সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবীকে জরিমানা ও মামলার শুনানিতে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
আজ মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা প্রধান বিচারপতি বরাবর এ অভিযোগ দেন। এর আগে, গতকাল সোমবার (৯ নভেম্বর) সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সর্ব সম্মতিতে অভিযোগ দাখিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
প্রধান বিচারপতির কাছে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। আইনজীবী ও বিচারকের মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ থাকলেই শুধু আদালত সুষ্ঠুভাবে তার মহান দায়িত্ব পালন করতে পারেন। দেশের আইনজীবীরা আইন ও আদালতের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজেদেরকে আইন পেশায় নিয়োজিত করেছেন। এই অনন্য ভূমিকার জন্য আইনজীবীদেরকে আদালতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলা হয়ে থাকে।
‘আদালত সহনশীলতার সঙ্গে তার ওপর অর্পিত মহান দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অথচ ইদানিং দুই/একটি আদালতে মামলার শুনানি চলাকালে সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীদেরকে বিভিন্নভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারের জন্য যুগ যুগ ধরে গড়ে তোলা বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্কের অবনতি হচ্ছে বলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মনে করে।’
অভিযোগ পত্রে বলা হয়, ৮ নভেম্বর রিট পিটিশন নম্বর ১৩১৪২/২০১৯ এর শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দু’জন সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসানের বিরুদ্ধে ১০০ টাকা করে জরিমানা এবং আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করা হয়েছে।
শুনানিকালে আইনজীবীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। যা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মামলা দায়ের কিংবা পরিচালনার কারণে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য কিংবা আদালত অবমাননার রুল ইস্যুর ক্ষেত্রে আদালতের কাছে সমিতি আরও সহনশীলতা প্রত্যাশা করে।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীরা যেমন আদালতের মর্যাদা রক্ষায় বদ্ধ পরিকর। তেমনি আইনজীবীদের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্বও আদালতের ওপর বর্তায়। এ অবস্থায় দেশের আইনের শাসন বজায় রাখার স্বার্থে বার এবং বেঞ্চের মধ্যে কোনও ভুল বুঝাবুঝির সুযোগ সৃষ্টি না হয় এবং উভয়ের মধ্যে সু-সম্পর্ক বিনষ্ট যাতে না হয়, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আপনাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ৮ নভেম্বর আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ এক বিচারপতির ছেলে ব্যারিস্টার জুম্মন সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গেজেট প্রকাশ বৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানকে একশত টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। এ ধরনের রিট করে আদালতের সময় নষ্ট করতে এ জরিমানা করা হয়।
বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।