গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের যে বর্ণনা আছে তা সকলের জন্য ভয়াবহ এবং পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তবে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার তথা বেঁচে থাকার অধিকার খর্ব করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
এজন্য বায়ুদূষণ বন্ধে হাইকোর্ট ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে ৩০ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আমাতুল করিম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে অ্যাডভোকেট তৌফিক ইনাম টিপু ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফরিদা ইয়াসমিন।
ঢাকা শহর ও আশেপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ বন্ধে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’-এর করা এক রিট আবেদনে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি ৯ দফা নির্দেশনা জারি করে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো হলো-
১. ঢাকা শহরে মাটি/বালি/বর্জ্য পরিবহনকৃত ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা,
২. নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি/বালি/সিমেন্ট/পাথর/নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা,
৩. সিটি করপোরেশন রাস্তায় পানি ছিটাবে,
৪. রাস্তা/কালভার্ট/কার্পেটিং/খোড়াখুড়ি কাজে টেন্ডারের শর্ত পালন নিশ্চিত করা,
৫. কালো ধোয়া নিঃসরণকৃত গাড়ি জব্দ করা,
৬. সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল সময়সীমা নির্ধারণ ও উত্তীর্ণ হওয়া সময়সীমার পরে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা,
৭. অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করা,
৮. পরিবেশ লাইসেন্স ব্যাতীত চলমান সকল টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা এবং
৯. মার্কেট/দোকানগুলিতে প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগ ভরে রাখা এবং অপসারণ নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনকে পদক্ষেপ নেয়া।
আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, এগুলো বাস্তবায়নে গত ফেব্রুয়ারিতে পদক্ষেপ নেয়া শুরু হলে বায়ুদূষণ কিছুটা কমতে থাকে। কিন্তু বর্তমানে ঢাকা শহর আবার সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের শহর হওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব সংবাদ যুক্ত করে বায়ুদূষণ বন্ধে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে ১৫ নভেম্বর আবেদন করা হয়। এ আবেদনের ওপর ১৭ ও ২৩ নভেম্বর শুনানি হয়।
মনজিল মোরসেদ আরও জানান, আদেশে আদালত বলেন- আবেদনকারীর আবেদনের সঙ্গে যুক্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের যে বর্ণনা আছে তা সকলের জন্য ভয়াবহ এবং পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তবে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার তথা বেঁচে থাকার অধিকার খর্ব করতে পারে।
আদালত বিবাদীদেরকে ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন এবং আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বিবাদীদেরকে পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।