রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ধ্বংস করে দেওয়াই ছিল দীপন হত্যা মামলার আসামিদের একমাত্র উদ্দেশ্য। এই হত্যা মামলায় রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে এই কথা বলেন আদালত। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান মামলার আসামি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এটিবি) আট সদস্যের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করার কারণে জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ও প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এ সদস্যদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ব্লগার, লেখক, প্রকাশকদের হত্যা করে মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া। মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা। আর এসবের উদ্দেশ্য হলো মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ করে দেওয়া।’
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেন, ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের জননিরাপত্তা বিপন্ন করা, জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি ও সরকারকে দেশের গণতান্ত্রিক ও উন্নয়নমূলক কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা।’
দুপুর ১২টা ২ মিনিটে ৫৩ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। রায় শুনতে দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমানসহ আরও দুই স্বজন আদালতে হাজির হন। এর আগে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে আদালতের হাজতখানা থেকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আসামিদের হাজির করা হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মেজর (বরখাস্তকৃত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুর সবুর সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে স্বাদ, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার এবং শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের। এদের মধ্যে প্রথম দু’জন পলাতক রয়েছেন।
গত ২৪ জানুয়ারি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত। মামলায় ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের নিজ অফিসে জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সেদিন বিকালে তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি দক্ষিণের সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান। চার্জশিটে আট জনকে অভিযুক্ত ও ১১ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবুর রহমান নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।