নিয়মিত আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষা নিতে না পারায় বারবার আলোচনা-সমালোচনার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ পরীক্ষাটি নিয়েও সৃষ্টি হয়েছিল বিশৃঙ্খল পরিবেশ। তাই দুই ধাপে লিখিত পরীক্ষা নিতে বাধ্য হয় আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী ও নিবন্ধনকারী এই সংস্থা। জট কমিয়ে আনতে সে পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত আসতে পারে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।
২০১০ সাল পর্যন্ত বছরে দুটি পরীক্ষা নিতো বার কাউন্সিল। তবে ২০১১ সালের পর থেকে আইনজীবীদের অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষা তিন ধাপে (নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত ও মৌখিক) অনুষ্ঠানের বিধান করা হয়। তবে পিছিয়ে পড়ে বছরে দুটি করে পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম। ফলে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার আইন শিক্ষার্থীর জট তৈরি হয়।
এদিকে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রায় তিন বছর পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রকাশিত হয় ফলাফল। তবে একই বছরের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তাতে থমকে যায় জনজীবন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি কিছু সামলে ওঠার পর নৈর্ব্যক্তিকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে আইনজীবী সনদের দাবি জানান। করোনা বিবেচনায় সেসব দাবি আমলে না নিয়ে একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর ১২ হাজার ৮৭৮ জন শিক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
করোনার মাঝেও পরীক্ষা এবং প্রশ্নপত্র কঠিন করার অভিযোগে রাজধানীর ৯টি কেন্দ্রের পাঁচটিতে বিশৃঙ্খলা, হল ভাঙচুর ও উত্তরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। পরে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ক্ষতিগ্রস্থ কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন এবং এর সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দেন। এরপর ঘটনায় দায়ের হওয়া একাধিক মামলায় ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
এদিকে বিশঙ্খলতা সৃষ্টি হওয়া পাঁচটি কেন্দ্রের চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি পুনরায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
সম্প্রতি ১৯ ডিসেম্বরের পরীক্ষায় বিশৃঙ্খলার ঘটনায় জড়িত বা উসকানি দেওয়ার অভিযোগ তুলে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বার কাউন্সিল সচিব রফিকুল ইসলাম। সেসব নোটিশের জবাবে বার কাউন্সিলের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট নয় বলেও জবাব দিয়েছেন অনেকে।
নোটিশের পরবর্তী কার্যকারিতা কী হবে তা জানতে চাওয়া হলে বার কাউন্সিলের সচিব রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নোটিশ ও এর জবাবগুলো বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির কাছে পাঠানো হবে। তারপর তারা এ বিষয়ে আলোচনা করে যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা সে অনুয়ায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও এনরোলমেন্ট কমিটির অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশৃঙ্খলতায় জড়িতদের বিষয়ে আমরা আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের বিষয়ে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘দ্রুত ফলাফল প্রকাশের জন্য এবার বিচারকদের বাইরে খাতা দেখানো হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে ফলাফল প্রকাশ করতে পারবো বলে আশা করছি। তবে এই মাসেই যে ফলাফল প্রকাশিত হবে এটা কিন্তু নির্দিষ্টভাবে ধরা যাবে না। এ মাসে ফলাফল দিতে পারবো এটা আমরা প্রত্যাশা করছি। আবার ফলাফলের সময় পেছাতেও পারে।’