দেশের উচ্চ আদালতের রায় যথাযথভাবে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা না হওয়া কে দুঃখজনক উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, রাষ্ট্রের সকলের দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করা।
শনিবার (১০এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের দু’জন বিচারপতির লেখা দু’টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের প্রশ্নের জের টেনে তিনি এমন কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা কন্টেম্পট (আদালত অবমাননার রুল জারি) করে হয়রান। কন্টেম্পট করেও পুরোপুরি রায় কার্যকর যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। এটা এখন দুঃখের বিষয়।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘রায় কার্যকরে রুল দিতে দিতে আমরা হয়রান। এর জন্য কেন বারবার রুল জারি করতে হবে? আশা করি- নির্বাহী বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রত্যেকটি রায় বাস্তবায়িত হবে।’
ভার্চুয়ালি আয়োজিত এ আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ড. মুনতাসীর মামুন একটা কথা বলেছেন, আমাদের রায় কার্যকর হচ্ছে না, তাই একটা সেল কারার জন্য। আমি বলতে চাই- আমাদের সংবিধানে কিন্তু ১১২ অনুচ্ছেদে বলা আছে, দেশের নির্বাহী বিভাগসহ সবাই সুপ্রিম কোর্টের সহযোগিতায় কাজ করবে।’
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের সবার দায়িত্ব হলো সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করা। ড. মুনতাসীর মামুন যে বললেন, সেল করে রায় কার্যকর করা। সেটা করা যাবে না। আমরা কন্টেম্পট (আদালত অবমাননার জন্য দোষী) করতে পারি। আবার কন্টেম্পট করে করেও আমরা হয়রান। কারণ কন্টেম্পট করেও কিন্তু আমাদের রায় যেভাবে যথাযথভবে কার্যকর হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। এটা দুঃখের বিষয়। তবে আমি বলতে চাই- আমাদের যেসব রায় যাচ্ছে, আশা করি নির্বাহী বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রত্যেকটা রায় বাস্তবায়িত হবে।’
প্রধান বিচারপতির বক্তৃতার আগে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘গত এক দশকে জনস্বার্থে হাইকোর্ট কিছু যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। আমি বিচারকদের কাছে একটা প্রশ্ন রাখতে চাই, আপনাদের রায়গুলো কার্যকর হয় কি-না? বা এটা কার্যকর হয় কি-না সেটা দেখার দায়িত্ব কি আপনাদের ওপর পড়ে? এখানে মাননীয় প্রধান বিচারপতি আছেন, আমি মনে করি- একজন বিচারপতির নিয়ন্ত্রণে একটা সেল থাকা দরকার। জনস্বার্থের যে রায়গুলো হচ্ছে, তা পালিত হয় কি-না সেটা রিপোর্টিংয়ের জন্য। এটা একটা দুঃখের কারণ, কেননা আপনারা জনস্বার্থে যে রায় দিচ্ছেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো মানা হচ্ছে না।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, লেখক-প্রকাশক ও গবেষক মফিদুল হক, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, সাহিত্যিক আনিসুল হক ও বই দুটির প্রকাশক মাওলা ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আহমেদ মাহমুদুল হক। এতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, আইনজীবী ও সাংবাদিকরা যুক্ত ছিলেন।