নো মোর ম্যানুয়াল সিস্টেম’, পুরোপুরি ডিজিটাল হয়ে যাবে। এর ফলে কিছু কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলেও জানান ভূমিমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, আমরা প্রকল্পগুলো নিয়ে কাজ করছি ধাপে ধাপে। এখন ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটাল করতে অনেক সমস্যা হবে। সব সমাধান করে ১ জুলাই থেকে পুরোপুরি ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় চলে যাব। আমরা সিম্পল ওয়েতে সফটওয়্যারটা রাখতে চেয়েছি। আশা করি সেভাবেই এটি হবে। জুলাই থেকে এটি ভালো একটি শেপে চলে আসবে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল সিস্টেম যত বৃদ্ধি পাবে, সেবা তত সহজ হবে। শুধু ভূমি নয়, অন্য মন্ত্রণালয় বিভাগেও ডিজিটাল ব্যবস্থা জরুরি। এই প্রক্রিয়ায় মাঠ পর্যায়ে অনেকের সমস্যা হতে পারে। সেজন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কিছু বিষয় প্রশিক্ষণ ছাড়া সম্ভব নয়। শিখতে কোনো সমস্যা নেই, তাই আমরা তাদের শেখানোর উদ্যোগ নেব। তবে ২০২১ সালের জুলাইয়ের পর থেকে আর ম্যানুয়াল সিস্টেম থাকবে না।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এক সময় ছিলো একটি স্বপ্ন, রূপকথার গল্পের মতো। আজকে সেটি বাস্তবতা। সারাবিশ্ব তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে। যেসব প্যারামিটার আছে, জিডিপি গ্রোথসহ সবকিছুই ইতিবাচক। উন্নত বিশ্বের প্রবৃদ্ধির হার মাইনাসে চলে গেছে। সেখানে বাংলাদেশের গ্রোথ অনেক বেশি। আমরা কোভিডকে ভয় পাইনি, যে যার জায়গায় কাজ করে গেছি। আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ও কাজ করেছি, আমরা কোনো কাজ বসে নেই। আমরা চাই সেবা দিতে, কাজ করতে।
ভূমি উন্নয়নে ও সেবা কার্যক্রমে দুর্নীতি হচ্ছে সে বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে সমস্যা তো আছেই। এটা সার্ভিস অরিয়েন্টেড মিনিস্ট্রি। সেজন্য পাবলিকের সম্পৃক্ততা বেশি। তবে এসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাচ্ছি। তাহলে অনেক সমস্যাই সমাধান হবে।
মানুষ হয়রানি থেকে বাঁচতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের কাছে অনেক অভিযোগও আসে। এটা সিস্টেমের কারণে। এজন্য আমরা সিস্টেমকে ডেভলপ করতে চাই। আমরা কাজে বিশ্বাসী। মানুষকে ঘরে বসে কীভাবে সেবা দিতে হবে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয় ও ভূমি সংস্কার বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকবৃন্দ সহ মাঠ পর্যায়ে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে ভূমিমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
উল্লেখ্য, ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সফটয়্যার ব্যবহার করে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে প্রাপ্ত দাখিলার বৈধতা দিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় আজ একটি পরিপত্র জারি করে।
পাইলটিং কার্যক্রমের জন্য নির্বাচিত মৌজা সমূহ: ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার সহ মামলা সম্পর্কিত তিনটি সফটওয়্যারের পাইলটিং এর জন্য প্রথম পর্যায়ে ০৮টি জেলার ৯টি উপজেলাধীন ৯টি পৌর/ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অন্তর্গত ১৯টি মৌজা নির্বাচন করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৫টি পৌর ভূমি অফিসের অন্তর্গত ১৩টি মৌজা হচ্ছে- চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও দক্ষিণ মতলব উপজেলার অন্তর্গত মিরপুর, গুদারারচর, নোয়াগাঁও, রুদ্রগাঁও, ভাটিরগাঁও, চরহোগলা, মোবারকদি ও ১৭৬নং ঢাকিরগাঁও মৌজা, মানিকগঞ্জ সদরের বনগ্রাম চক ও গঙ্গাধর পট্টি মৌজা, কিশোরগঞ্জ সদরের করমূলী ও মারিয়া মৌজা এবং জামালপুর সদরের সাতপাকিয়া মৌজা।
৪টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অন্তর্গত ৬টি মৌজা হচ্ছে- গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া উপজেলাধীন পাটগাতি ইউনিয়নের অন্তর্গত টুঙ্গীপাড়া মৌজা, ঢাকার সাভার উপজেলাধীন বাগধনিয়া ইউনিয়নের মজিদপুর ও আনন্দপুর মৌজা, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলাধীন খাসখামা ইউনিয়নের হাইলধর ও মালঘর মৌজা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর ইউনিয়নের ‘দেওভোগ ‘ম’ খন্ড’ মৌজা।