করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কার মহামারী সামাল দিতে সরকারের পক্ষ থেকে কী ঘোষণা আসে, তা দেখে দেশের আদালত কীভাবে চলবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রোববার সকালে আপিল বিভাগে মামলা শুনানির ফাঁকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “কোর্ট কীভাবে চলবে আজকে আমরা ডিসাইড করব। সরকার কী নোটিস দেয়… আমরা আমাদের মতন চালাব, চললেও তো বর্তমানে যে অবস্থা… ঢাকা কোর্টে হাজার হাজার লোক। আমি এগুলোর সব ভিডিও এনেছি। সুতরাং আমরা এখন কী করব তা আগে ডিসাইড করব।”
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এ সময় বলেন, “গতকাল আমাদের তিনজন মেম্বার মারা গেছেন।”
প্রধান বিচাপতি বলেন, “একজনকে চিনি।”
প্রবীর নিয়োগী বলেন, “তানভীর পারভেজকে তো সবাই চেনেন। আরও দুজন মারা গেছেন, একজন হলেন একরামুল হক চৌধুরী। আরেকজন আহসান উদ্দিন সরদার, উনি মারা গেছের বরিশালে। আমাদের বারের মেম্বার।”
এ সময় বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বলেন, একরামুল হক চৌধুরী জেলা জজ ছিলেন।
তখন প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের মৃত্যুতে শোকবাণী দিতে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
প্রবীর নিয়োগী বলেন, “আমাদের ফিফটি পার্সেন্টের বেশি ল’ইয়ারের কিন্তু বাসা থেকে শুনানি করার মত লজিস্টিকস নাই। এগুলা বিবেচনা করে আর সরকারি কী করে তা দেখে সিদ্ধান্ত দেন মাইলর্ড। এক সপ্তাহের জন্য আপাতত…।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনাদের যদি না থাকে… সাংবিধানিক কোর্ট বন্ধ থাকতে পারে না। ভারতেও বন্ধ রাখে নাই। এখানে কোর্টে আসতে দিলে হাজার হাজার লোক আসবে।”
প্রবীর নিয়োগী বলেন, “সাংবিধানিক ইস্যুতে আপনাদের তো ডিসিশন দিতেই হবে। যেটা আসবে কোর্টের সামনে সেটা তো দিতেই হবে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একেবারে প্রথম থেকেই ওইটার (ভার্চুয়াল) দ্বারা উনারা বজায় রেখেছেন। এমনকি হাই কোর্টও বজায় রেখেছেন।”
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কায় দৈনিক শনাক্ত রোগী পৌঁছেছে নতুন উচ্চতায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘লকডাউনের’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার থেকে সারা দেশে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।”
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত বছর ২৩ মার্চ প্রথমবার ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। শুরুতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘ছুটি’ ঘোষণা হলেও পরে তার মেয়াদ বাড়ে কয়েক দফা।
সে সময় সরকারের সাধারণ ছুটির সাথে সমন্বয় করে দেশের সব আদালতেও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। কার্যত বন্ধ হয়ে যায় দেশের বিচার ব্যবস্থা।
পরে সুপ্রিম কোর্টের অনুরোধে মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্য বা যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় দিতে পক্ষদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আদালতকে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা দিয়ে গত বছর ৯ মে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
এরপর ১০ মে সুপ্রিম কোর্ট ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘প্র্যাকটিস’ নির্দেশনা জারি করে।
সে নির্দেশনা মত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ দেশের সব বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
পরবর্তীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি কমতে থাকলে প্রথমে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শারীরীক উপস্থিতিতে নিম্ন আদালত চালু করা হয়। এক পর্যায়ে শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে হাই কোর্টেও চালু করা হয় কয়েকটি বেঞ্চ। পাশাপাশি ভার্চুয়াল কোর্টও চালু থাকে।
কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চ এবং চেম্বার আদালত এখন পর্যন্ত ভার্চুয়ালিই চলছে।