ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দি মুশতাকের কারাগারে মৃত্যু
ফাইল-ছবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দি মুশতাকের কারাগারে মৃত্যু

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় বিচারের মুখে থাকা মুশতাক আহমেদ কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেছেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন ওই কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন।

কী কারণে ৫৩ বছর বয়সী মুশতাকের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

কারা কর্মকর্তা গিয়াস গণমাধ্যমকে বলেন, “রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে হঠাৎ তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। দ্রুত তাকে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেলে নেওয়া হলে ডাক্তার মৃত বলে জানান।”

নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার থানার ছোট বালাপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মুশতাক বাংলাদেশে কুমির চাষের অন্যতম উদ্যোক্তা।

মুশতাক যুক্তরাজ্যে পড়াশোনারে সুযোগে ফ্রান্সের বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখে দেশে ফেরার পর এক যুগ আগে ময়মনসিংহের ভালুকায় দেশের প্রথম কুমির খামার করতে নেমেছিলেন। বাংলাদেশ থেকে কুমির রপ্তানি তার হাত দিয়েই শুরু হয়। এ বিষয়ে একটি বইও লিখেছেন তিনি।

ঢাকার লালমাটিয়ার বাসিন্দা মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন। সেটি কেন্দ্র করেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় পড়েন তিনি।

করোনা ভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে গত বছরের ৬ মে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে। তার সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

পরদিন ‘সরকার বিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই জামশেদুল ইসলাম তখন বলেছিলেন, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ নামের ফেইসবুক একাউন্টে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা মূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। আর মুশতাক তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেন।

র‌্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিকের করা এই মামলায় রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠন দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে পরে এ দুজন জামিনে মুক্তি পান।

মুশতাক ও কিশোরের পক্ষে বেশ কয়েকবার জামিনের আবেদন হলেও তা আদালতে নামঞ্জুর হয়।

মুশতাককে গ্রেপ্তারের পর পাঠানো হয়েছিল ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে; সেখানে থেকে ওই বছরের ২৪ অগাস্ট তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।

মুশতাকের মৃত্যুর খবরে মিনহাজ মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, “আমার ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের বন্ধু। আমরা একই মামলার আসামি ছিলাম। জেলে প্রতিদিন সকালে আমাদের দেখা হত। আমরা একসাথে চা খেতাম, সুখ দুঃখের গল্প করতাম। আজকে তার মৃত্যুর খবরে আমার বুক ভেঙে গেছে।”

এই মামলায় আসামির তালিকায় মুশতাক, কিশোর, দিদার, মিনহাজের সঙ্গে আরও ছিলেন নেত্র নিউজের সম্পাদক সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিল, জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম, হাঙ্গেরি প্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (আল জাজিরার প্রতিবেদনের স্যামি), আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখারও ছিলেন।

তবে তদন্তের পর পুলিশ শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে এই মাসের শুরুতে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। বাকি আট আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

র‌্যাবের করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ফেইসবুক ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনা ভাইরাস মহামারী সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো, অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে কিশোর ও মুশতাকের সঙ্গে তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন সায়ের খান, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের ‘ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ’ পাওয়ার দাবিও করেছিল র‌্যাব।