রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম শিপন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়সহ ১০ জনের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
এর আগে, গ্রেফতার ১০ জনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদাবর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক মোল্লা। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ‘আসামিরা সবাই হাসপাতালে বাবুর্চি, ওয়ার্ডবয়, মার্কেটিং অফিসার ও কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত। মামলার এজাহারে বর্ণিত ১১-১৫ নম্বর ক্রমিকে আসামিরা অনুমাদেন ব্যতীত হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার মাধ্যমে চিকিৎসার নামে অবৈধ অর্থ অর্জন করে আসছিল।’
এতে আরও বলা হয়, ‘এই মামলার ভিকটিম আনিসুল করিমকে উন্নত চিকিৎসার আশায় মামলার বাদী গত ৯ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। মানসিক চিকিৎসা দিতে পারেন এমন কোনো ডাক্তার হাসপাতালে কর্তব্যরত ছিলেন না। আসামিরা চিকিৎসা দেয়ার অজুহাতে ভিকটিমকে বলপ্রয়োগ করে হাসপাতালের দোতলায় স্থাপিত একটি অবজারভেশন কক্ষে নিয়ে যায়। আসামিরা ভিকটিমকে মারতে মারতে অবজারভেশন কক্ষে ঢোকায়। তার ঘাড়, পিঠ ও মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করে রুমের মধ্যে উপুড় করে ফেলে দেয়। কয়েকজন ভিকটিম পিঠে চড়ে বসে, কয়েকজন মাথার ওপর আঘাত করে, কয়েকজন দুই হাত পিঠমোড়া করে ওড়না দিয়ে বাঁধে।’
‘আসামিদের এমন অমানসিক নির্যাতনে ভিকটিম আনিসুল করিমের মৃত্যু হয়। এজাহারনামীয় ১১-১৫ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত আসামিরা পলাতক। তাদের বর্তমান অবস্থান নির্ণয়পূর্বক গ্রেফতারের স্বার্থে পুলিশ হেফাজতে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’
এএসপি শিপনকে মারধরের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কিচেন সেফ মো. মাসুদ, ওয়ার্ডবয় জোবায়ের হোসেন, ফার্মাসিস্ট মো. তানভীর হাসান, ওয়ার্ডবয় মো. তানিম মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, মো. লিটন আহাম্মদ ও মো. সাইফুল ইসলাম পলাশ।
সোমবার দুপুর পৌনে ১২টায় মানসিক সমস্যার কারণে হাসপাতালে আসেন এএসপি আনিসুল করিম। অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই মারা যান তিনি। হাসপাতালের অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুমে তাকে মারধরের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
দীর্ঘক্ষণ অচেতন থাকা অবস্থায়ও তাকে ভর্তি কার্যক্রম করা হয়নি। কিছুক্ষণ পর ১২টার দিকে তাকে হাসপাতালের লোকজন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান হাসপাতালে নেয়ার আগেই মৃত্যু (ব্রট ডেথ) হয় শিপনের।
এ ঘটনায় আদাবর থানায় হত্যা একটি মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার আনিসুল করিম শিপনের বাবা বাদী হয়ে ১৫ জনকে আসামি করে এ মামলা করেন। মামলা নম্বর ৯।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হাসপাতালটির সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সকালে আনিসুল করিম শিপন হাসপাতালে ঢোকার পরই ছয়-সাতজন তাকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। এ সময় মাথার দিকে থাকা দুজন হাতের কনুই দিয়ে তাকে আঘাত করছিলেন। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। একটি নীল কাপড়ের টুকরা দিয়ে শিপনের হাত পেছনে বাঁধা হয়। চার মিনিট পর তাকে যখন উপুড় করা হয়, তখনই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়েন শিপন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছে, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় তারা পুলিশ কর্মকর্তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।
আনিসুল করিম শিপন ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। সর্বশেষ তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক সন্তানের জনক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।