রাজারবাগের পীর দিল্লুর রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব সম্পত্তি রয়েছে তা নির্ণয় করে সেগুলোর উৎস সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে আদালতকে জানানোর জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে, পীর ও তার পৃষ্ঠপোষকতায় উলামা আঞ্জুমান বাইয়্যিনাত অথবা ভিন্ন কোনো নামে কোনো জঙ্গি সংগঠন আছে কি না সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে।
আগামী ৩০ নভেম্বরের আগে দুদক ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে এই আদেশ প্রতিপালন করার জন্য বলা হয়েছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া এ সংক্রান্ত আদেশের লিখিত অনুলিপি সোমবার (৪ অক্টোবর) প্রকাশ করা হয়েছে। লিখিত আদেশের অনুলিপি প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন রিটকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
তিনি জানান, রাজারবাগ দরবারের পীর দিল্লুর রহমান ও তার দরবারের সব সম্পত্তির হিসাব চেয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই দিন একই সঙ্গে এই দরবারের পীরের অনুসারীদের করা (রিটে উল্লেখিত ৮টি) মামলা তদন্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে মামলার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে সিআইডিকে। সেই সঙ্গে আদালত রিট আবেদনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বলেছিলেন। ওই দিনের দেওয়া মৌখিক আদেশের লিখিত অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে সোমবার (৪ অক্টোবর)। আমরা সেই আদেশের সার্টিফায়েড কপি হাতে পেয়েছি।
তিনি জানান, লিখিত আদেশে বলা হয়েছে, প্রতিপক্ষকে এই মর্মে কারণ দর্শাতে বলা হলো যে, কেন আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ক্রমাগত ফৌজদারি মামলা দায়েরে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হবে না।
একই সঙ্গে রুলটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রিটকারী আটজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের সঙ্গে জড়িত ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) অতিরিক্ত মহা-পুলিশ পরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রিট পিটিশনের সংযুক্তি অনুযায়ী জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদন হতে প্রতিয়মান হয় যে, উক্ত কমিটি সাতটি সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো-
ক. রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানসমূহের নামে যেসব সম্পদ রয়েছে তার তালিকা প্রস্তুত করে আয়ের উৎস ও রাজস্ব প্রদানের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।
খ. সাধারণ মানুষকে যেন ধর্মের নামে ধোঁকা দিতে না পারে এবং নিরীহ মানুষের অর্থ-সম্পদ যেন হয়রানীমূলকভাবে মিথ্য মামলা করে হাতিয়ে নিতে না পারে সে জন্য রাজারবাগের পীর দিল্লুর রহমানের মূল আস্তানাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শাখা কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দিতে হবে।
একই সঙ্গে তার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠন ‘উলামা আঞ্জুমান আল বাইয়্যিনাত’ এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রচারিত সংবাদপত্র ‘আল বাইয়্যিনাত ও আল ইহসান’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
এ ছাড়া আদেশে আরও বলা হয়েছে, সংযুক্তি থেকে প্রতীয়মান যে, উক্ত কথিত পীর ও তার দরবারের নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৭ সাত হাজার একর জমি, রাবার বাগান অবৈধ দখলে আছে। উপরোক্ত সংযুক্তিগুলো বিবেচনায় নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে এই আদেশ দেওয়া হলো।
আদেশের লিখিত অনুলিপিটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৫ ডিসেম্বর দিন ধার্য রয়েছে। এর পরে হাইকোর্ট বিভাগের দুই বিচারপতি ওই আদেশের অনুলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ দরবারের পীর দিল্লুর রহমান ও তার দরবারের সব সম্পত্তির হিসাব চেয়ে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই দরবারের পীরের অনুসারীদের বিরুদ্ধে করা (রিটে উল্লেখিত ৮টি) মামলা তদন্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গত ১২ সেপ্টেম্বর এক রিটের শুনানিতে অন্যের জায়গা-জমি দখলের জন্য রাজারবাগ দরবার শরিফের পীরের কাণ্ড নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট। মুরিদদের দিয়ে নিরীহ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪৯টি মামলা দেওয়ার ঘটনায় সিআইডির তদন্ত রিপোর্ট দেখে আদালত এ বিস্ময় প্রকাশ করেন।
ওই দিন হাইকোর্ট বলেন, ‘পীর সাহেবের কাণ্ড দেখেন! জায়গা-জমি দখলের জন্য পীর সাহেবরা তাদের অনুসারী-মুরিদ দিয়ে কী করে দেখেন। যেখানে একটা মামলা দিলেই একজন মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায়, সেখানে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এত মামলা! এটাতো সিরিয়াস ব্যাপার।’
সুত্র- জাগো নিউজ