গাজীপুরের আলামীন হত্যার ময়না তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ এবং শাহবাগ থানা পুলিশের গাফিলতির বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি তদন্ত করতে ডিএমসিএইচের পরিচালক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ(ডিএমপি) কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আদালত ময়না তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি করা এবং মামলায় তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে এ আদেশ দেন।
আদালত বলেন, আমরা আদেশ দিলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু আদেশ না দিয়েও পারি না। আমাদেরতো কাজ করতে হয়। আদালত বলেন, যে যেখানে দায়িত্বরত আছেন, তিনি যদি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করেন তবে তো মুশকিল। আদালত বলেন, এ মামলায় ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর ৪/৫ মাস পর রিসিভ দেখাচ্ছে। এখানে গাফিলতি আছে, অনিয়ম হয়েছে। এটা তদন্ত হওয়া দরকার।
আলামীন হত্যা মামলার আসামি হাবিবুর রহমানের জামিন আবেদনের ওপর শুনানিকালে এ আদেশ দেন আদালত। আদালত জামিন আবেদন খারিজ করে পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দেন। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আরাফাত কাউসার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর আলামীনকে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন নিহতের বড়ভাই বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা করেন। আর আলামীনের ময়না তদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ডিএমসিএইচ)। আর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। এরইমধ্যে মামলার আসামি হাবিবুর রহমান হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। এ জামিন আবেদনের ওপর শুনানিকালে গত দেড়বছরেও মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন। এ নির্দেশে তদন্ত কর্মকর্তা গত ১৬ মার্চ হাইকোর্টে হাজির হয়ে আদালতকে জানান, ময়না তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে ডিএমসিএইচের ফরেনসিক বিভাগে তিনবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদন না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত এই প্রতিবেদনের জন্য গাজীপুরের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করেন গত ২৪ জানুয়ারি। এরপরও ওই প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় হাইকোর্ট ডিএমসিএইচের ফরেনসিক বিভাগের প্রধানকে তলব করেন। এ আদেশে গতকাল নির্ধারিত দিনে সংশ্লিস্ট চিকিৎসক ডা. হোসেল মাহমুদ হাইকোর্টে হাজির হয়ে জানান, তিনি গতবছর ৯ নভেম্বর ময়না তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী শাহবাগ থানা পুলিশের বরাদ দিয়ে আদালতকে জানান, শাহবাগ থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন যে তারা গত ২৪ মার্চ প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ফরেনসিক বিভাগ ও শাহবাগ থানায় এটা পাঠানো ও গ্রহণ করা নিয়ে গন্ডগোল আছে। ডাক্তার ও শাহবাগ থানায় গাফিলতি রয়েছে।
এসময় আদালত মামলার নথি পর্যবেক্ষন করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, আমরা এর আগে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর একটি কপি থানায়, আরেকটি কপি সংশ্লিস্ট আদালতে পাঠাতে আদেশ দিয়েছিলাম। এই আদেশ সংশ্লিস্ট সবখানে পাঠাতে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পুলিশের আইজিকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তা আজও কার্যকর হয়নি। এটা হলে এরকম ঝামেলা হতো না। এরপর আদালত বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।
সূত্র : কালের কণ্ঠ