মধ্য আমেরিকাতে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র এল সালভাদরের অপরাধী গ্যাং-এর সদস্যরা বন্দি আছে এমন দুটি জেলখানা পরিদর্শনের সুযোগ মিলেছে গণমাধ্যমগুলোর৷ বন্দিদের সঙ্গে সরকার গোপনে আলোচনা করছে এমন খবরের প্রেক্ষিতেই সংবাদমাধ্যমকে সেখানে যেতে দেয়া হয়৷
দেশটির ইসালকো এবং কেসালটেপেক জেলখানার সেলের দৃশ্য দেখে কারাগার, নাকি চিড়িয়াখানা বোঝার উপায় নেই। দেশটির কুখ্যাত দুটি গ্যাংয়ের সদস্যরা সেখানে বন্দি৷
গণমাধ্যমকর্মীরা পরিদর্শনের সময় বন্দিদের কারো শরীরে জামা দেখতে পাননি৷ অধিকাংশই অন্তর্বাস পরিহিত ছিলেন৷করোনার কারণে মাস্ক ছিল তাদের মুখে৷ কিন্তু রাখা হয়েছে গাদাগাদি করে৷
জেলখানা দুটিতে বিবদমান দুই গ্যাংয়ের সদস্যদের রাখা হয়েছে৷ বারিও এইটিন আর এমএস থার্টিন নামে পরিচিত তারা৷ দুই দলের সদস্যদের দুটি জেলখানায় একসঙ্গে রাখা হয়েছে৷
কারাগারে বন্দি ২৬০০ গ্যাং সদস্যের একজন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজনের বা বাইরের কারো সঙ্গে দীর্ঘ সময় দেখার সুযোগ পাননি৷তাদের অসুস্থতাকালীন বা স্বাভাবিক চাহিদাগুলোর কোনোটিই সেখানে পূরণ করা হয় না৷
দেশটির প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে প্রধান দুই গ্যাং এর সদস্যদের বন্দি করে অপরাধে রাশ টানতে সক্ষম হয়েছেন৷ ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতেও যেখানে প্রতি এক লাখ অধিবাসীর মধ্যে ৫২টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে, বছর শেষে তা কমে এসেছে ৩৬-এ৷ হত্যার ঘটনা ৫২ ভাগ কমেছে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর সময়েও৷
সরকারি হিসাবে দেশটিতে অপরাধী গ্যাংয়ের সদস্য প্রায় ৭০ হাজার৷ এর মধ্যে এখন ১৭ হাজার বন্দি রয়েছেন বিভিন্ন কারাগারে৷
অপরাধের মাত্রা হ্রাস ও মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয়লাভের জন্য গত এক বছর ধরে নায়েব বুকেলে শীর্ষ গ্যাংগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করেছেন, এমন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে স্থানীয় গণমাধ্যম এল ফারো৷
সরকারের সঙ্গে সমঝোতা প্রমাণ হিসেবে জেলখানার বিভিন্ন নথিও প্রকাশ করেছে তারা৷ এর আগে সরকার এবং অপারাধী গ্রুপের গোপন যোগাযোগের অভিযোগ তুলেছিল ব্রাসেলসভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’৷
তবে গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তথ্য অস্বীকার করছেন নাইব বুকেলে৷ টুইটে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, বন্দিদের কোন সুবিধা দেয়া হচ্ছে এমন অন্তত একটি উদাহরণ তাকে দেখাতে৷
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জেলখানা পরিচালক ওসিরিস লুনাকে সমঝোতায় জড়িত বলা হয়েছে৷ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনিও৷
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর চাপে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট৷ তদন্ত শুরু হয়েছে তার নিজ দল থেকেও৷ এ পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম সদস্যদের জন্য দুটি জেলখানা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়৷ বন্দিদের প্রতি সরকার কতটা কঠোর তা দেখানোই ছিল এর উদ্দেশ্য৷সূত্র- ডয়েচে ভেলে