হিন্দু বিধবার সম্পত্তিতে তাঁর বিবাহ-পূর্ব পরিবারের সদস্যদেরও অধিকার রয়েছে। ফলে ওই সম্পত্তি তাঁদের মধ্যেও বণ্টন করায় কোনও বাধা নেই। পাশাপাশি, এ বার থেকে আইনি পরিভাষায় বিবাহ-পূর্ব পরিবারের সদস্যদের ‘অপরিচিত’ বলে অভিহিত করা যাবে না। বৃহস্পতিবার এই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট।
হিন্দু উত্তরাধিকার আইনেই ১৫(১)(ডি)-র ধারা উল্লেখ করে দেশের শীর্ষ আদালতের বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি আর সুভাষ রেড্ডির বেঞ্চ এই রায়দান করেছে। বেঞ্চ জানিয়েছে, হিন্দু বিধবার বাপের বাড়ির উত্তরাধিকারীরাও তাঁর সম্পত্তির ভাগীদার হওয়ার যোগ্য। বেঞ্চের বক্তব্য, ‘‘ওই ধারার পর্যলোচনা করে বোঝা যাচ্ছে যে হিন্দু বিধবার বাবা-মায়ের উত্তরাধিকারীরা তাঁর সম্পত্তি পেতে পারেন। যেহেতু ওই মহিলার বাবা-মায়ের উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তির অধিকারী বলা যায়, সেহেতু তাঁদের আর ‘অপরিচিত’ আখ্যা দেওয়া যায় না। অর্থাৎ, তাঁরা ওই মহিলার পরিবারের সদস্য নন, এমনটাও বলা যায় না।’’
শীর্ষ আদালতের মতে, হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনও মৃতপ্রায় হিন্দু মহিলা দলিল বা স্বেচ্ছাপত্র করে না গেলে তাঁর সম্পত্তি বণ্টন করে দেওয়া হবে ওই আইনের ১৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী। ১৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, প্রথমত, মহিলার স্বামীর থেকে সন্তানের মধ্যে ওই সম্পত্তি ভাগ করা যাবে। দ্বিতীয়ত, স্বামীর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে তা বণ্টন করা হবে। তৃতীয়ত, মা-বাবার মধ্যে তা ভাগ করা যেতে পারে। চতুর্থত, বাবার উত্তরাধিকারীরা তার যোগ্য। পঞ্চমত, মায়ের উত্তরাধিকারীও তা ভোগ করতে পারবেন।
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন নিয়ে দিল্লি হাইকোর্ট এবং দায়রা আদালতে একটি মামলায় এ বিষয়ে দেওয়া রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়গুলিতে এক নিঃসন্তান বিধবার সম্পত্তির অধিকারী হয়েছিলেন তাঁর ভাইয়ের ছেলে। তা নিয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা উঠেছিল। ওই মামলায় মহিলার স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী হন তিনি। পারিবারিক আদালতে তাঁর স্বামীর সম্পত্তি ভাইয়ের ছেলেকে হস্তান্তর করে দেন তিনি। তবে সেই সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন মহিলার স্বামীর ভাইয়ের সন্তানেরা। এর পরই তা নিয়ে মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায় মহিলার পক্ষেই গিয়েছে।
সূত্র: ভারতের দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা