জালিয়াতি ও প্রতারণা করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়ার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, গোপালগঞ্জ আদালতের চার কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা দুটি মামলা করা হয়েছে।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন পাটোয়ারী শাহবাগ থানায় মামলা দুটি দায়ের করেন। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ২২০০ পিস ইয়াবা চালানকে ২২ পিসের কথা উল্লেখ করে একজনের জামিন নেয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি ১০ জন। আর ৬০০ পিস এর বদলে ৪০ পিস এবং ১০০০ পিসের বদলে ৩০ পিস ইয়াবা দেখিয়ে দুইজনের জামিন নেয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি হলেন ছয়জন। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মামলার আসামিরা হলেন, মো. জাকির হোসেন মোল্লা (গোপালগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা), জাহিদুল ইসলাম (প্রধান তুলনা কারক), তপন বিশ্বাস (সহকারী তুলনা কারক), অগস্তা বাইন (অফিস সহকারী), মোস্তফা কামাল (সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী), মো. কামরুল ইসলাম (শিক্ষানবিশ আইনজীবী), সফিউল্লাহ খান, মনির হোসেন, মো. আলী ফকির ও দাউদ মোল্লা।
অন্য মামলায় মো. জাকির হোসেন মোল্লা (গোপালগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা), জাহিদুল ইসলাম (প্রধান তুলনা কারক), তপন বিশ্বাস (সহকারী তুলনা কারক), কাশিয়ানি উপজেলার মো. আসলাম শেখ ও মো. রমজান মোল্লা এবং খুলনার দিঘলিয়ার জনি মোল্লা।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, মাদক মামলার আসামি সফিউল্লাহ খান গত বছরের ৬ নভেম্বর জামিন পান। জামিননামা আদেশ নিম্ন আদালতে ( গোপালগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত) পাঠানো হয়। এরপর আসামি শফিউল্লাহ খানের জামিননামা দাখিল করলে তা গ্রহণ করা হয়।
এ সময় আদালতের দৃষ্টিতে আসে যে, আসামির কাছ থেকে ২২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগ থাকলেও হাইকোর্টের আদেশে ২২ পিস ইয়াবা উদ্ধারের কথা উল্লেখ রয়েছে। এরপর গোপালগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিষয়টি হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অবহিত করেন। এরপর রেজিস্ট্রার জেনারেল বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জামিন দেয়া বিচারপতিদের অবহিত করেন।
জানা যায়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি তালিকাভুক্ত হয়। উক্ত তারিখে আইনজীবী ছিলেন মো. মোস্তফা কামাল। তিনি আদালতকে জানান যে, আলী ফকির এবং দাউদ মোল্লা তার জুনিয়র মো. কামরুল ইসলামকে ওই কাগজপত্র হস্তান্তর করেন।
উক্ত কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করে আদালত দেখতে পান, সই মুহুরি নকলগুলো যিনি টাইপ করেছেন তার নাম উল্লেখ নেই। কিন্তু তুলনা সহকারী তপন বিশ্বাস, প্রধান তুলনা কারক মো. জাহিদুল ইসলাম এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন মোল্লা তাদের সিল ও সই দিয়েছেন।
পরবর্তীতে নকলটি অগস্তা বাইন টাইপ করেছিলেন। উপরোক্ত জাল কাগজগুলো আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে তৈরি করে আদালতে দাখিল করে জামিন নিয়েছেন, যা দণ্ডনীয় অপরাধ। উক্ত জাল-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার জন্য আদালত নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে ৬০০ পিসের বদলে ৪০ পিস এবং ১০০০ পিসের বদলে ৩০ পিস ইয়াবা দেখিয়ে গোপালগঞ্জর কাশিয়ানি উপজেলার মো. আসলাম শেখ ও মো. রমজান মোল্লা গত ৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। গত ৪ ফেব্রয়ারি হাইকোর্টের নজরে আসে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারা জামিন নিয়েছেন। তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়া গেলে হাইকোর্ট জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।