এস. এম. শরিয়ত উল্লাহ্: আজ ১ নভেম্বর, বিচার বিভাগ পৃথককরণের ঐতিহাসিক দিন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৭ সালের এই দিনটি গৌরবময় একটি দিন। এই দিনে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথককরণের কাজ সম্পন্ন করা হয়। যাত্রা শুরু করে বিচারকদের দ্বারা পরিচালিত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি।
বিচার বিভাগ পৃথক করণ দ্বারা মূলত ম্যাজিস্ট্রেসিকে পৃথককরণ বোঝানো হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে সিভিল কোর্ট (জজ কোর্ট) এবং দায়রা আদালত পূর্ব থেকেই পৃথক তথা বিচার বিভাগের অধীন ছিল। মাসদার হোসেন মামলায় মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের রায়ের আলোকে ২০০৭ সালের এই দিনে ম্যাজিস্ট্রেসিকে প্রশাসন থেকে পৃথক করে বিচার বিভাগের হাতে ন্যাস্ত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের অবশিষ্ট অংশটুকুও নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হয়ে বিচার বিভাগের অধীন হয়।
আজ পৃথক করণের ১৩ বছর পরে এসেও অনেক কাজ অসম্পন্ন আছে। সব জেলায় অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি, পর্যাপ্ত সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নেই, প্রয়োজনীয় সকল লজিস্টিক সাপোর্ট নেই। তবে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের প্রচেষ্টায় এবং সরকারের আন্তরিকতায় সেগুলো দ্রুতই সম্পন্ন হবে বলে প্রত্যাশা করি। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিগত এই দিনগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেসি তার কাজের দ্বারা জন মানুষের আস্থা এবং ভরসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
সাংবিধানিক কারণে এবং দায়িত্বশীল জায়গা থেকে ম্যাজিস্ট্রেসি একটি সার্বক্ষণিক (২৪/৭) আদালত। দুর্যোগ, মহামারী কিংবা কোন বিপর্যয়ের কারণে এক মুহূর্তের জন্যও ম্যাজিস্ট্রেসি বন্ধ ছিল না। আগামীতেও থাকবে না। সীমিত সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিশাল মামলার বোঝা মাথায় নিয়েও বিগত ১৩ বছরে শুধু ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসমূহ প্রায় ৯০ লক্ষাধিক মামলা নিষ্পত্তি করেছে যা বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় আনুপাতিক হারে অনেকগুণ বেশি। আগামী দিনগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেসি তথা বিচার বিভাগ ন্যায় বিচার নিশ্চিতে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।
এস. এম. শরিয়ত উল্লাহ্: বিচারক; বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস।