মুসলিম ফরায়েজে সম্পত্তি বণ্টন প্রক্রিয়া, ফরায়েজ যোগ্য সম্পত্তির পরিমাণ, মৃতব্যক্তির সম্পত্তি কার কত অংশ প্রাপ্য, ওয়ারিশের শ্রেণীবিভাগ, আউল ও রাদ নীতি, বিবিধ ফরায়েজ ইত্যাদি বিষয়ে সহজ ভাষায় বিস্তারিত বর্ননা করেছেন অ্যাডভোকেট সাব্বির এ মুকিম। তিন পর্বের এ লেখার প্রথম পর্ব ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
মুসলিম আইনের চর্চাকারীদের অনেকের কাছে ফরায়েজ একটি জনপ্রিয় আলোচনা; ভীতিবহুল ও বলা যায়। সে প্রেক্ষাপটে স্যার দিনেশ ফারদ্যনজি মোল্লা রচিত “প্রিন্সিপিলস্ অব মুসলিম ল” পুস্তকের ২০ তম লেক্সিস-নেক্সিস বাটারওয়ার্থস ইন্ডিয়া ব্রান্ডের ২০তম সংস্করণ এর “হানাফি ল’ অব ইনহেরিটেন্স” অধ্যায়টি পড়ে আইনের বাংলাভাষী পাঠক হিসেবে কি অনুভব করলাম তার বিবরণ তুলে ধরছি। কোনো বিষয়ে মোল্লার বইয়ের অস্পষ্টতা স্পষ্ট করতে মোল্লার বইয়ের বাতিঘর ১৭৯২ সালে স্যার উইলিয়াম জোন্স এর অনুবাদ আল সিরাজিয়াহ অর দি মোহামেডান ল’ অব ইনহেরিটেন্স বইয়ের আলো সরাসরি গ্রহণ করা হয়েছে।
এই বিবরণ কোনো ভাবেই একাডেমিক বিবরণ নয়, কোনো ভাবেই মুসলিম ফরায়েজের উপর অল ইনক্লুসিভ এক্সজস্টিভ আলাপ নয়। আইন শিক্ষার মন্দিরে কখনোই না ঢুকেও প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় এই আইনগত জটিলতা যেনো সরল করা যায় সেটাই উদ্দেশ্য করে বিবরণটি লেখা। ফলে একাডেমিক নিগুঢ় তথ্যসমূহ অনেকাংশেই সরলীকরণের কোটায় বাদ পড়েছে আর কিছু মুখোরোচক আলাপ প্রয়োগিকতা না থাকা সত্ত্বেও ঢুকে গেছে। একাডেমিক আলোচনার জন্য একাডেমিশিয়ানরা আছেন, গভীর নিখাদ তত্ত্ব তালাশ তাঁদেরই এক্সক্লুসিভ জুরিসডিকশন।
গণিত জানলে ফরায়েজে হয়
ফরায়েজ আইন পাঠে গণিতের পূর্বধারণা অনিবার্য। বিশেষ করে গণিতের ভাগ করণ সম্পর্কে সুস্পষ্টতা অত্যাবশ্যক। সবার আগে সাধারণ ভাগ কীভাবে করে তা জানতে হবে। এরপর জানতে হবে গাণিতিক ভাগ এর কমছে কম ৫টি পরিভাষা, তথা: ভাগশেষ বা অবশিষ্ট, হর, লব এবং সাধারণ হর ও লসাগু। এই বিষয়গুলোতে স্বচ্ছ, সুস্পষ্ট, শুদ্ধ ও সম্পূর্ণ ধারণা থাকা ফরায়েজ বিদ্যার পূর্বশর্ত। এই পূর্বশর্ত পূরণ না করলে ফরায়েজ আত্মস্থ করা অসম্ভব।
ফরায়েজের হর ও ফরায়েজের লব
লব হলো যাকে ভাগ করা হয়। আর হর হলো যে কয়টি ভাগে ভাগ করতে হবে। ধরা যাক আমাদের খাবার টেবিলে ১ ডেকচি ভাত আছে আর খেতে বসেছে ৬জন। ডেকচিতে ১২ কাপ ভাত আছে। ডেকচির ভাত হলো লব। আর খেতে বসা ৬জন হলো হর।
ফারায়েজে লব হলো যে সম্পত্তি ভাগ করতে হবে আর হর হলো যে কয়জনের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দিতে হবে। তবে টেবিলের খাবার ভাগের চেয়ে সম্পত্তির ফরায়েজ ভাগ একটু ভিন্নতর। সেজন্য আমরা আবার খাবার টেবিলে ফিরে যাবো। আমাদের খাবার টেবিলের উদাহরণ আমরা যেভাবে লিখেছি, তা দেখে মনে হচ্ছে পরিবারের সবাই সমান সমান মানে ২ কাপ করে ভাত খায়। আসলে কিন্তু তা নয়। পরিবারের ছোট্ট শিশুটি হয়তো ভাত খায়-ই না। বৃদ্ধ দাদা-দাদী ২জনে মিলে বহু কষ্টে ৩ কাপ ভাত শেষ করেন। পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী বাবার পুরোপুরি ২ কাপ-ই লাগে। পরিবারের জোয়ান সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ভাইটির ৩ কাপ না হলে চলেই না। আবার স্কুলে পড়ুয়া বোনটিকে ১কাপ, এরপর মা জোর করে আরও আধা কাপ ভাত খায়িয়ে দেন। শেষ যেটুকু থাকে, তা ২ কাপও হতে পারে , ৩ কাপও হতে পারে, ৫ কাপও হতে পারে; এটুকু পরিবারের মা আর কাজের সহকারী সবার শেষে ভাগ করে খান। একইভাবে সম্পত্তির ফরায়েজে সবার অংশ সমান নয়, ভিন্ন, ভিন্ন। সব মিলিয়ে যতো অংশ, ফরায়েজের হর হলো সবগুলোর অংশ এর মোট যোগফল।
ধরা যাক মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির পরিমাণ ৩০ শতক। মৃত ব্যক্তি ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে মারা গেছেন। মুসলিম আইন অনুসারে ভাই বোনের ২ গুণ পাবেন। অর্থাৎ বোন ১ অংশ পেলে, ভাই পাবেন ২ অংশ। এই উদাহরণের ফরায়েজের হর হলো ৩; যেহেতু ১ অংশ আর ২ অংশের যোগফল ৩ অংশ আর লব হলো ৩০ শতক।
ফরায়েজে তালগোল, গোলমালের ফরায়েজ
মুসলিম ফরায়েজ করতে গিয়ে খাবার টেবিলের সম্পর্কগুলো টানা যাবে না। যেমন: আমাদেরকে মৃত ব্যক্তির ছেলে, বাবা, স্ত্রী, ভাই বোনদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করতে বলা হলো। খাবার টেবিলে আমরা এই সম্পর্কগুলোকে কখনো ছেলে, কখনো নাতি, কখনো মা, কখনো ভাবি, কখনো স্ত্রী, কখনো দাদা, কখনো চাচা গয়রহ বিভিন্ন শব্দে সম্বোধন করি। এই সম্বোধনের পারস্পরিকতাটুকু ফরায়েজের ক্ষেত্রে অবশ্যই পরিহার করতে হবে। যখনই আমরা ফরায়েজ করবো, আমাদেরকে অবশ্যই খাবার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে ফরায়েজর টেবিলে বসতে হবে। ফরায়েজের টেবিলে সবগুলো সম্পর্ক মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে চক্কর খাবে। এখানে সকল সম্পর্ক সম্বোধনের নির্ণায়ক হবেন মৃত ব্যক্তি। তাই মৃত ব্যক্তি পিতা মানে পিতা, তাঁকে আর দাদা বলা যাবে না। ফরায়েজের টেবিলে যখনই আমরা দাদা সম্বোধন করবো, বুঝতে হবে সে দাদা মৃত ব্যক্তির দাদা কখনোই মৃত ব্যক্তির ছেলের দাদা নয়। ফরায়েজের টেবিলে মা মানে মৃত ব্যক্তির মা, দাদী মানে মৃত ব্যক্তির দাদী, ভাই মানে মৃত ব্যক্তির ভাই, চাচা মানে মৃত ব্যক্তির চাচা গয়রহ গয়রহ, এই ভাবে সম্বোধন ও সম্পর্ক চিহ্নিতকরণ করতে হবে।
ফরায়েজ করতে গিয়ে তালগোলটা সবচে পাকে যখন মৃত ব্যক্তির স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করেন। আরেকজনের বৌ কেনো সম্পদ নিয়ে যাবে? এ প্রশ্নর সাপ্টা উত্তর হলো, মৃতব্যক্তির বৌ যখন সম্পত্তিপ্রাপ্ত হয় তখন সে আরেকজনের বৌ ছিলেন না, তখন সে মৃত ব্যক্তির বৌ-ই ছিলেন। তাই আরেকজনের বৌ সম্পত্তি নিচ্ছে না বরং তিনি নিজের সম্পত্তিই নিজে নিচ্ছেন। মৃত ব্যক্তির শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় যারা ছিলো, তাদের সাথে ঠিক সেই ক্ষণে মৃতব্যক্তির কী সম্পর্ক ছিলো সেটাই বিবেচ্য বিষয় আর কিছু নয়।
তাই ধরা যাক, ১ ব্যক্তি ১০০ টাকা আর সন্তান ও স্ত্রী রেখে মারা গেলো। অংশ মতে স্ত্রী ১২.৫০ টাকা পেয়ে গেছে। এরপর সে নারী আবার বিয়ে করলো। এই ২য় স্বামীও ১০০ টাকা, সন্তান ও স্ত্রী রেখে মারা যায়। এবার সে নারী আরও ১২.৫০ টাকা পেলো। ২ স্বামীর কাছ থেকে মোট (১২.৫০+১২.৫০)= ২৫ টাকা পেয়ে সে নারী আবার বিয়ে করে ১ম ও ২য় সংসারে সন্তান রেখে এবং ৩য় সংসারে কোনো সন্তান না রেখে মারা গেলো। যদিও সে নারীর ৩য় সংসার সন্তান বিহীন, কিন্তু যেহেতু তার ১ম ও ২য় সংসারে সন্তান আছে তাই তার জীবিত ৩য় স্বামী সন্তানহীন- অবস্থার ২ ভাগের ১ নয় বরং সন্তানসহ অবস্থার ৪ ভাগের ১ অংশ তথা ১২.৫০ টাকা পেয়ে যাবে।
কিছু দিন আগে আমরা দেখেছি মুরগী মিলন নামের এক শীর্ষ সন্ত্রাসী হত্যা হবার পর মুরগী মিলনের সম্পত্তির ১টা অংশ ভোগ করছে মুরগী মিলনের স্ত্রীর ২য় স্বামী। মুরগী মিলন হতে তার ‘পুরুষ সতীন’ তাদের কমন স্ত্রীর মাধ্যমে মুরগী মিলনের সম্পদ পায়। মুরগী মিলনের মৃত্যুতে তার স্ত্রী সম্পত্তি পায়। সে স্ত্রী ২য় বিয়ে করে। সে স্ত্রী’র মৃত্যুতে ২য় স্বামী স্ত্রীর ওয়ারিশসূত্রে মুরগী মিলনের সম্পদ হস্তগত করে।
ফরায়েজে ভাগশেষ
মুসলিম আইনে ফরায়েজ গণিতের গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক ধারণা হলো ভাগশেষ এর ধারণা। খাবার টেবিলে ভাগ শেষ হলো ওটুকুই, যা মা ও কাজের সহকারী যে টুকু খেতে পন, সেটাই অবশেষ। তাঁদের কোনো নির্দিষ্ট অংশ নেই। খাবার টেবিলে মা (ফরায়েজে টেবিলে যিনি আসলে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী) এবং সহকারীর বেশীর ভাগ সময়েই অল্পতে তুষ্ট হতে হয়। কিন্তু ফরায়েজের টেবিলে সম্পত্তির সিংহভাগ- সেই ভাগশেষ যাদের পাওনা, তাদের পেতে দেখা যায়। সোজা ভাষায় ছেলেরা ভাগশেষ ভোগী হলেও ফরায়েজ শেষে ছেলেদেরকেই সবচে বেশী সম্পত্তি ভাগে পেতে দেখা যায়।
ফরায়েজে সাধারণ হর
“সাধারণ” শব্দটা বাংলায় ২অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই ২ অর্থের ইংরেজী প্রকাশ হলো কমন (Common) এবং অর্ডিনারি (Ordinary)। গণিতে আমরা সাধারণের কমন অর্থ নেবো। গাণিতিক আলোচনায় শেষ আলোচ্য হলো সাধারণ হর। মুসলিম ফরায়েজে গণিতের বিধান হলো হর এবং লব সমান সমান হতে হবে, যাতে ভাগফল সবসময় ১ হয়। ভাগফল ১ করার জন্যই মুসলিম ফরায়েজে উপযুক্ত ক্ষেত্রে আউল-রাদ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
সাধারণ হর হলো আসলে সব গুলো হরের লসাগু। সবচে ছোটো সংখ্যাকে প্রত্যেকটি প্রাপ্য অংশ দিয়ে ভাগ করলে যখন কোনো ভাগশেষ অবশিষ্ট থাকে না, সেই সবচে ছোটো সংখ্যাকে অংশগুলোর লসাগু বলে।
ধরা যাক ১ ওয়ারিশ পাবে ৬ অংশ আর অন্য ওয়ারিশ পাবে ৪ অংশ। আমরা যদি ১২ কে ৬ ও ৪ দিয়ে ভাগ করি তাহলে কোনো অবশিষ্ট থাকে না। আবার ২৪ কে ৪ ও ৬ দিয়ে ভাগ করি তাহলেও কোনো অবশিষ্ট থাকে না। কিন্তু ২০ কে ৪ দিয়ে ভাগ করলে কোনো অবশিষ্ট না থাকলেও ৬ দিয়ে ভাগ করলে ২ অবশিষ্ট থাকে এবং ১৮ কে ৬ দিয়ে ভাগ করলে কোনো অবশিষ্ট না থাকলেও ৪ দিয়ে ভাগ করলে ২ অবশিষ্ট থাকে। যেহেতু অবশিষ্ট থাকে তাই সংজ্ঞানুসারে ১৮ বা ২০ এর ক্ষেত্রে ৬ ও ৪ এর লসাগু হবার যোগ্যতা নেই। ওদিকে ২৪ এর সে যোগ্যতা নেই কারণ তারচেও ছোটো সংখ্য ১২ রয়েছে। আবার ১২ এরচে ছোটো কোনো সংখ্যকে ৪ ও ৬ উভয় দিয়ে ভাগ করা যায়না, যে ভাগ করলে কোনো অবশিষ্ট রইবেনা।তাই ৪ ও ৬ এর লসাগু হলো ১২। ফরায়েজ করার সময় সর্বদা সবগুলো অংশকে সাধারণ হরে পরিণত করে দেখতে হয়।
ফরায়েজ যোগ্য সম্পত্তি কতটুকু?
গাণিতিক আলোচনার শেষে এখন আমরা প্রায়োগিক আলোচনায় প্রবেশ করবো। ফরায়েজ করতে বসলে সবার আগে যা করতে হয় তা হলো মৃত ব্যক্তির ফরায়েজ যোগ্য সম্পত্তি নির্ণয়। মৃত ব্যক্তি ফরায়েজ যোগ্য সম্পত্তি নির্ণয় করতে গিয়ে যা দেখতে হয় তা হল-
(১) মৃত ব্যক্তির শেষ চিকিৎসা এবং জানাযা, কাফন, দাফন ইত্যাদি অর্থাৎ সৎকার সংক্রান্ত খরচ।
(২) মৃত ব্যক্তির দেনা পরিশোধ সংক্রান্ত খরচ।
(৩) মৃত ব্যক্তি ওসিয়ত করে গিয়ে থাকলে ওসিয়ত পরিশোধ ও কার্যকর সংক্রান্ত খরচ।
মৃত ব্যাক্তির মোট সম্পত্তি হতে উপরের ৩ ধরণের খরচকে বাদ দিল যা বাকী রয়, তাই হবে মৃত ব্যাক্তির ফরায়েজ যোগ্য সম্পত্তি। ধরা যাক, মৃত ব্যক্তির ১০০ টাকা রেখে গেছেন।
(১) তাঁর কাফন, দাফনে ২০ টাকা খরচ হয়েছে।
(২) তাঁর ঋণ আছে ৫ টাকা।
(৩) তিনি ওসিয়ত করে গেছেন ৩৫টাকা।
এখানে মৃত ব্যক্তির ফরায়েজ যোগ্য সম্পত্তির পরিমাণ নির্ণয় করার আগে আরেকটা ছোটো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তাঁর ওসিয়তের ব্যাপারে তাঁর ওয়ারিশদের সম্মতি। মৃত ব্যাক্তির মোট সম্পত্তির ৩ ভাগের ১ভাগ হলো ৩৩ টাকা।
মুসলিম আইনের বিধান অনুযায়ী মোট সম্পত্তির ৩ ভাগের ১ ভাগ পর্যন্ত ওসিয়ত করলে ওয়ারিশদের সম্মতি লাগে না। যদি ৩ ভাগের ১ ভাগের বেশী ওসিয়ত করা হয়, তবে বাড়তি অংশের ব্যাপারে ওয়ারিশদের সম্মতি লাগবে। সম্মতি না দিলে বাড়তি অংশের উপর ওসিয়ত কার্যকর হবে না।
আলোচ্য উদাহরণে ওয়ারিশরাগণ সম্মতি দিলে কেবল ৩৫ টাকা ওসিয়ত কার্যকর হবে আর সম্মতি না দিলে ৩৩ টাকা ওসিয়ত কার্যকর হবে।
সতরাং ১০০ টাকার মধ্যে মৃতব্যক্তির ফরায়েজ যোগ্য সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪০ টাকা। যদি ওসিয়তে ওয়ারিশগণ সম্মতি দেয় নচেৎ ৪২ টাকা যখন ওসিয়তে ওয়ারিশগণ সম্মতি দিতে অস্বীকার করে।
বর্তমান প্রেক্ষিতগুলো বিবেচনায় এই আলোচনাটুকু একেবারেই একাডেমিক।
আসলেই কী মায়ের সম্পত্তি কেবল মেয়েরা এবং বাবার সম্পত্তি কেবল ছেলেরা পাবে?
এই ধারণা একেবারেই অসত্য ধারণা, ভুল ধারণা। সত্য ধারণা হলো মায়ের সম্পত্তিও সকল মেয়ে এবং সকল ছেলেরা পাবে আবার বাবার সম্পত্তিও সকল মেয়েরা এবং সকল ছেলেরা পাবে। আরেকটি ভুল ধারণা হলো বড়ো ছেলে বেশী পাবে অন্য সন্তানদের থেকে। মুসলিম ফরায়েজে এ ধরণের কোনো “বড়ছেলে” নাটক করা হয় নাই। বড় ছেলে আর বাকী সন্তানদের প্রাপ্যতা হিসাব মোতাবেকই পাবে- তার বিশেষ কোনো অংশ নাই।
ওয়ারিশদের শ্রেণীভাগ
আমরা মৃত ব্যক্তির ফরায়েজ যোগ্য সম্পত্তি বের করলাম। এখন আমরা সে সম্পত্তি প্রাপকদের মধ্যে প্রাপ্য অংশ মোতাবেক বেটে দেবো। এই প্রাপকদেরকে মুসলিম আইনে মূলত শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। তবে এই ৩ শ্রেণীর প্রত্যেকটির মধ্যেই গোপন শ্রেণী রয়ে যায়, আগে সে গোপন শ্রেণী বিতরণ শেষেই এই প্রকাশ্য ৩ শ্রেণী কার্যকর হয়।
বাদ দেয়া শ্রেণী
এই গোপন শ্রেণীর নাম, বাদ দেয়া শ্রেণী। প্রত্যেক শ্রেণীতেই নিকট সম্পর্ক আপেক্ষিকভাবে দূঃসম্পর্ক কে বাদ দেয়। যেমন মৃত ব্যক্তির বাবাও জীবিত রয়েছে, ভাইও জীবিত রয়েছে। কিন্তু বাবা থাকার কারণে ভাই পাবে না। কিংবা ধরা যাক মাও জীবিত আবার বোনও জীবিত। মা এর কারণে বোন বাদ যাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে ফরায়েজের টেবিলে বোন মানে মৃত ব্যক্তির বোন, মৃত ব্যক্তি ছেলের বোন নয়। ফরায়েজের টেবিলে মৃত ব্যক্তির ছেলের বোন, মৃত ব্যক্তির আপন কণ্যা বা সৎকণ্যা। বাদ পড়ার ১টি তালিকা নীচে দেয়া গেলো। তবে এ তালিকা শেষ তালিকা নয়। বাদ পড়ার সূত্রে যে পড়বে সে-ই বাদ পড়বে।
১ নং ছক (বাদ দেয়ার আংশিক ছক) |
||
ক্রমিক |
সম্পর্ক |
যাদের কে বাদ দেন |
১ |
বাবা |
দাদা, দাদী, আপন সহোদর ভাই, আপন সহোদর বোন, বৈপিত্রিয় ভাই, বৈপিত্রিয় বোন, বৈমাত্রেয় ভাই, বৈমাত্রেয় বোন, চাচা, চাচাত ভাই |
২ |
দাদা |
দাদী ও নানি, আপন সহোদর ভাই, আপন সহোদর বোন, বৈপিত্রিয় ভাই, বৈপিত্রিয় বোন, বৈমাত্রেয় ভাই, বৈমাত্রেয় বোন, চাচা, চাচাত ভাই |
৫ |
মা |
দাদী ও নানি |
৭ |
মেয়ে |
ছেলের মেয়ে, আপন সহোদর বোন, বৈপিত্রিয় ভাই, বৈপিত্রিয় বোন, বৈমাত্রেয় ভাই, বৈমাত্রেয় বোন |
১১ |
আপন সহোদর বোন |
বৈমাত্রেয় বোন, ভাইয়ের ছেলে, চাচা, চাচাত ভাই |
A |
আপন সহোদর ভাই |
বৈমাত্রেয় ভাই, বৈমাত্রেয় বোন, চাচা, চাচাত ভাই |
B |
ছেলে |
ছেলের মেয়ে, আপন সহোদর ভাই, আপন সহোদর বোন, বৈপিত্রিয় ভাই, বৈপিত্রিয় বোন, বৈমাত্রেয় ভাই, বৈমাত্রেয় বোন, ভাইয়ের ছেলে, চাচা, চাচাত ভাই |
আবশ্যকীয় শ্রেণী
বাদ দেয়া শ্রেণীর সাথেই আসে আবশ্যকীয় শ্রেণী। অস্তিত্ব থাকলে এদের কখোনই বাদ দেয়া যাবে না। মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে এরা মৃতব্যক্তির সম্পত্তি পেয়ে যায়। এরা হলো:- (১) মৃত ব্যক্তির পিতা, (২) মৃত ব্যক্তির স্বামী, (৩) মৃত ব্যক্তির স্ত্রী, (৪) মৃত ব্যক্তির মা, (৫) মৃত ব্যক্তির মেয়ে, (৪) মৃত ব্যক্তির ছেলে।
এই আবশ্যকীয় শ্রেণীর ছেলে ও মেয়ের জন্য কোরআন প্রদত্ত আইন বদল করে জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৬১ সালে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ৪নং ধারায় মানুষের তৈরী আইন চালু করেন। কোরআনের আইন মতে মৃত ব্যক্তি তার পিতা বা মাতার ওয়ারিশ হতে পারে না, সোজা ভাষায় বাবা বা মার আগে মারা গেলে বাবা বা মার সম্পত্তি পাওয়া যায় না। কিন্তু আলোচ্য ৪নং ধারা মতে যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান বর্তমান থাকে তবে সে তার সন্তানগণের মাধ্যমে সেই ভাগ তার বাবা বা মা এর সম্পত্তিতে পাবে, যেই ভাগ সে বেঁচে থাকলে সে স্বাভাবিকভাবেই প্রাপ্ত হতো। নারী এবং পুরুষ উভয়য়ের ক্ষেত্রেই এ আইন প্রযোজ্য। এই বিধানকে ফরায়েজের প্রতিনিধিত্ব বিধান বলে। এই বিধান মতে কেবল এবং কেবল মাত্র সন্তানই সুবিধা প্রাপ্ত হবে। আর কেউ এই বিধানের সুবিধা পাবে না।
প্রকাশ্য শ্রেণী
১ম শেণী হলো ভাগীদার শ্রেণী, যাদেরকে নির্দিষ্ট ভাগ দিতেই হবে। বইয়ের ভাষায় এ শ্রেণীকে বলা হয় অংশীদার; কোরআনিক অংশীদারও বলা হয়। ২য় শ্রেণী হলো ভাগশেষ বা অবশিষ্টভোগী শ্রেণী। এই ২শ্রেণীর অনুপস্থিতিতে ৩য় শ্রেণী তথা দূর সম্পর্কের আত্মীয় শ্রেণী ভাগ পায়।
১ম শ্রেণী বা ভাগিদার শ্রেণী
ভাগীদার শ্রেণীতে আবার ১২টি সম্পর্কে ভাগ রয়েছে। এরা হলো: (১) বাবা, (২) দাদা, (৩) স্বামী, (৪) স্ত্রী, (৫) মা, (৬) দাদী ও নানী, (৭) মেয়ে, (৮) ছেলের মেয়ে (নাতনী), (৯) পূর্ণবোন (আপন সহোদর বোন), (১০) বৈমাতৃয় ভাই (১১) বৈমাত্রেয় বোন (১২) বৈপিত্রিয় বোন।
সম্পর্ক সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন অভ্যাস করতে এই তালিকা আবার লিখি, (১) মৃত ব্যক্তির বাবা, (২) মৃত ব্যক্তির দাদা, (৩) মৃত ব্যক্তির স্বামী, (৪) মৃত ব্যক্তির স্ত্রী, (৫) মৃত ব্যক্তির মা, (৬) মৃত ব্যক্তির দাদী ও নানী, (৭) মৃত ব্যক্তির মেয়ে, (৮) মৃত ব্যক্তির ছেলের মেয়ে (নাতনী), (৯) মৃত ব্যক্তির পূর্ণবোন (আপন সহোদর বোন), (১০) মৃত ব্যক্তির বৈমাতৃয় ভাই, (১১) মৃত ব্যক্তির বৈমাত্রেয় বোন, (১২) মৃত ব্যক্তির বৈপিত্রিয় বোন।
এই তালিকার উপর বাদ দেয়া নীতি প্রয়োগ হয়, অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত কাছের জন দূরের জনকে বাদ দেয়।
বাদ দেয়া নীতির আলোকে আবার ভাগীদার শ্রেণীকে ২ স্তরে ভাগ করা যায়। যাদেরকে কোনো ভাবেই বাদ দেয়া যাবে না এবং যাদেরকে শর্তাধীনে বাদ দেয়া হয়। সে শর্ত হলো বাদ দেয়া শর্ত। ভাগীদার শ্রেণীতে যাদেরকে কখনোই বাদ দেয়া যায় না তারা হলো: (১) মৃত ব্যক্তির বাবা, (২) মৃত ব্যক্তির স্বামী, (৩) মৃত ব্যক্তির স্ত্রী, (৪) মৃত ব্যক্তির মা, (৫) মৃত ব্যক্তির মেয়ে।
এই বাদ দেয়া যাবে না শ্রেণীর উপস্থিতির কারণে ভাগীদার তালিকার বাকীরা পরিস্থিতি মোতাবেক বাদ পড়ে। যেমন: মৃত ব্যাক্তির একাধিক মেয়ে থাকলে ছেলের মেয়ে ভাগীদার শ্রেণীর হলেও ভাগ পাবেন না। ১৯৬১ সালের সংশোধণী মোতাবেক মৃত ব্যাক্তির ছেলের মেয়ে কে অংশ পেতে দেখা গেলেও সেটা নিজের অংশ পায় না বরং ছেলের অংশ ছেলে মারা যাওয়ায় ছেলের প্রতিনিধি হিশেবে পায়।
ভাগশেষভোগী শ্রেণী
ভাগীদার অংশের পর আসে ভাগশেষ ভোগী বা অবশিষ্টভোগী শ্রেণী। ভাগীদার শ্রেণীকে প্রাপ্য অংশ মোতাবেক ভাগ দেয়ার পর যে সম্পত্তি বাকী থাকে, সেই বাকী থাকা সম্পত্তি ভাগশেষ ভোগীদের মধ্যে বেটে দেয়া হয়। ভাগীদার এর মতো ভাগশেষভোগীদেরকেও আবার ৪ স্তরের ১৯টি সম্পর্কে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
১ম স্তর- এরা মৃত ব্যক্তির সরাসরি উত্তরসূরি: (১) ছেলে, (২) ছেলের ছেলে,
২য় স্তর- এরা মৃত ব্যক্তির সরাসরি পূর্বসূরি : (৩) বাবা, (৪) দাদা,
৩য় স্তর- এরা মৃত ব্যক্তির বাবার সরাসরি উত্তরসূরি (৫) আপন সহোদর ভাই, (৬) আপন সহোদর বোন, (৭) বৈপিত্রিয় ভাই (বাবা ১, মা ভিন্ন এমন সৎ ভাই), (৮) বৈপিত্রিয় বোন (বাবা ১, মা ভিন্ন এমন সৎ বোন), (৯) আপন সহোদর ভাইয়ের ছেলে, (১০) বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলে, (১১) আপন সহোদর ভাইয়ের ছেলের ছেলে (১২) বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলের ছেলে,
৪র্থ স্তর- এরা মৃত ব্যক্তির দাদার উত্তরসূরি: (১৩) আপন চাচা, (১৪) বৈমাত্রেয় চাচা, (১৫) আপন চাচতো ভাই, (১৬) বৈমাত্রেয় চাচাতো ভাই, (১৭) আপন চাচতো ভাইয়ের ছেলে, (১৮) বৈমাত্রেয় চাচাতো ভাইয়ের ছেলে, (১৯) দূর সম্পর্কের পিতামহের বংশধর।
মৃত ব্যক্তি তো নিজেই মৃত ব্যক্তির বাবার এবং দাদার উত্তরসূরি, তাহলে আলাদা করে মৃত ব্যক্তির বাবার এবং দাদার উত্তরসূরিদের নিয়ে শ্রেণী কেনো করা হলো? করা হলো কারণ, ধরা যাক মৃত ব্যক্তির ভাইয়ের ছেলের কথা। মৃত ব্যক্তির ভাইয়ের ছেলে মৃত ব্যক্তির সরাসরি উত্তরসূরি নয় বরং মৃত ব্যক্তির বাবার সরাসরি উত্তরসূরি। আবার ধরা যাক মৃত ব্যক্তির চাচাতো ভাই এর কথা। মৃত ব্যক্তির চাচাতো ভাই মৃত ব্যক্তির বা মৃত ব্যক্তির বাবার ও সরাসরি উত্তরসূরি নয় কিন্তু মৃত ব্যক্তির দাদার সরাসরি উত্তরসূরি।
ভাগশেষভোগী শ্রেণীতে বাদ দেয়া সূত্রের প্রতিক্রিয়া
ভাগশেষভোগী শ্রেণীতে প্রত্যেক স্তর তার পরের স্তরকে বাদ দেয়। আবার প্রত্যেক স্তরে পূর্বের জন পরের জনকে বাদ দেয়। মানে ছেলে থাকলে আর কেউ পাবে না। আবার ছেলে নাই কিন্তু ছেলের ছেলে আছে তাই এই তালিকার বাবা অবশিষ্টভোগী হিসেবে কিছু পাবে না।
সহজ কথায়, ১ম স্তর থাকলে ২য় স্তর, ৩য় স্তর বা ৪র্থ স্তর ভাগশেষভোগী হবে না। ২য় স্তর থাকলে ৩য় স্তর বা ৪র্থ স্তর ভাগশেষভোগী হবে না। ৩য় স্তর থাকলে ৪র্থ স্তর ভাগশেষভোগী হবে না।
উদাহরণস্বরূপ- ছেলে (১ম স্তর) থাকলে বাবা (২য় স্তর) ভাগশেষভোগী হবে না। বাবা (২য় স্তর) থাকলে আপন সহোদর ভাই (৩য় স্তর) ভাগশেষ ভোগী হবে না। আপন বোন (৩য় স্তর) থাকলে চাচা (৪র্থ স্তর) ভাগশেষভোগী হবে না। গয়রহ, গয়রহ।
আবার আগের জন পরের জনকে বাদ দেয়। যেমন ১ম স্তর এ ছেলে এবং ছেলের ছেলে থাকলেও ছেলে জীবিত থাকলে ছেলের ছেলে ভাগশেষভোগী হবে না। ৩য় স্তরে আপন বোন থাকলে আপন সহোদর ভাইয়ের ছেলে ভাগশেষভোগী হবে না। গয়রহ, গয়রহ।
ভাগশেষভোগীদের জোড় সম্পর্ক
ভাগশেষভোগীদের মধ্যে নাম নেই কিন্তু জোড় আছে তাই না থেকেও ৪টি সম্পর্ক ভাগশেষভোগী হিসেবে সম্পত্তির অংশ পেয়ে যায়। ভাগশেষ ভোগী তালিকার ছেলের জোড় হলো মেয়ে, ছেলের ছেলের জোড় হলো ছেলের মেয়ে। আপন সহোদর ভাইয়ের জোড় হলো আপন সহোদর বোন, বৈপিত্রিয় ভাইয়ের জোড় হলো বৈপিত্রিয় বোন।
রসমালাই বলতে যেমন কুমিল্লার রসমালাই, চমচম বলতে টাংগাইলের চমচম, মন্ডা বলতে মুক্তাগাছার মন্ডা, দই বলতে বগুড়ার দই বুঝি তেমনি ভাই বলতে ভাই ও বোন, আপন সহোদর ভাই মানেই আপন সহোদর ভাই ও আপন সহোদর বোন, ছেলের ছেলে বলতে ছেলের ছেলে ও ছেলের মেয়ে এবং বৈপিত্রিয় ভাই বলতেই বৈপিত্রিয় ভাই ও বৈপিত্রিয় বোন বুঝবো। আবার কুমিল্লার রসমালাই না থাকার মানে এই নয় যে রসমালাই কেনা যাবে না, তেমনি বোন না থাকলে ভাই পাবে না, কীংবা ভাই না থাকলে বোন পাবে না এমনটা বোঝাও ভুল বোঝা হবে। মোদ্দাকথা,
(১) ছেলে ও মেয়ে থাকলে ছেলে ও মেয়ে উভয়ে ভাগশেষভোগী হবে। মেয়ে না থাকলেও ছেলে ভাগশেষ ভোগী হবে। তবে ছেলে না থেকে শুধু মেয়ে থাকলে, মেয়ে ভাগীদার হবে, ভাগশেষভোগী হবে না।
(২) যদি ওয়ারিশ হয় তবে ছেলের ছেলে ও ছেলের মেয়ে থাকলে ছেলের ছেলে ও ছেলের মেয়ে উভয়ে ভাগশেষভোগী হবে। ছেলের মেয়ে না থাকলেও যদি ওয়ারিশ হয় তবে ছেলের ছেলে ভাগশেষ ভোগী হবে। যদি ওয়ারিশ হয় তবে তবে ছেলের ছেলে না থেকে শুধু ছেলের মেয়ে থাকলে, ছেলের মেয়ে ভাগীদার হবে, ভাগশেষভোগী হবে না।
(৩) যদি ওয়ারিশ হয় তবে আপন সহোদর ভাই ও আপন সহোদর বোন থাকলে আপন সহোদর ভাই ও আপন সহোদর বোন উভয়ে ভাগশেষভোগী হবে। আপন সহোদর বোন না থাকলেও যদি ওয়ারিশ হয় তবে আপন সহোদর ভাই ভাগশেষ ভোগী হবে। যদি ওয়ারিশ হয় তবে তবে আপন সহোদর ভাই না থেকে শুধু আপন সহোদর বোন থাকলে, আপন সহোদর বোন ভাগীদার হবে, ভাগশেষভোগী হবে না।
(৪) যদি ওয়ারিশ হয় তবে বৈপিত্রিয় ভাই ও বৈপিত্রিয় বোন থাকলে বৈপিত্রিয় ভাই ও বৈপিত্রিয় বোন উভয়ে ভাগশেষভোগী হবে। বৈপিত্রিয় বোন না থাকলেও যদি ওয়ারিশ হয় তবে বৈপিত্রিয় ভাই ভাগশেষ ভোগী হবে। যদি ওয়ারিশ হয় তবে তবে বৈপিত্রিয় ভাই না থেকে শুধু আপন বৈপিত্রিয় বোন থাকলে, বৈপিত্রিয় বোন ভাগীদার হবে, ভাগশেষভোগী হবে না।
তাই জোড় হিশেব করলে ভাগশেষভোগীর সম্পর্কর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯। সহজে ভাগশেষভোগী তালিকা আবার লিখি। যথা:
১ম স্তর: (১) ছেলে ও মেয়ে, (২) ছেলের ছেলে ও ছেলের মেয়ে,
২য় স্তর: (৩) বাবা, (৪) দাদা,
৩য় স্তর (৫) আপন সহোদর ভাই, (৬) আপন সহোদর বোন, (৭) বৈপিত্রিয় ভাই, (৮) বৈপিত্রিয় বোন, (৯) আপন সহোদর ভাইয়ের ছেলে, (১০) বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলে, (১১) আপন সহোদর ভাইয়ের ছেলের ছেলে (১২) বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলের ছেলে,
৪র্থ স্তর: (১৩) আপন চাচা, (১৪) বৈমাত্রেয় চাচা, (১৫) আপন চাচতো ভাই, (১৬) বৈমাত্রেয় চাচাতো ভাই, (১৭) আপন চাচতো ভাইয়ের ছেলে, (১৮) বৈমাত্রেয় চাচাতো ভাইয়ের ছেলে, (১৯) দুরসম্পর্কের দাদার বংশধর।
ভাগীদাররা কে কতটুটুক অংশ পাবে?
মুসলিম আইনে এই প্রাপ্য অংশ কি হবে তার নির্দেশনা মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের ৪নং সূরার ১১ নং, ১২ নং, ১৭৬ নং আয়াতে প্রদান করেছেন। নীচে সে ৩ আয়াতের বঙ্গানুবাদ তুলে দেয়া হলো।
সূরা নং-৪, আয়াত নং (১১) আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু’ এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে। যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিশ হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ।
সূরা নং-৪, (১২) আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তোমাদের হবে এক-চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়; ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যে পুরুষের, ত্যাজ্য সম্পত্তি, তার যদি পিতা-পুত্র কিংবা স্ত্রী না থাকে এবং এই মৃতের এক ভাই কিংবা এক বোন থাকে, তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয়-ভাগের এক পাবে। আর যদি ততোধিক থাকে, তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর, যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্থায় যে, অপরের ক্ষতি না করে। এ বিধান আল্লাহর। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
সূরা নং-৪, (১৭৬) লোকেরা তোমার কাছে ফাতাওয়া জিজ্ঞেস করছে; বল, আল্লাহ তোমাদেরকে পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্পর্কে ফাতাওয়া দিচ্ছেন, কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার যদি সন্তান না থাকে আর তার একটি বোন থাকে, তবে রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধেক সে পাবে, আর সে (মৃত নারী) যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে, আর দু’ বোন থাকলে তারা তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির দু’-তৃতীয়াংশ পাবে, আর যদি ভাই ও বোন দু’ই থাকে, তবে পুরুষ পাবে দু’জন নারীর সমান। আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যাতে তোমরা বিভ্রান্তিতে পতিত না হও। আল্লাহ যাবতীয় ব্যাপারে পূর্ণরূপে অবহিত।
ভাগীদারদের জন্য অংশের ছক
এই আয়াত ২ খানার নির্দেশনাসহ সংশ্লিষ্ট সকল নির্দেশনা মন্থন করে মুসলিম আইন বিশারদগণ ভাগীদারদের অংশ সংক্রান্ত একটি ছক উৎপাদন করেছেন। সে ছক ফরায়েজ সংক্রান্ত সব মুসলিম আইনের বইয়ে পাওয়া যায়। আমি একটু ভিন্ন পাঠে সে ছকটি পুনরায় উৎপাদন করে দিলাম।
২নং ছক |
|||||
ক্র | সম্পর্ক | স্বাভাবিকভাগ | যখনস্বাভাবিকভাগপ্রযোজ্য | বিশেষভাগ |
যখনবিশেষভাগপ্রযোজ্য |
১ |
বাবা | ১৬.৬৭% | যখনসন্তানথাকবে | ভাগশেষভোগী |
নিঃসন্তান |
২ |
দাদা | ১৬.৬৭% | যখনসন্তানসন্তানথাকবেকিন্তুবাবানাই | ভাগশেষভোগী |
নিঃসন্তানএবংবাবাওনেই |
৩ |
স্বামী | ২৫% | যখন১জনসন্তানথাকবে | ৫০% |
যখন১এরঅধিকসন্তানথাকবে |
৫ | মা | ১৬.৬৭% | যখনসন্তানথাকবে | ৩৩.৩৪% |
নিঃসন্তান |
৩নং ছক |
||||||
ক্র |
সম্পর্ক | স্বাভাবিকভাগ
(১জন হলে) |
স্বাভাবিকভাগ
(১ এর অধিক হলে) |
যখন স্বাভাবিক ভাগ প্রযোজ্য | বিশেষ ভাগ |
যখন বিশেষ ভাগ প্রযোজ্য |
৪ |
স্ত্রী | ১২.৫০% | ১২.৫০% | যখন সন্তান থাকবে | ২৫% |
যখন নিঃসন্তান |
৬ |
দাদী ও নানী | ১৬.৬৭% | ১৬.৬৭% | যখন সন্তান থাকবে কিন্তু বাবাও নেই, মাও নেই | প্রযোজ্য নয় |
প্রযোজ্য নয় |
৭ |
মেয়ে | ৫০% | ৬৬.৬৭% | যখন কোনো ছেলে নাই | ভাগশেষভোগী |
যখন ছেলে থাকবে |
৮. |
মেয়ের মেয়ে | ৫০% | ৬৬.৬৭% | যখন কোনো ছেলে নাই, মেয়েও নাই, ছেলের ছেলেও নাই | ভাগশেষভোগী |
যখন কোনো ছেলে নাই, মেয়েও নাই, কিন্তু ছেলের ছেলেও আছে |
৯ ১০ |
বৈপিত্রিয় ভাই
অথবা বৈপিত্রিয় বোন
|
১৬.৬৭% | ৩৩.৩৪% | যখন নিঃসন্তান এবং বাবাও নেই | প্রযোজ্য নয় |
প্রযোজ্য নয় |
১১ |
আপন সহোদর বোন | ৫০% | ৬৬.৬৭% | যখন নিঃসন্তান এবং বাবাও নেই, দাদা নেই, আপন সহোদর ভাইও নেই | ভাগশেষভোগী | যখন সন্তান এবং বাবাও নেই, দাদা নেই কিন্তু আপন সহোদর ভাই আছে |
১২ |
বৈমাত্রেয় বোন | ৫০% | ৬৬.৬৭% | নিঃসন্তান এবং বাবাও নেই, দাদা নেই, আপন সহোদর ভাই বা বোনও নেই, বৈমাত্রেয় ভাইও নেই | ভাগশেষভোগী |
নিঃসন্তান এবং বাবাও নেই, দাদা নেই, আপন সহোদর ভাই বা বোনও নেই, কিন্তু বৈমাত্রেয় ভাই আছে |
কিভাবে মুখস্ত থাকবে?
মোট ৩টি ছক আঁকলাম। যদিও প্র্যাকটিস করতে করতেই এই ছক আত্মস্থ হয়ে যায় তবুও কীভাবে এব ছক আয়ত্বে রাখবো একটা বহুল চর্চিত জিজ্ঞাসা। আমারও একই জিজ্ঞাসা ছিলো- যার উত্তর দিয়েছিলেন আমার মরহুম সিনিয়র (আল্লাহপাক তাঁকে বেহেস্ত নসীব করুন) অ্যাডভোকেট মোজাহারুল ইসলাম নয়ন (এলএল. বি, এলএল. এম, রাজশাহী) এই বলে যে একমাত্র উপায় হলো মুখাস্ত করা আর মুখাস্ত করার একমাত্র রাস্তা হলো ৫০০টা ফরায়েজ অংক কষা এবং পারলে সবগুলা প্রথমে ভুল করা। এতো অংক কই পাওয়া যাবে- বাজারে থেকে ৬/৭টা ভিন্ন ভিন্ন মুসলিম আইনের বই কিনলেই পাওয়া যাবে; ৫০০টা অংক মানে ৫০০ রকম অংক নয় কেবলই ৫০০ সংখ্যক অংক মাত্র। এই ছক মনে রাখতে কোনো লজিক খাঁটাতে যাওয়া বিপদ ডেকে আনার নামান্তর হতে পারে। এই ভাগগুলো পবিত্র কোরআনে নির্দিষ্ট করা বলেই এই ভাগগুলোর আরেক নাম কোরানিক শেয়ার। পবিত্র কোরআনের আয়াত যেমন লজিক খাঁটিয়ে মনে রাখার সুয়োগ নেই, বরং মুখস্ত রাখাই বিধান, কোরানিক শেয়ারগুলোর মর্ম ও তেমনই হওয়া কাম্য।
ভগ্নাংশের স্থলে শতকরা হার ব্যবহার করার বিশেষত্ব
মুসলিম আইনের সব বইতে উপরের ছকে ভগ্নাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমি ব্যবহার করেছি শতকরা হার। আমার যুক্তি হলো শতকরা হার ব্যবহারে ভগ্নাংশের সাধারণ হরিকরণ এর জটিলতা একটু কম হয়। আমরা সবাই জানি শতকরা হারও আসলে ১ধরণের ভগ্নাংশ যার হর সবসময় ১০০। ফরায়েজ হিশেবে শতকরা হার ধরে ফরায়েজ করলে সব ভগ্নাংশের কমন বা সাধারণ হরিকরণ এর কাজটা কমে যায়।
তাই
২ ভাগের ১ ভাগ এর স্থলে ১০০ ভাগের ৫০ ভাগ করে ৫০% ব্যবহার করেছি।
৩ ভাগের ১ ভাগ এর স্থলে ১০০ ভাগের ৩৩.৩৪ ভাগ করে ৩৩.৩৪% ব্যবহার করেছি।
৪ ভাগের ১ ভাগ এর স্থলে ১০০ ভাগের ২৫ ভাগ করে ২৫% ব্যবহার করেছি।
৬ ভাগের ১ ভাগ এর স্থলে ১০০ ভাগের ৫০ ভাগ করে ১৬.৬৭% ব্যবহার করেছি।
৮ ভাগের ১ ভাগ এর স্থলে ১০০ ভাগের ৫০ ভাগ করে ১২.৫০% ব্যবহার করেছি।
৩ ভাগের ২ ভাগ এর স্থলে ১০০ ভাগের ৭৫ ভাগ করে ৬৬.৬৭% ব্যবহার করেছি।
নির্দিষ্ট কিছু সম্পর্কের প্রাপ্যতা সামারি
ছকগুলোর আলোকে ভাগীদার তালিকা ও ভাগশেষ তালিকা বিশ্লেষণে আবশ্যকীয় কিছু প্রাপকের অংশের বিবরণ নীচে দেয়া গেলো।
বাবা:
(১) মৃত ব্যক্তির বাবা অবশ্যই পাবেন। মৃত ব্যক্তির মরণকালে মৃত ব্যক্তির বাবা যদি জীবিত থাকেন কোনো ভাবেই বাবাকে বাদ দেয়া যায় না।
(২) মৃতব্যক্তি যদি একেবারে নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান তবে মৃত ব্যক্তির বাবা ভাগশেষভোগী শ্রেণীতে ঢুকে যান।তিনি আর ভাগীদার শ্রেণীভুক্ত থাকেন না।
(৩) মৃত ব্যক্তি যদি ছেলের ছেলে না রেখে মারা যান সেক্ষেত্রেও মৃতব্যক্তির বাবা ভাগশেষভোগী শ্রেণীতে ঢুকে যান।তিনি আর ভাগীদার শ্রেণীভুক্ত থাকেন না।
(৪) মৃতব্যক্তি যদি সন্তান বা পুত্রের সন্তান রেখে মারা যান তবে পিতা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে ৬ ভাগের ১ অংশ তথা ১৬.৬৭% সম্পত্তি পাবেন।
(৫) মৃতব্যক্তির বাবা জীবিত থাকলে মৃত ব্যক্তির দাদা, দাদী, আপন সহোদর ভাই, আপন সহোদর বোন, বৈপিত্রিয়ভাই, বৈপিত্রিয় বোন, বৈমাত্রেয় ভাই, বৈমাত্রেয় বোন, চাচা, চাচাত ভাই এরা কেউ মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে অংশ পাওনা হবেনা।
দাদা
(১) মৃতব্যক্তির বাবা জীবিত থাকলে দাদা কখনোই অংশ পাবেন না।
(২) মৃতব্যক্তির বাবা আগেই মারা গিয়ে থাকলেও দাদা যদি জীবিত থাকেন কোনোভাবেই দাদাকে বাদ দেয়া যায় না।
(৩) মৃতব্যক্তির ছেলে থাকলে অথচ বাবা মারা গেল কিন্তু মৃতব্যক্তির দাদা জীবিত থাকলে দাদা কখনোই ভাগশেষ পাবেন না, কেবল ভাগীদার হবেন।
(৪) মৃতব্যক্তি যদি সন্তান বা ছেলের সন্তান রেখে মারা যান তবে দাদা মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৬ ভাগের ১ অংশ তথা ১৬.৬৭% সম্পত্তি পাবেন।
(৫) মৃতব্যক্তি যদি একেবারে নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান এবং মৃতব্যক্তির বাবাও যদি মারা গিয়ে থাকেন অথচ দাদা জীবিত থাকেন তবে মৃতব্যক্তির দাদা ভাগশেষভোগী শ্রেণীতে ঢুকে যান। তিনি আর ভাগীদার শ্রেণীভুক্ত থাকেন না।
(৬) মৃতব্যক্তি যদি ছেলের ছেলে না রেখে মারা যান এবং মৃতব্যক্তির বাবাও যদি মারা গিয়ে থাকেন অথচ দাদা জীবিত থাকেন সেক্ষেত্রেও মৃতব্যক্তির দাদা ভাগশেষভোগী শ্রেণীতে ঢুকে যান। তিনি আর ভাগীদার শ্রেণীভুক্ত থাকেন না।
(৭) মৃতব্যক্তির দাদা জীবিত থাকলে এবং মৃতব্যক্তির বাবা যদি মারা গিয়ে থাকেন অথচ দাদা জীবিত থাকেন তবে মৃতব্যক্তির দাদী, নানী,আপন সহোদর ভাই, আপন সহোদর বোন, বৈপিত্রিয় ভাই, বৈপিত্রিয় বোন, বৈমাত্রেয় ভাই, বৈমাত্রেয় বোন, চাচা, চাচাত ভাই এরা কেউ মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে অংশ পাওনা হবেনা।
মা
(১) মৃতব্যক্তির মা অবশ্যই পাবেন। মৃতব্যক্তির মরণকালে মৃতব্যক্তির মা যদি জীবিত থাকেন কোনোভাবেই মাকে বাদ দেয়া যায় না।
(২) মৃতব্যক্তি যদি সন্তান রেখে মারা যান তবে মা মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৬ ভাগের ১ অংশ তথা ১৬.৬৭% সম্পত্তি পাবেন।
(৩) মৃতব্যক্তি যদি তার ছেলের সন্তান রেখে মারা যান তবে মা মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৬ ভাগের ১ অংশ তথা ১৬.৬৭% সম্পত্তি পাবেন।
(৪) আপন সহোদর হোক কিংবা হোক বৈমাত্রেয়- মৃতব্যক্তি যদি ১ এর অধিক ভাইবাবোন রেখে মারা যান তবে মৃতব্যক্তির মা মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৬ ভাগের ১ অংশ তথা ১৬.৬৭% সম্পত্তি পাবেন।
(৫) মৃতব্যক্তি যদি একেবারে নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান তবে মৃত ব্যক্তির মা মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৩ ভাগের ১ অংশ তথা ৩৩.৩৪% সম্পত্তি পাবেন।
(৬) মৃত ব্যক্তির বাবা জীবিত থাকলে মৃতব্যক্তির দাদী জীবিত থাকলেও মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে অংশ পাওনা হবেনা।
মেয়ে
(১) নারী হোক বা পুরুষ হোক, মৃতব্যক্তির লিঙ্গ যেটাই হোক না কেনো, তিনি যদি মৃত্যুকালে মেয়ে সন্তান রেখে মারা যান তবে সে মেয়ে সন্তান অবশ্যই মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে অংশ পাবেন। মেয়েকে বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই।
(২) মৃতব্যক্তি যদি মৃত্যুকালে ছেলেবিহীন অবস্থায় কেবল ১ মেয়ে রেখে মারা যান তবে সে মেয়ে মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে অর্ধেক মানে ২ ভাগের ১ ভাগ তথা ৫০% সম্পত্তি পাবে।
(৩) মৃতব্যক্তি যদি মৃত্যুকালে ছেলেবিহীন অবস্থায় ১ এর অধিক মেয়ে রেখে মারা যান তবে সকল মেয়ে মিলে মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৩ ভাগের ২ ভাগ তথা ৬৬.৬৭% সম্পত্তি পাবে। পরে সে ৩ ভাগের ২ ভাগ সকল মেয়ের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ হবে।
ধরা যাক, মৃত্যুকালে মৃতব্যক্তি ৯৯ টাকার সম্পত্তি এবং ২ মেয়ে রেখে কোনো ছেলে সন্তান না রেখে মারা গেছেন।সেক্ষেত্রে ২ মেয়ে মৃতব্যক্তির ৬৬ টাকা পেয়ে যাবেন এবং সমহারে প্রত্যেক মেয়ে ৩৩ টাকা পাবেন। যদি ৩ মেয়ে হতো, তবে প্রত্যেক মেয়ে ২২ টাকা করে পাবেন।যদি ৬ মেয়ে হতো তবে প্রত্যেক মেয়ে ১১ টাকা করে পাবেন।
(৪) মৃতব্যক্তি তাঁর মেয়ের সাথে ছেলে রেখে মারা গেলেই মেয়েরা ছেলের ভাগশেষ জোড় হিসেবে ভাগশেষভোগী শ্রেণীতে ঢুকে যাবেন।ছেলে থাকলে মেয়ে কোনোভাবেই ভাগীদার শ্রেণীভুক্ত থাকেন না। ভাগশেষভোগী হিসেবে মেয়ে ছেলের অর্ধেক এই অনুপাতে সম্পত্তি পাবেন।
(৫) মৃতব্যক্তি যদি এক মেয়ে রেখে মারা যান তবে মৃতব্যক্তির আপন সহোদর বোন, বৈপিত্রিয় ভাই, বৈপিত্রিয় বোন, বৈমাত্রেয় ভাই, বৈমাত্রেয় বোন এরা কেউ মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে অংশ পাওনা হবে না।
(৫) মৃতব্যক্তি যদি একাধিক মেয়ে রেখে মারা যান তবে মৃতব্যক্তির ছেলের মেয়ে, আপন সহোদর বোন, বৈপিত্রিয় ভাই, বৈপিত্রিয় বোন, বৈমাত্রেয় ভাই, বৈমাত্রেয় বোন এরা কেউ মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে অংশ পাওনা হবে না।
দাদী ও নানী
(১) মৃতব্যক্তির বাবা জীবিত থাকলে মৃতব্যক্তির দাদী জীবিত থাকলেও কখনোই অংশ পাবেন না।
(২) মৃতব্যক্তির মা জীবিত থাকলে মৃতব্যক্তির দাদী বা নানী কখনোই অংশ পাবেন না।
(৩) মৃতব্যক্তির দাদা জীবিত থাকলে মৃতব্যক্তির দাদী বা নানী কখনোই অংশ পাবেন না।
(৪) যদি এমন হয় যে মৃতব্যক্তির ছেলে নেই, মেয়ে নেই, ছেলের সন্তান নেই, মানেই, কিন্তু নানী জীবিত তবে নানী মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৬ ভাগের ১ অংশ তথা ১৬.৬৭% সম্পত্তি পাবেন।
(৫) যদি এমন হয় যে মৃতব্যক্তির ছেলে নেই, মেয়ে নেই, ছেলের সন্তান নেই, মা নেই, বাবা নেই, দাদা নেই কিন্তু দাদী জীবিত তবে দাদী (যদি নানী জীবিত থাকে তবে নানী সহ) মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৬ ভাগের ১ অংশ তথা ১৬.৬৭% সম্পত্তি পাবেন।
(৬) যদি এমন হয় যে মৃতব্যক্তির ছেলে নেই, মেয়ে নেই, ছেলের সন্তান নেই, মানেই, বাবা নেই কিন্তু দাদী ও নানী উভয়ে জীবিত তবে দাদী ও নানী একত্রে মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৬ ভাগের ১ অংশ তথা ১৬.৬৭% সম্পত্তি পাবেন।
আপন সহোদর বোন
(১) মৃতব্যক্তির মেয়ে থাকলে মৃতব্যক্তির আপন সহোদর বোন থাকলেও কখনোই অংশ পাবেন না।
(২) মৃতব্যক্তির ছেলে থাকলে মৃতব্যক্তির আপন সহোদর বোন থাকলেও কখনোই অংশ পাবেন না।
(৩) মৃতব্যক্তির বাবা জীবিত থাকলে মৃতব্যক্তির বোন থাকলেও কখনোই অংশ পাবেন না।
(৪) মৃত ছেলের ঘরে ছেলে থাকলে মৃতব্যক্তির আপন সহোদর বোন থাকলেও কখনোই অংশ পাবেন না।
(৫) মৃত ছেলের ঘরে মেয়ে থাকলে মৃতব্যক্তির আপন সহোদর বোন থাকলেও কখনোই অংশ পাবেন না।
(৬) মৃতব্যক্তির দাদা জীবিত থাকলে মৃতব্যক্তির আপন সহোদর বোন থাকলেও কখনোই অংশ পাবেন না।
(৭) মৃতব্যক্তি যদি মৃত্যুকালে সন্তান বিহীন এবং বাবা ও দাদা বিহীন অবস্থায় কেবল ১ জন আপন সহোদর বোন রেখে মারা যান তবে সে আপন সহোদর বোন মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে অর্ধেক মানে ২ ভাগের ১ ভাগ তথা ৫০% সম্পত্তি পাবে।
(৮) মৃতব্যক্তি যদি মৃত্যুকালে সন্তান বিহীন এবং বাবা ও দাদা বিহীন অবস্থায় ১ এর অধিক আপন সহোদর বোন রেখে মারা যান তবে সকল আপন সহোদর বোন আপন সহোদর বোন মিলে মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৩ ভাগের ২ ভাগ তথা ৬৬.৬৭% সম্পত্তি পাবে।পরে সে ৩ ভাগের ২ ভাগ সকল আপন সহোদর বোন এর মধ্যে সমান ভাবে ভাগ হবে।
(৯) মৃতব্যক্তি যদি মৃত্যুকালে সন্তানবিহীন এবং বাবা ও দাদাবিহীন অবস্থায় মৃতব্যক্তি তাঁর আপন সহোদর বোন সাথে আপন সহোদর ভাই রেখে মারা গেলেই আপন সহোদর বোনেরা আপন সহোদর ভাই এর ভাগশেষজোড় হিসেবে ভাগশেষভোগী শ্রেণীতে ঢুকে যাবেন।আপন সহোদর ভাই থাকলে আপন সহোদর বোন কোনোভাবেই ভাগীদার শ্রেণীভুক্ত থাকেন না। ভাগশেষভোগী হিসেবে আপন সহোদর বোন আপন সহোদর ভাই এর অর্ধেক এই অনুপাতে সম্পত্তি পাবেন।
(১০) মৃতব্যক্তি যদি মৃত্যুকালে সন্তান বিহীন এবং বাবা, দাদা ও আপনস হোদর ভাই বিহীন অবস্থায় মারা গেলে তাঁর আপন সহোদর বোন ভাগশেষভোগী শ্রেণীতে ঢুকে যাবেন এবং সেক্ষেত্রে সহোদর বোন কোনোভাবেই ভাগীদার শ্রেণীভুক্ত থাকেন না।
(১১) মৃতব্যক্তি যদি আপন সহোদর বোন রেখে মারা যান তবে মৃতব্যক্তির বৈমাত্রেয় ভাই, বৈমাত্রেয় বোন, চাচা, চাচাত ভাই এরা কেউ মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে অংশ পাওনা হবে না।
আপন সহোদর ভাই
(১) মৃতব্যক্তির ছেলে থাকলে মৃতব্যক্তির আপন সহোদর ভাই কখনোই অংশ পাবেন না।
(২) মৃতব্যক্তির বাবা জীবিত থাকলে মৃতব্যক্তির ভাই কখনোই অংশ পাবেন না।
(৪) মৃত ছেলের ঘরে ছেলে থাকলে মৃত ব্যক্তির আপন সহোদর ভাই কখনোই অংশ পাবেন না।
(৩) মৃত ব্যক্তির দাদা জীবিত থাকলে মৃতব্যক্তির আপন সহোদর ভাই কখনোই অংশ পাবেন না।
(৪) মৃতব্যক্তি যদি আপন সহোদর বোন রেখে মারা যান তবে মৃতব্যক্তির বৈমাত্রেয় ভাই, বৈমাত্রেয় বোন, চাচা, চাচাত ভাই এরা কেউ মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে অংশ পাওনা হবে না।
স্ত্রী
(১) মৃতব্যক্তির স্ত্রী অবশ্যই পাবেন। মৃতব্যক্তির মরণকালে মৃতব্যক্তির স্ত্রী যদি জীবিত থাকেন কোনো ভাবেই স্ত্রীকে বাদ দেয়া যায় না।
(২) মৃতব্যক্তি যদি একেবারে নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান তবে স্ত্রী মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৪ ভাগের ১ অংশ তথা ২৫% সম্পত্তি পাবেন।
(৩) ব্যক্তি যদি ১টি মাত্র সন্তান রেখেও মারা যান তবে একাধিক স্ত্রী থাকলেও সকল স্ত্রী মিলে মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৮ ভাগের ১ অংশ তথা ২৫% সম্পত্তি পাবেন।
ধরা যাক, মৃত্যুকালে মৃতব্যক্তি ১০০ টাকার সম্পত্তি এবং এক স্ত্রী রেখে কোনো সন্তান না রেখে মারা গেছেন।সেক্ষেত্রে এক স্ত্রী মৃতব্যক্তির ২৫ টাকা পেয়ে যাবেন। যদি মৃতব্যক্তি দুই স্ত্রী রেখে মারা যেতেন তবে ২ স্ত্রী মিলেই ২৫ টাকা পেতেন এবং সমহারে প্রত্যেক স্ত্রী ১২.৫০ টাকা পাবেন। যদি ৩ স্ত্রী হতো, তবে প্রত্যেক মেয়ে ৮.৩৩ টাকা করে পাবেন। যদি ৪ মেয়ে হতো তবে প্রত্যেক মেয়ে ৮.২৫ টাকা করে পাবেন। যদি ৫ স্ত্রী হতো তবে যেকোনো একজন স্ত্রীর সাথে মৃতব্যক্তির বিয়ে অনিয়মিত হতো। কারণ একসাথে একজন মুসলিম পুরুষ ৪ জনের বেশী স্ত্রী রাখতে পারবেন না।সেক্ষেত্রে যে স্ত্রীর সাথে বিয়ে অনিয়মিত পাওয়া যাবে সে স্ত্রী ওয়ারিশ হিসেবে কিছুই পাবেন না।
(৪) ব্যক্তি যদি ১টি মাত্র সন্তান রেখেও মারা যান তবে ১জন স্ত্রী মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৮ভাগের ১ অংশ তথা ১২.৫০% সম্পত্তি পাবেন।
(৫) ব্যক্তি যদি ১টি মাত্র সন্তান রেখেও মারা যান তবে একাধিক স্ত্রী থাকলেও সকল স্ত্রী মিলে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে ৮ ভাগের ১ অংশ তথা ১২.৫০% সম্পত্তি পাবেন। এক্ষেত্রেও উপরের উদাহরণ প্রযোজ্য।
স্বামী
(১) মৃতব্যক্তির স্বামী অবশ্যই পাবেন। মৃতব্যক্তির মরণকালে মৃতব্যক্তির স্বামী যদি জীবিত থাকেন কোনোভাবেই স্বামীকে বাদ দেয়া যায় না।
(২) মৃতব্যক্তি যদি একেবারে নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান তবে স্বামী মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে ২ ভাগের ১ অংশ তথা ৫০% সম্পত্তি পাবেন।
(৪) ব্যক্তি যদি ১টি মাত্র সন্তান রেখেও মারা যান তবে স্বামী মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৪ ভাগের ১ অংশ তথা ২৫% সম্পত্তি পাবেন।
(৫) ব্যক্তি যদি ১টি মাত্র ছেলের সন্তান রেখেও মারা যান তবে স্বামী মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে ৪ ভাগের ১ অংশ তথা ২৫% সম্পত্তি পাবেন।
সৎ সম্পর্ক তথা সৎবাবা, সৎমা, সৎভাই, সৎবোন, সৎছেলে, সৎমেয়ে
(১) শর্তসাপেক্ষে কেবলমাত্র মৃতব্যক্তির সৎভাই বা সৎবোন মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে অংশ পেতে পারেন।
(২) মৃতব্যক্তির সৎবাবা বা সৎমা কখনোই মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে অংশ পাবেন না।
(৩) মৃতব্যক্তির সৎছেলে বা সৎমেয়ে কখনোই মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে অংশ পাবেন না।
তার মানে হলো নুহাশ এর সম্পত্তিতে নিষাদ, নিনিত ভাগ পেলেও পেতে পারে, নিশাদ বা নিনিতের সম্পত্তিতে নুহাশ সম্পত্তি পেলেও পেতে পারে যেহেতু নুহাশ এবং নিষাদ ও নিনিত পরস্পর বৈমাত্রেয় ভাই। কিন্তু গুলতেকিনের সম্পত্তিতে নিষাদ, নিনিত এবং শাওনের সম্পত্তিতে নুহাশ কখনোই ভাগ পাবে না। উল্টো করে নুহাশের সম্পত্তিতে শাওন এবং নিষাদ ও নিনিতের সম্পত্তিতে গুলতেকিন কখনোই অংশ পাবে না।
তালাকের ফলে ফরায়েজে ফলাফল
(১) স্ত্রী যে স্বামীকে তালাক দিয়েছেন, সে পুরুষ কিন্তু আর সেই নারীর স্বামী থাকেন না, সে পুরুষ হয়ে যান তালাকদাতা স্বামী। তেমনি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন যে স্বামী, তালাকের পর আর সে পুরুষ কখনোই সে নারীর স্বামী থাকেন না, সে পুরুষও হন তালাকদাতা স্বামী। ফলে তালাকপ্রাপ্ত ব্যক্তি মৃতব্যক্তির স্বামী হওয়ার কোনোই সুযোগ নেই।
(২) স্বামী যে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন, সে নারী কিন্তু আর সেই পুরুষের স্ত্রী থাকে না, সে নারী হয়ে যান তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী। তেমনি স্বামীকে তালাক দিয়েছেন যে স্ত্রী, তালাকের পর আর সে নারী কখনোই সে পুরুষের স্ত্রী থাকেন না, সে নারীও হন তালাকপ্রাপ্তা নারী। ফলে তালাকপ্রাপ্ত ব্যক্তি মৃতব্যক্তির স্ত্রী হওয়ার কোনোই সুযোগ নেই
তালাকের পরে জন্ম নেয়া সন্তান
সাক্ষ্য আইনের ১১২ ধারা মতে একটি বৈধ বিয়ের মধ্যে যেকোনো দিন জন্ম নেয়া শিশু এবং তালাক হলে, তালাকের ২৮০ দিনের মধ্যে জন্ম নেয়া সন্তান বিবাহকারী পুরুষের সন্তান হিসেবে সে পুরুষের ওয়ারিশ হয়।
তবে হানাফি আইনে বিয়ের ৬ মাস পরে সন্তানের বৈধতা তৈরী হয় এবং তালাকের ২ বছরের মধ্যে সন্তান হলেও সে সন্তানকে তালাক প্রদানকারী পুরুষের বৈধ সন্তান ধরে সে পুরুষের ওয়ারিশ গণ্য করাহয়। উভয় আইনে অবশ্য আরও কিছু শর্ত আরোপ আছে। যথা, সে নারী আর কোনো পুরুষের সাথে শারিরীক সম্পর্ক করতে পারবেনা সে নির্ধরিত সময়ের মধ্যে।
তুলনামূলক আলোচনায় দেখা যায়-
(১) বিয়ের পরের দিন সন্তান হলেও তা সাক্ষ্য আইনে বৈধ কিন্তু হানাফি আইনে অবৈধ।
(২) তালাকে ২৪১তম দিনে সন্তান হলে তা হানাফি আইনে বৈধ কিন্তু সাক্ষ্য আইনে অবৈধ।
বৈধতার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে এবং একটি সন্তান বৈধ ঘোষণা হওয়া মাত্র সে তার বাবার ওয়ারিশ হয় এবং বাবাও তার ওয়ারিশ হয়।
দূর সম্পর্কের আত্মীয় শ্রেণী
ফরায়েজের৩শ্রেণীরসর্বশেষশ্রেণীহলোদুসম্পর্কেরআত্মীয়স্বজন।বর্তমানপ্রেক্ষাপটেএইশ্রেণীখুবএকটাপ্রায়োগিকশ্রেণীনয়। যখন ভাগীদার বা ভাগশেষভোগী কাউকেই পাওয়া যাবে না, তখন ই কেবল মাত্র দুঃসম্পর্কের আত্মীয়রা ভাগ পায়। এদরে কে আবার ৪শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। এদের আলোচনা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক ফরায়েজ বিদ্যার জন্য খুব একটা দরকার হয় না আবার মুখোরচক ও নয়।
ফরায়েজ সমাধান
আমাদের সামনে কোনো সম্পত্তির মুসলিম ফরায়েজ করতে দেয়া হলে, আমরা মূলত নীচের স্টেপগুলো ধারাবাহিকভাবে নেই,
(১) মৃত ব্যাক্তি যাদের কে রেখে মারা গেছেন তাদের তালিকা করি।
(২) সে তালিকায় আবশ্যকীয় কেউ বাদ পড়লো কীনা চেক করি।
(৩) সে তালিকায় যারা বাদ যাবে, তাদের বাদ দেই।
(৪) উপরের পদক্ষেপগুলোতে যারা পাওনাদার বলে গণ্য হন তাদের মধ্যে কারা ভাগীদার আর কারা ভাগশেষভোগী আর প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কারা দূর সম্পর্কের আত্মীয় তা শ্রেণিকরণ করি।
(৫) ভাগীদার থাকলে তাদের মধ্যে নির্ধারিত প্রাপ্য বিতরণ করি।
(৬) ভাগশেষ ভোগী না থাকলে ভাগীদারদের মদ্যে অংশর তুলনায় সম্পদ কম হলে আউল নীতি প্রয়োগ করি।
(৭) ভাগশেষভোগী না থাকলে এবং অংশের চেয়ে সম্পদ বেশী হলে রাদ নীতি প্রয়োগ করি।
(৮) ভাগশেষভোগী হলে ছেলে ঃ মেয়ে = ২ অনুপাত ১ এই হারে ভাগ করি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: সবশেষে বিষয়ের সংবেদনশীলতার কারণেই সাবধানতাস্বরূপ এই লেখা কেবলই বিবরণ এবং বিবরণ হিসেবেই লেকাটি গ্রহণের সানুনয় অনুরোধ করা গেলো। লেখকের বা প্রকাশকের কোনোমত এখানে দেয়া হয়নি। এই বিবরণে প্রকাশকের কোনো দায় নেই, সম্পূর্ণ দায় লেখকের।পূর্বে উল্লেখিত মোল্লা এবং সিরাজি এই ২ বই হতে লেখক এই বাংলা বিবরণ তৈরী করেছেন। বাংলা অনুবাদে কারও দ্বিমত থাকলে আলোচনা সাপেক্ষে ভুল ধরা পড়ার সাথে সাথে লেখক তা নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা পূর্বক সংশোধন করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। বিতর্কিত তথ্য বা বিতর্কিত মতের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তি বা পুস্তকের দ্বারস্থ হবার সবিনয় অনুরোধ করা গেলো।
সাব্বির এ মুকীম: অ্যাডভোকেট; জজ কোর্ট, কুমিল্লা। ই-মেইল: samukim1@gmail.com
চলবে…