সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনাকে পুরোপুরি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনতে চলেছে। এতে হয়রানি ছাড়াই জনগণের ভূমি বিষয়ক সেবা পাওয়া সহজ হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) দেওয়ার সিস্টেমসহ সরকারের সার্বিক ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম শতভাগ বাস্তবায়ন হবে।
ইতোমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভূমি বিষয়ক অনেক সেবা এখন সহজে মিলছে। তবে এখনও অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার সিস্টেম সারাদেশে কার্যকর করা যায়নি। এর মাধ্যমে রয়ে গেছে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে প্রচলিত পদ্ধতির ৬ সীমাবদ্ধতা।
যদিও ২০২১ সালের ১ জুলাইয়ের পর দেশে ভূমি ব্যবস্থাপনার কোনও কাজ অনলাইন সিস্টেমের বাইরে থাকবে না বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এরই মধ্যে ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উন্মুক্তকরণ, ভোগান্তিবিহীন ওয়ান-স্টপ সেবা, ভূমি প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, জবাবদিহিতা ও সময়াবদ্ধ কাঠামোর আওতায় আনার পাশাপাশি ভূমি সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমা, বিরোধ ও বিভিন্নমুখী জটিলতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যেই ভূমি মন্ত্রণালয় এটুআই’র সহায়তায় ই-নামজারি, অনলাইনে খতিয়ান, উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর, মৌজা ম্যাপ অনলাইনে প্রকাশ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। তবে এখনও ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনে বাস্তবায়ন হয়নি।
সরকার মনে করে, ছয় সীমাবদ্ধতার কারণে সাধারণ নাগরিকরা সরকারকে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে আগ্রহী হয় না। এগুলো হচ্ছে—
১। নাগরিকের ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান পদ্ধতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকা।
২। ভূমির মালিক অন্যত্র অবস্থান করার কারণে কর প্রদান করতে না পারা।
৩। ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ দেওয়া অর্থের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সাধারণ জনগণ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে তা পরিশোধে আগ্রহী হয় না।
৪। করের পরিমাণ তুলনামূলক কম হওয়ায় পরিশোধে যে সময় ও খরচ হয় তা বিবেচনা করে অনেকে কর পরিশোধে আগ্রহী হয় না। ৫। প্রচলিত নিয়মে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সঠিক দাবি নির্ধারণপূর্বক ভূমি উন্নয়ন কর আদায় ও ব্যবস্থাপনা কষ্টসাধ্য বিষয় বলেও অনেকে কর দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং
৬। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব।
এসব জটিলতা দূর করতে সংক্ষিপ্ত আকারে দেশের ৯ জেলার ৯ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারের পাইলটিং-এর প্রথম পর্যায় নির্বাচিত করা হয়েছে।
ইউনিয়নগুলো হচ্ছে—গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া উপজেলার পাটগাতি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ঢাকার সাভার উপজেলার বাগধনিয়া ইউনিয়ন, মানিকগঞ্জের সদর পৌর ভূমি অফিস, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার খাসখামা ইউনিয়ন, কিশোরগঞ্জ জেলার সদর পৌর ভূমি অফিস, নারায়ণগঞ্জের সদর ইউনিয়ন, জামালপুরে সদর পৌর ভূমি অফিস, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ফরিদগঞ্জ পৌর ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও একই জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার মতলব পৌর ভূমি অফিস।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারের আওতায় নাগরিকরা যেসব সুবিধা পাবেন সেগুলো হচ্ছে— নাগরিকরা যেকোনও সময় যেকোনও স্থান থেকে ভূমি উন্নয়ন কর সংক্রান্ত তথ্য দেখতে পারবেন এবং ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারবেন। অনলাইন পেমেন্ট করার পর অনলাইনেই দাখিলা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। অনলাইন পদ্ধতিতে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে নাগরিকের যাতায়াতের সময় ও খরচ দুটোই বাঁচবে। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সঠিক দাবি নির্ধারণপূর্বক ভূমি উন্নয়ন কর আদায় ও ব্যবস্থাপনা সহজ হবে এবং এর ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, দুর্নীতি প্রতিরোধে নাগরিক সেবা অনলাইনভিত্তিক করার বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের ভূমি অফিসগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেবা প্রদান আরও গতিশীল করা এবং তাদের কার্যক্রম অনলাইনে মনিটরিং করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সেবা প্রদানের মানসিকতা প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য পুরস্কার ও প্রণোদনা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, সরকারের অঙ্গীকার এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ভিশন ২০২১ অর্জনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের ভূমি বিষয়ক সেবা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এটুআই-এর সহায়তায় ই-নামজারি, অনলাইনে খতিয়ান, উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর, মৌজা ম্যাপ অনলাইনে প্রকাশ অন্যতম। আশা করছি ২০২১ সালের ৩০ জুনের পর ভূমি সংক্রান্ত কোনও কাজ অনলাইনের বাইরে হবে না। এ লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতর কাজ করছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ভূমি সংস্কার বোর্ড ১০টি মডিউল সমৃদ্ধ (ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) নামের একটি সফটওয়্যার তৈরি করছে।
মন্ত্রী জানান, এই সিস্টেমের মাধ্যমে ৪৮৮টি উপজেলা ভূমি অফিসে (পার্বত্য ৩টি জেলা ছাড়া) শতভাগ ই-নামজারি চালু রয়েছে এবং এসব উপজেলা ভূমি অফিসে ম্যানুয়ালি কোনও নামজারি সম্পাদন হচ্ছে না। ই-নামজারি সিস্টেমের মাধ্যমে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ২৯ লাখ ২৯ হাজার ৮২৯টি অনলাইন নামজারির আবেদন পাওয়া গেছে এবং ২৪ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০টি নামজারি নিষ্পত্তি হয়েছে।
উল্লেখ্য, বছরে গড়ে সারাদেশের ৫১১টি উপজেলার ভূমি অফিসের অধীন ৩ হাজার ৪৬২টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি ভূমি উন্নয়ন কর আদায়যোগ্য হোল্ডিং থেকে প্রায় ৬০৬ কোটি টাকা কর আদায় করা হয়। যেখানে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ এই সেবা গ্রহণ করছে। সূত্র- বাংলাট্রিবিউন