১৯৯৪ সালে প্রবর্তিত কোম্পানি আইন সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। বুধবার (১৮ নভেম্বর) রাতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জাতীয় সংসদে ‘কোম্পানি (দ্বিতীয় সংশোধন) বিল-২০২০’ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
কোম্পানি আইনের এ সংশোধনের ফলে ‘এক ব্যক্তি কোম্পানি’ খোলার সুযোগ তৈরি হল।
কোম্পানি আইন অনুযায়ী এখন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি পরিচালিত হয় পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে। এই পর্ষদ বা বোর্ডের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
নতুন বিলে বলা হয়েছে, ‘এক ব্যক্তির কোম্পানি’ হলো সেই কোম্পানি, যার বোর্ডে সদস্য থাকবেন কেবল একজন। কোম্পানির পরিশোধিত শেয়ার মূলধন হবে অন্যূন ২৫ লাখ টাকা এবং অনধিক ৫ কোটি টাকা।
যদিও সংসদে উত্থাপিত বিলে আগে পরিশোধিত মূলধন অন্যূন ৫০ লাখ টাকা এবং অনধিক ১০ কোটি টাকা রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে সংসদীয় কমিটির সুপারিশে ধারাটি পরে পরিবর্তন করা হয়।
বিলে অব্যবহিত পূর্ববর্তী অর্থবছরের বার্ষিক টার্নওভার অন্যূন দুই কোটি টাকা এবং অনধিক ১০০ কোটি টাকার যে প্রস্তাব ছিল সংসদীয় কমিটির সুপারিশে সেটা এক কোটি ও ৫০ কোটি টাকা করা হয়।
পরিশোধিত শেয়ার মূলধন এবং বার্ষিক টার্নওভার এর বেশি হলে শর্তপূরণ সাপেক্ষে এক ব্যক্তির কোম্পানিকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বা নিয়মানুযায়ী পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা যাবে।
এক ব্যক্তির কোম্পানিকে বছরে কমপক্ষে একটি পরিচালক সভা করতে হবে বলেও বিলে বিধান রাখা হয়েছে। তবে, পরিচালক এবং প্রধান ব্যক্তি একজন থাকেন বলে এ ধরনের কোম্পানি পর্ষদ সভা করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নিয়মের ছাড় পাবে।
একমাত্র সদস্য মারা গেলে তার মনোনীত ব্যক্তি সকল শেয়ারের মালিক হবেন বলে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে।
এ ধরনের কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে হস্তান্তরকারীর ব্যক্তিগত উপস্থিতি এবং কমিশনের মাধ্যমে হস্তান্তর দলিলে স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে বিলে।
বিলে আরও বলা হয়েছে, কোম্পানি উঠে গেলে পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধনের বিধানও রাখা হয়েছে এতে।
বর্তমান আইনে ১৪ দিনের নোটিসে বোর্ড মিটিং করার বিধান আছে। প্রস্তাবিত আইনে এটাকে ২১ দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ডেপুটি স্পীকার অ্যাডভোকেট মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিলটির ওপর আলোচনায় অংশ নেন বিরোধীদলীয় সদস্যরা। তাদের দেয়া জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। তাদের আনা বিলের ওপর আনীত সংশোধনী প্রস্তাবগুলোও গৃহীত হয়নি।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
উত্থাপিত বিলের বিরোধিতা করে এক ব্যক্তির কোম্পানির বিষয়ে সরকারী অর্থের ক্ষতির আশঙ্কা ব্যক্ত করে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বলেন, দেশ থেকে প্রায় এক লাখ টাকা লুণ্ঠন হয়ে গেছে, অনেক বড় বড় কোম্পানির মালিকরা বড় বড় ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে, বিদেশে অট্টালিকা বানিয়ে বিলাসবহুল জীবন কাটাচ্ছে। জনগণের অর্থ যেন আর লোপাট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিমু মুনশি বলেন, আমাদের সামনে প্রধান প্রশ্ন- বাংলাদেশ এগোবে, কি এগোবে না? ওয়ান পার্সন কোম্পানি করা হচ্ছে বিদেশী বিনিয়োগ আনতে। এটি এখন সময়ের দাবি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ, ভারত, পাকিস্তানসহ বহু দেশেই ‘ইজি ডুয়িং বিজনেসের’ জন্য ওয়ান ব্যক্তি কোম্পানি আছে।
তিনি বলেন, রিস্ক (ঝুঁকি) তো আমাদের নিতেই হবে। আমরা সময়মতো সফল ব্যবস্থা নিয়েছি বলেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, অনেক বড় বড় দেশ থেকেও অর্থনৈতিক দিক থেকে আমরা এগিয়ে আছি। এই অগ্রযাত্রাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে।