বরিশালে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যদের হাতে আটকের তিনদিন পর আইন শিক্ষানবিশ রেজাউল করিম রেজার (৩০) মৃত্যুর ঘটনায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ এর (ক) ধারার ক্ষমতাবলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এই আবেদন করেছেন বলে সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আইনজীবী নিজে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এটি রিট নয়। আবেদনটি হলো, আইন শিক্ষানবিশকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেটির বিষয়ে শুনানি নিয়ে মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু হত্যার অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সেটির তদন্তভার আবার পুলিশের ওপরেই দেয়া হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করলে সঠিক তথ্য উঠে আসা ও ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে, তাই আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ এর (ক) ধারার ক্ষমতাবলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে এক সপ্তাহ আগে হাইকোর্টে আবেদন করেছি।’
এর আগে রেজাউল করিমের মৃত্যুর ঘটনায় গত ৫ জানুয়ারি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। বরিশাল মেট্রোপলিটন আদালতে রেজাউলের বাবা ইউনুস মুনশি মামলাটি করেন। মামলায় নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপপরিদর্শক মহিউদ্দিন আহমেদকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আরও দুজনকে আসামি করা হলেও তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
মামলা দায়েরের পর মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আনিসুর রহমান বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়, ২৯ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে বরিশাল নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে রেজাউল করিমকে আটক করেন এসআই মহিউদ্দিন আহমেদ।
রেজাউলের কাছে মহিউদ্দিন দুজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম জানতে চান। রেজাউল কিছু জানেন না বললে তার পকেটে হাত দিয়ে নেশাজাতীয় ইনজেকশন পাওয়ার দাবি করে তাকে আটক করে নিয়ে যান।
এরপর রেজাউলের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে আহত রেজাউলকে থানার মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ জানুয়ারি বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২ জানুয়ারি রাতে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের কারণেই ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলে ইউনুস মুনশি মামলায় অভিযোগ করেন।