কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে অভুক্ত থেকে ঘোড়ার মৃত্যুসহ নানা কারণ জানতে চেয়ে দুই সচিবসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ১৩ জন কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গতকাল রোববার যৌথভাবে নোটিশটি দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) ও পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (পাউ)।
আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তা না হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নোটিশে সই করেন বেলার আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর।
নোটিশ পাঠানোর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে ইয়েসের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন গনমণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল বিকেলে ডাকে করে আইনি নোটিশটি পাঠানো হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
যাঁদের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তাঁরা হলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সভাপতি, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
নোটিশে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে আসেন বহু পর্যটক। বিনোদনের অংশ হিসেবে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক ঘোড়ায় চড়েন। এই কাজে ব্যবহার করা হয় দুই শতাধিক ঘোড়া। করোনা মহামারিতে পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কক্সবাজারে বছরব্যাপী আর্থিক জোগানের উৎস ঘোড়াগুলো খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছে। ঘোড়ার মালিক ও তত্ত্বাবধায়কেরা ঘোড়ার খাদ্য জোগান না দিয়ে ঘোড়াগুলোকে রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছেন।
দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কোনো প্রাণীকে প্রয়োজনীয় খাদ্য না দেওয়া এবং অসুস্থ অবস্থায় লোকালয়ে মুক্ত করে দেওয়া প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং তা দণ্ডনীয় অপরাধ।
তাই কক্সবাজারে থাকা ঘোড়া, ঘোড়ার মালিক ও তত্ত্বাবধায়কদের তালিকা বানিয়ে ঘোড়াগুলোর জন্য নিরাপদ আবাসন ও খাদ্য নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয় নোটিশে। নিষ্ঠুর আচরণ করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবির পাশাপাশি ঘোড়াগুলোর জন্য চারণভূমি সংরক্ষণের কথা বলা হয় নোটিশে।
২৮ মে গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, ‘খাবার জুটছে না কক্সবাজার সৈকতের ঘোড়াগুলোর, এক মাসে ২১টির মৃত্যু’ এবং ৩০ মে ‘কক্সবাজার সৈকতের অভুক্ত ৫৫ ঘোড়ার দায়িত্ব নিল এসিআই মোটরস’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ঘোড়া মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মার্চের প্রথম লকডাউনে অভুক্ত থেকে ২০টি এবং গত এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফার লকডাউনে আরও ১০টিসহ মোট ৩০টি ঘোড়ার মৃত্যু হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে মারা গেছে আরও ১০ থেকে ১৫টি ঘোড়া। কিন্তু কোনোটির ময়নাতদন্ত হয়নি।