কারাগারে নাটক ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে কারাবন্দীদের আত্মসংশোধনের কাজ শুরু হচ্ছে। কারাবন্দীদের মনস্তত্ত্বে ইতিবাচক উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে কারানাট্য। যার মাধ্যমে কারাগারে মঞ্চায়িত হবে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে নাটক। আর তাতে অভিনয়ও করবেন কারাবন্দীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসরাফিল শাহীনের তত্ত্বাবধানে এটি পরিচালিত হবে। তিন বছরব্যাপী এই গবেষণাধর্মী কাজের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদফতর অনুমতি দিয়েছে।
চলতি মাসের (নভেম্বর) শেষ সপ্তাহে এ প্রকল্পের কাজ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কারাগার (কেরানীগঞ্জ) দিয়ে শুরু হবে। এরপর আগামী বছর ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ৬৮টি কারাগারের অভ্যন্তরে কারাবন্দীদের অংশগ্রহণে মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটি মঞ্চায়িত হবে।
একইভাবে দেশের বিভিন্ন কারাগারে কারাবন্দীরা পর্যায়ক্রমে মঞ্চস্থ করবে বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ অবলম্বনে বিশেষ নাটক। এছাড়া জেল হত্যা দিবসে জাতীয় চার নেতার নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি কারাগারের অভ্যন্তরে কারাবন্দীদের দিয়ে পরিবেশন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ড. ইসরাফিল শাহীনের সাথে এই কর্মকাণ্ডে দেশের বরেণ্য নাট্যশিক্ষক, নির্দেশক, নাট্যকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে এম.ফিল-পিএইচ.ডি গবেষকবৃন্দ, শিল্প, সাহিত্যিক এবং অঞ্চলভিত্তিক নির্বাচিত সাংস্কৃতিক কর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন।
এ প্রসঙ্গে ড. ইসরাফিল শাহীন বলেন, ‘নাটক মঞ্চায়ন, সংগীত পরিবেশন, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য, গল্প বলা, খেলাধুলা ইত্যাদি পরিবেশনা বন্দীদের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং কারামুক্তির পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘কারাগারের বদ্ধ পরিবেশে দলগতভাবে নাট্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একজন অপরাধীর মানবিক গুণাবলীসমূহ বিকশিত হবে বলে আমি মনে করি। যার ফলে আত্ম-প্রতিফলন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে কারাবন্দী ব্যক্তি অনুধাবন করতে পারবে যে, সে কী ভুল করেছে এবং কীভাবে নিজেকে শোধরাতে পারবে।’
আসছে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন অথবা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এই গবেষণা প্রকল্প ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান।