মনজিলা সুলতানা:
আইনের ছাত্র তথা হবু আইনজীবীদের সব থেকে আকাংখিত পরীক্ষা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা। যারা উক্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন এবং যারা অদূর ভবিষ্যতে এডভোকেট হতে চান তাদের জন্য এই পরীক্ষাই একমাত্র পরীক্ষা যার মাধ্যমে আইনজীবী তালিকাভুক্ত হয়ে আইন ব্যবসা পরিচালনা করার অনুমতি মেলে। বার কাউন্সিলের কঠিন এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষায় যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে, শিক্ষার্থীরা পাশ করার পর যেই ভাইভা অনুষ্ঠিত হবে সেটা একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। যদি বিগত কয়েকবারের ভাইভা পরীক্ষার চিত্র লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অতি সামান্য একটি অংশ ভাইভায় বাদ যায়। আর লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার পর যারা ভাইভায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হয়, তাদেরকে আর এমসিকিউ বা লিখিত পরীক্ষা দিতে হয় না পরবর্তী আরো দুইটি ভাইবা তারা সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে। আগামী ৩১শে আগষ্ট থেকে এবারের ভাইভা পরীক্ষা শুরু হবে বলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নোটিশ প্রদান করেছে। সেই অনুযায়ী হাতে সময় বেশি নেই। এর মাঝে ভাইভার প্রস্তুতি এবং কেইস ডায়েরীর কাজ সম্পুর্ণ করতে হবে। সল্প সময়ে কিছু কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমেই আপনি আপনার লক্ষে পৌঁছে যেতে পারবেন। আজ আলোচনা করবো বার কাউন্সিল ভাইভা পরীক্ষার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
এই সময়ের প্রস্তুতি –
যেহেতু হাতে সময় তেমন বেশী নেই এই সময়ে নতুন করে পড়ার কিছু নেই। তবে অবশ্যই আইনের মুল জিনিস গুলো সঠিক ভাবে আয়ত্ত করে নিতে হবে। আইনের কিছু বেসিক জিনিস থাকে যা একজন আইনজীবী হিসেবে জানা আবশ্যক। এই মুহুর্তে আপনার কঠিন কিছু নয় বরং সহজ জিনিসগুলো কঠিনভাবে আয়ত্ত করে নিতে হবে। কথায় আছে “কঠিন প্রস্তুতি সহজ যুদ্ধ” অর্থাৎ আপনি যত কঠিন প্রস্তুতি নিবেন আপনার যুদ্ধ আপনার কাছে সহজ মনে হবে।
ভাইভায় কি দেখা হয়?
যেহেতু আইন পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আনুষ্ঠানিক পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন সেহেতু এই পেশায় আপনি থাকবেন কিনা, আদালতে আসা যাওয়া আছে কিনা তা দেখা হবে। ব্যক্তিত্ব যাচাই অথবা ‘আপনি আইনজীবী হতে চান কারন জানতে চাইবে। আপনি আইনজীবী হতে চান কেন?’ অথবা ‘আপনি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হলে প্র্যাকটিস করবেন কি?’ এই দুইটি কমন প্রশ্ন ভাইভাবোর্ডে জিজ্ঞেস করা হয়ে থাকে। এই প্রশ্নের উত্তর যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস সহকারে দিতে হবে। বলা বাহুল্য, উত্তরটা পজিটিভ হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাছাড়া ভাইভা বোর্ড এ আপনার কমিউনিকেশন স্কিল যাচাই করবে। একজন মক্কেলের সমস্যা, আইনের কোন শাখায় তা ফেলে সেই বিচার প্রার্থীকে আইন অধিকার নিশ্চিত করতে সাহায্য করবেন তার বড় মাধ্যমই হলো কমিউনিকেশন। এবং ভাইভা পরীক্ষা মূলত আপনার কমিউনিকেশন স্কিল যাচাই করার একটা মাধ্যম। কিন্তু এই কমিউনিকেশন স্কিল জিনিসটা কি? ধরুন, আপনাকে জিজ্ঞেস করলো যে, আপনার সিনিয়র আইনজীবী কোন সাইডে প্রেক্টিস করেন?আপনি সরাসরি তার উত্তর না দিয়ে হাবিজাবি উত্তর দেয়া শুরু করলেন, বললেন তিনি একজন ভালো মানুষ, তার বাড়ি অমুক জেলায় ইত্যাদি। অর্থাৎ আপনাকে জিজ্ঞেস করলো একটা, উত্তর দিলেন অন্য, এবং সঠিক উত্তর দিতে সময় নিচ্ছেন । অর্থাৎ যা প্রশ্ন করা হয়েছে তার টু দ্য পয়েন্টে উত্তর দিতে হবে। মুলত এই কমিউনিকেশন স্কিলটি ভাইভা বোর্ডে কিন্তু লক্ষ্য রাখা হয়। আদালতে আপনি একজন বিচারকের সাথে কমিউনিকেশন করতে পারবেন কিনা, সেটা চেক করাটা তাদের জন্য আবশ্যক। ফলে আপনাকে জিজ্ঞাসিত যেকোনো প্রশ্নের টু দ্য পয়েন্টে উত্তরটা দিতে হবে। গুড কমিউনিকেশন স্কিলের প্রকাশ ঘটাতে হবে।
ভাইবার প্রশ্নগুলো কেমন হতে পারে?
ভাইভায় কয়েক ক্যাটেগরির প্রশ্ন সাধারণত করা হয়ে থাকে।
১. ব্যক্তিত্ব যাচাই; ব্যক্তির নিজের এবং সিনিয়র সম্পর্কে পড়াশোনা, সিনিয়র সংক্রান্ত প্রশ্নাদি।
২. আইন সম্পর্কে প্রশ্নাবলী; দেওয়ানী এবং ফৌজদারী ও অন্যান্য।
৩. কোর্ট সম্পর্কে, নিজের বার এসোসিয়েশন ইত্যাদি।
৪. বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সম্পর্কিত।
৫. অন্যান্য বিষয়াদি এবং সাম্প্রতিক প্রশ্ন।
ব্যক্তিত্ব যাচাই; ব্যক্তির নিজের এবং সিনিয়র সম্পর্ক, পপরীক্ষার্থীর পড়াশোনা, সিনিয়র সংক্রান্ত প্রশ্নাদি –
সাধরণত পরিচয় পর্বের মাধ্যমেই ভাইভা বোর্ডের প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরু হয়। শুরুতেই কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন এবং পরীক্ষার্থী আদলতে যায় কিনা তা যাচাই করতে আদালত সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন করা হয়।
আপনার নিজের ডিটেইল আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারে। কোথায় পড়েছেন, কবে পাস করেছেন, নিজ জেলা কোনটি, কোন কোর্টে ইন্টিমেশন জমা দিয়েছেন, যে জেলায় প্র্যাকটিস করতে চান সেখানকার জেলা জজের নাম কি, আপনার সিনিয়রের নাম কি ইত্যাদি। যে বার এর অধীন প্র্যাকটিস করছেন অথবা করবেন বলে ইন্টিমেশনে উল্লেখ্য করেছেন সে বার সম্পর্কে সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখুন। যেমন -বার প্রতিষ্ঠা সাল, বারের সর্বমোট সদস্য, বারের বর্তমান সভাপতি ও বিদায়ী সভাপতি। সাধারণ সম্পাদক সহ উক্ত বারের দুই একজন বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবীর নাম জেনে রাখুন। আদালত সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখা আপনার জন্য প্লাস পয়েন্ট
আপনার প্রেক্টিসিং বারের একটা ম্যাপ করে মাথায় রেখে দিন। অনেক সময় দেখা যায় বিজ্ঞ বিচারকগন আপনার বার সম্পর্কে ভালো জানেন বলে আপনাকে বাজিয়ে দেখবে জিজ্ঞেস করতে পারে বলুন তো লিগ্যাল এইড অফিসটা কোন দিকে? তখন তিনি বুঝে যাবেন আপনি কোর্ট এ যাতায়াত করেছেন কিনা। তাই কোর্ট সম্পর্কে সামগ্রিক একটা ধারনা নিবেন। যেমনঃ মেট্রোপলিটন এলাকায় বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ আদালত এর অবস্থান এবং বিচারকের নাম। জেলা পর্যায়ে বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালত এর অবস্থান এবং বিচারকের নাম সহ খুটিনাটি সকল বিষয় জেনে রাখবেন।
আইন সম্পর্কে প্রশ্নাবলী; দেওয়ানী এবং ফৌজদারী ও ভার্চুয়াল আদালত, কেস ডায়েরি ও অন্যান্য –
দেওয়ানী এবং ফৌজদারী কার্যবিধি থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধারা সমূহ জেনে তা আয়ত্ত করে নিতে হবে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারার বিস্তারিত জিজ্ঞেস করা হয়ে থাকে বিধায় ধারাগুলো ভালো করে দেখে যাবেন।
যেমন – রেস জুডিকাটা বলতে কী বুঝেন? এটি কোথায় আছে? অন্য কোন আইনে আছে কিনা? অথবা রেস সাব জুডিস কি? ইত্যাদি। এছাড়াও দেওয়ানী এবং ফৌজদারী মামলার ধাপ, প্রক্রিয়া জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ দেওয়ানী এবং ফৌজদারী মামলার স্টেজ বা ধাপ সমূহ জানা আবশ্যক, এর বিকল্প নেই। মামলা কিভাবে শুরু হয়, কখন আমলযোগ্য, কখন জামিন চাওয়া যায় আপিল ফাইল হয় ইত্যাদি জানা আবশ্যক ।
ভার্চুয়াল আদালত- যেহেতু করোনা পরিস্থিতির কারনে আদালতের কার্যক্রম দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল ফলে “ভার্চুয়াল আদালত কার্যক্রম” সম্পর্কে খুটিনাটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারে এটাই স্বাভাবিক। আপনারা ভার্চুয়াল আদালত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে যাবেন। ভার্চুয়াল আদালত কি? ভার্চুয়াল আদালত অধ্যাদেশ কবে জারি হয় । কবে এই আইন পাশ হয় এবং কবে থেকে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা হচ্ছে? কি কি বিষয় মূলত ভার্চুয়াল আদালতে শুনানী হয়? ভার্চুয়াল আদালতে সময়ের আবেদন শুনানী এবং জামিন শুনানির সুযোগ আছে কিনা, থাকলে ও কিভাবে হয়? তাছাড়াও এই কোর্ট নিয়ে বাস্তবিক প্রশ্ন হতে পারে আপনি কোন মামলায় আপনার সিনিয়রকে ভার্চুয়ালি সহযোগিতা করেছেন কিনা? ভার্চুয়াল আদালতে আপনি কোন সময়ের আবেদন কিংবা হাজিরা দিয়েছেন কিনা? এছাড়াও অন্য কোন ভাবে কি কোন সাহায্য করেছিলেন কিনা এবং তা কি ধরনের সাহায্য করেছেন ইত্যাদি। আরেকটু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে কোভিড পরিস্থিতির কারনে আদালত অনেক সময় বন্ধ ছিল বা থাকার কথা সেই সময় কেইস ডায়েরীতে মনের ভুলেও কোন তারিখ যাতে না পরে সেটি খেয়াল রাখবেন।
কেইস ডায়েরি –
জানেন নিশ্চয়ই যে, আপনার ইন্টিমেশন পর্বের সময়ে আপনার সিনিয়রের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকা মামলাগুলোর একটি কেইস ডায়েরি জমা দিতে হয়। ভাইভাতে সেই কেইস ডায়েরি হাতে করে নিয়ে ঢুকতে হবে কিন্তু। সেই ডায়েরি থেকে মামলাগুলো সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারে। এজন্য লিখিত পরীক্ষায় রেজাল্ট হবার পরেই বা পাশ করার পরেপরেই কোর্টে গিয়ে মামলাগুলো প্রস্তুত করে নিয়েছেন হয়তো । উক্ত মামলাগুলোর স্টেপগুলো কি কি এবং তা কোন পর্যায় পর্যন্ত গিয়েছে সে সম্পর্কে প্রপার ধারণা রাখতে হবে। কেস ডায়েরি থেকে প্রশ্ন করার সম্ভাবনা খুব কম। তবুও কেস ডায়েরি থেকে কেসগুলোর সম্পর্কিত ধারণাগুলো দেখে যাবেন, বিশেষ করে আদালতে এগুলোর স্টেপগুলো কী কী সে সম্পর্কে।
পাঁচ (৫) টি সিভিল এবং পাঁচ (৫) টি ক্রিমিনাল মামলার ধারাবাহিক বিবরণ সম্বলিত কেস ডায়েরী আনবেন। বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে বসবেন এবং ধন্যবাদ জানাবেন। নার্ভাস না হয়ে আত্মবিশ্বাস সহকারে প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে তাকিয়ে মার্জিতভাবে বুঝে-শুনে উত্তর দিবেন। উত্তর জানা না থাকলে ভুল উত্তর না দিয়ে বরং বিনয়ের সঙ্গে দুঃখিত বলাই ভালো।
বিগত সালের লিখিত ও এমসিকিউ পরীক্ষার প্রশ্ন :
বিগত সালের অনুষ্ঠিত এমসিকিউ পরীক্ষায় যে প্রশ্নগুলো এসেছিলো সেগুলোর উত্তরগুলো দেখে এর সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো দেখে যাবেন অবশ্যই। ভাইভা বোর্ড এ সম্ভবত লিখিতের রেজাল্ট থাকে তাই লিখিতের প্রশ্ন সমুহের ধারা এবং এমসিকিউ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রটির ধারা সমুহ একবার চোখ বুলিয়ে নিবেন। এবং লিখিত পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলোর সংশ্লিষ্ট ধারাও দেখে যেতে হবে ভালো করে।বিগত যে পরীক্ষা দিয়ে ভাইভা ফেস করতে যাচ্ছেন, সে পরীক্ষার প্রশ্ন থেকে প্রশ্ন এসেই থাকবে, এটি কিন্তু বেশ কমন ঘটনা।
প্রথমত, লিখিত পরীক্ষায় আসা সমস্ত প্রশ্নগুলোর সংশ্লিষ্ট ধারা ও তাত্ত্বিক ধারণা ভালো করে নেবেন। যেই লিখিত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিলেন সেই প্রশ্নপত্র থেকেই সাধারণভাবে ভাইভাতে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার হার বেশি হয়। ভাইভায় সব সময় সব প্রশ্ন পারতে হবে এমন কোন কথা নেই তবে অবশ্যই তা সাবলিল ভাবে আত্মবিশ্বাস রেখে বলতে হবে এই মুহুর্তে মনে পরছে না। ভনিতা না করে কথা না প্যাচানোর চেস্টা করতে হবে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি –
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কি?
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবীদের সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও আইন পেশার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল মুলত একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অধ্যাদেশ,১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সালের ৪৬ নং আদেশ)-এর অধীনে গঠিত একটি কেন্দ্রীয় সংগঠন। কাউন্সিলের কার্যাবলির মধ্যে প্রধান কাজ অ্যাডভোকেটদের তালিকাভুক্তি, তালিকাভুক্তির জন্য পরীক্ষা অনুষ্ঠান সংঘটন করা।
বার কাউন্সিল পরিচালনায় এডহক কমিটি-
করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর কারণে নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি বলে এডহক বার কাউন্সিল গঠন করা করেছে। ১৫ সদস্যের সমন্বয়ে এই এডহক বার কাউন্সিল গঠন হয়। এর মেয়াদ হবে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। এই কমিটি আগামী বছরের ৩১ মে বা তার আগে ‘বার কাউন্সিলের নির্বাচন’ সম্পন্ন করবে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বার কাউন্সিলের ১ জুলাই থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করার নির্দেশনা রয়েছে প্রকাশিত গেজেটে। বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২-এর ৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। পদাধিকার বলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এডহক বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। অন্য সদস্যরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আব্দুল বাসেত মজুমদার, সৈয়দ রেজাউর রহমান, মোখলেছুর রহমান বাদল, এইচ এ এম জহিরুল ইসলাম খান (জেড আই খান পান্ন),শাহ মো. খাসরুজ্জামান, মো. কামরুল ইসলাম, ঢাকা আইনজীবী সমিতির কাজী নজীবুল্লাহ হিরু, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির মুজিবুল হক, সিলেট আইনজীবী সমিতির এ এফ মো. রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু, ময়মনসিংহ আইনজীবী সমিতির কবির উদ্দিন ভূঞা, খুলনা আইনজীবী সমিতির পারভেজ ইসলাম খান, রাজশাহী আইনজীবী সমিতির মো. ইয়াহিয়া ও সিরাজগঞ্জ আইনজীবী সমিতির মো. আব্দুর রহমান।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির নাম- মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (২২ তম)
বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতির নাম- জনাব আবু সাদাত মোহম্মদ সায়েম।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অ্যাডভোকেট জনাব আনিসুল হক।
আইন ও বিচার মন্ত্রনালয়ের সচিবের নাম – জনাব মোঃ গোলাম সারওয়ার।
অ্যাডভোকেট কে?
অ্যাডভোকেট এর সংজ্ঞা বিভিন্ন আইনে যা লিপিবদ্ধ হয়েছে সেগুলো হলো ঃ-
The Bangladesh legal Practitioners and Bar Council Order, এর Article 2 (a) মোতাবেক অ্যাডভোকেট বলতে তাকে বুঝায় যিনি অত্র আদেশের বিধান মতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভূক্ত হয়েছেন। ১৯০৮ সনের দেওয়ানী কার্যবিধির ২(১৫), ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধির ৪(১)(ক) ধারা এবং সাংবিধানিক আইন মতে অ্যাডভোকেট বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায় যিনি অপরের পক্ষে আদালতে হাজির হবার ও যুক্তিতর্ক পেশ করার অধিকার রাখেন।
‘General Clauses Act 1897’’ -এর ৩ ধারার ২(ক) দফা মতে, অ্যাডভোকেট বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বুঝায়, যিনি The Bangladesh legal Practitioners and Bar Council Order and Rules-1972 [President’s Order No. 46 of 1972] -এর অধীনে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
আইনজীবীদের শপথ-
আইনজীবীদের আছে The Bangladesh Legal Practioners and Bar Council Order (President Order no 46 of 1972) এর ৬২ (২) এ।
লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল (সংশোধন) আইন, ২০২১ –
লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল (সংশোধন) আইন, ২০২১ খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২৩ আগস্ট, ২০২১ সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ আইনের অনুমোদন আসে। কিছু দিন আগে বার কাউন্সিলের অধ্যাদেশ করা হয়েছিল, কারণ যদি কোনো কারণে সময় শেষ হয়ে যায় তখন কী করবে, সেটার কোনো বিধিবিধান ছিল না,নতুন করে যুক্ত করা হয়। সাধারণত অধ্যাদেশ করলে পার্লামেন্ট শুরু হলে এক মাসের মধ্যে সেটিকে আইনে পরিণত করতে হয়, নাহকেতা বাদ হয়ে যায়। তাই পরবর্তী সংসদ অধিবেশনে এটাকে অনুমোদন করতে হয় বলে এটার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশন ও জেলা ও দায়রা জজ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ :
এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ বার ঢাকা আইনজীবী সমিতি। প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৮৯ সাল। ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদের মোট সদস্য ২৩ জন, সাম্পদকীয় পদ ১২ টি, কার্যকরি সদস্য পদ ১১ টি।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির বিস্তারিত –
বর্তমান সভাপতি- বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব আব্দুল বাতেন।
বর্তমান সাধারণ সম্পাদকঃ বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব খোন্দকার মোঃ হযরত আলী।
বর্তমান বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকা, বিজ্ঞ বিচারকের নাম- জনাব মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরী।
এজলাস জেলা ও দায়রা জজ আদালত ৮ তলা ভবনের ৩য় তলায়।
বর্তমান বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ, ঢাকা, বিজ্ঞ বিচারকের নাম -জনাব কে.এম ইমরুল কায়েস।
এজলাস মহানগর দায়রা আদালত ভবনের ২য় তলায়।
বর্তমান মাননীয় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, (CJM) বিজ্ঞ বিচারকের নাম
জনাব সৈয়দ মাসফিকুল ইসলাম। চীফ জুডিশিয়াল আদালতে বিজ্ঞ বিচারক আছেন ৯ জন।
বর্তমান মাননীয় চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিজ্ঞ বিচারকের নাম, জনাব রেজাউল করিম চৌধুরী।
আদালত (CMM Court ১০ তল ভবনের তয় তলা, আদালত নং. ০১)।
বর্তমান বিভাগীয় স্পেশাল জজ, (বিভাগ ঢাকা) বিজ্ঞ বিচারকের নাম জনাব সৈয়দ কামাল হোসেন (এসলাস, মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের তয় তলায়)।
মহানগর দায়রা আদালতের বর্তমান পিপি, (লার্নেড অ্যাড. জনাব মোঃ আব্দুল্লাহ আবু) মহানগর পিপি।
(জেলা ও দায়রা) জজ আদালত বর্তমান পিপি
লার্ণেড অ্যাড. জনাব শেখ হেমায়েত হোসেন (ঢাকা জেলা পিপি)
বর্তমান জেলা জিপি পদ শূন্যে (লার্ণেড অ্যাড. জনাব ফকির দেলোয়ার হোসেন স্যারের মৃত্যুজনিত কারনে)।
CMM Court আছে মোট ৩৫ টি।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন, আইন ও ট্রাইবুন্যাল: ঢাকা জজ কোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আছে (০৯) নয়টি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের প্রত্যেক বিজ্ঞ বিচারক জেলা ও দায়রা জজ সম পদমর্যাদার।
চুড়ান্ত প্রস্তুতি –
একদিন আগে থেকেই আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। বিশেষ করে পরীক্ষার আগের রাতে সকল মানসিক চাপ কমিয়ে জরুরী প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিবেন। সঠিকভাবে ঘুম পরের দিনে ভালো একটা সুন্দর দিন উপহার দিবে সেইভাবে মনকে বুঝাবেন। পরীক্ষায় নোটিশে বলা কাগজপত্র যেমন ঃ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, এডমিন কার্ড
সুন্দর করে একটা ফাইলে গুছিয়ে নিবেন। মনে রাখবেন কোন অতিরিক্ত কাগজপত্র নেয়ার প্রয়োজন নাই। মনে রাখবেন পরীক্ষার সঠিক নির্দেশনা মানাও পরীক্ষার একটা অংশ। অনেকেই আছে যারা ভাইভার নোটিশ না পড়েই বাসায় যত সারটিফিকেট আছে সব নিয়ে চলে যান। ভুলে ও এ কাজ করবেন না। ঠিক নোটিশে যা আছে তাই নিবেন। অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেন আপনাকে আইন জগতের জন্য অপ্রয়োজনীয় না করে তুলে সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। পরের দিন সময়ের আগেই কেন্দ্রে চলে যাবেন এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য ভীড় এড়িয়ে চলুন। যে বোর্ড এ আপনার ভাইভা সেই বোর্ড এর মেম্বার্স সম্পর্কে কিছু তথ্য যেমন তার ডেজিগনেশন ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে রাখুন। আপনাকে ডাকার আগ মুহুর্তে নিজেকে গুছিয়ে নিন।
ভাইভা বোর্ড এ ঢুকার আগে অবশ্যই পালনীয় –
ভাইভা রুমে দরজা দিয়ে ঢুকেই প্রবেশের [যদিও প্রবেশ করেই ফেলেছেন ] অনুমতি নেবেন। চেয়ারের সামনে গিয়ে বসার জন্য অনুমতি নেবেন। বসার ভঙ্গিটি বিনয়াবনত হতে হবে। মনে রাখবেন, বিচার অঙ্গণের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মানুষগুলোর সামনে আপনি বসছেন। আপনার আচরণ হতে হবে আত্মবিশ্বাসী কিন্তু বিনয়ের সাথে। বসার পরে মুলত আপনার পরীক্ষা শুরু! আপনাকে বাংলায় কিছু জিজ্ঞেস করলে আপনাকে বাংলায় উত্তর প্রদান করতে হবে এবং ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে অবশ্যই ইংরেজিতে উত্তর দিতে হবে। সংমিশ্রণে কথা বলা এড়িয়ে চলবেন। সিনিয়র সংক্রান্ত প্রশ্নের ক্ষেত্রে সিনিয়রের নাম জিজ্ঞাসা করলে নামের পূর্বে অবশ্যই Learned Advocate Mr বলে সিনিয়র এর নাম বলবেন। প্রশ্নকর্তা Mr. Justice হলে তাঁকে My Lord সম্বোধন করে উত্তর দিলে ভাল। এবং যতটুকু সময় থাকবেন রুমে ঢুকা থেকে বের হওয়া পর্যন্ত যাতে সুন্দর এবং সাবলীল থাকে সেই খেয়াল রাখবেন।
আপনাকে যদি আপনি এত পেশা থাকতে আইন পেশায় আসছেন কেন?
উত্তর হতে পারে আইন পেশা সম্মানজনক। স্বাধীন ও সেবামূলক পেশা। এই পেশাজীবীগণকেই শুধুমাত্র Learned বলে সম্বোধন করা হয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অসহায়, দুঃস্থ ও নিরীহ মানুষকে আইনী সহায়তা প্রদান করতে ও সামাজিক মানমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আমি এই মহান পেশায় আসতে চাই। সবোপরি আমার মা-বাবাসহ পরিবারের সবার ইচ্ছা আমি এই পেশায় আসি। এরকম নিজের মত করে গুছিয়ে উত্তর দিতে পারেন।
পোশাক ও প্রবেশ –
ভাইভাতে কি পোশাকে যাবেন সেটা সংশ্লিষ্ট নোটিশেই বলে দেবে। সেই অনুযায়ী যেতে হবে এবং যদি কখনো জিজ্ঞেস করে
ড্রেস কোড সংক্রান্ত বিধিমালা কোথায় বলা আছে। তাই Rules and Order (CRO) 1935; Part 1 -এর ৩৭ তম অধ্যায়ের ৮২৫ ও ৮২৬ বিধানটা জানা লাগবে। এই বিধি মোতাবেক, “Court Dress” (সাদা শার্ট, সাদা বা কালো প্যান্ট, কালো কোট ও কালো টাই) পরিধান করতে হয়।
পরিশেষে এতটুকুই মনে রাখবেন শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। আপনাদের পদচারণায় কম্পিত হোক আইনাঙ্গন। শুভ কামনা রইলো সকল পরীক্ষার্থীদের জন্য।
লেখক- অ্যাডভোকেট, জেলা ও দায়রা আদালত ঢাকা ও খাগড়াছড়ি।