স্ত্রীকে নির্যাতনের দায়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন এক স্বামী। ওই ঘটনায় মামলা হয়। মামলায় সাজা হওয়ায় তার চাকরি চলে যায়। এরপর দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে তিনি অঙ্গীকার করেন, স্ত্রীকে আর নির্যাতন করবেন না। এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর আদালত বলেছিলেন, স্ত্রীর নামে এক টুকরো জমি লিখে দেন। তাহলে আপনি যাতে চাকরি ফিরে পান সেজন্য বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারসহ প্রয়োজনীয় আদেশ দেওয়া হবে। তারই ধারাবাহিকতায় স্ত্রীকে জমি লিখে দেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চকে জমি লিখে দেওয়ার তথ্য জানানোর পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন আদালত।
আদালতে আজ ওই দম্পতির পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আদালতে স্বামী-স্ত্রী দুজনই হাজির হয়ে তাদের বক্তব্য পেশ করেন।
আদালত বলেন, আপস-মীমাংসার কথা বলছেন কিন্তু এখান থেকে গিয়ে স্ত্রীকে নির্যাতন করবেন না তার নিশ্চয়তা কোথায়? জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন, আমি আর নির্যাতন করবো না। তবে, স্যার এক হাতে তো আর তালি বাজে না।
স্ত্রী বলেন, আমার একটা সন্তান আছে। আমি চেয়েছিলাম- স্বামী যেনো আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করেন। কিন্তু, তিনি তা করেননি। যেহেতু আর নির্যাতন করবেন না বলছেন সেজন্য সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আপসের সিদ্ধান্তে রাজি আছি।
আপিল বিভাগ বলেন, আপসের পরও যদি নির্যাতন করে তখন কি করবেন? জবাবে ওই নারী বলেন, তাহলে সেটা আমার নসিব। এখন তাকে বিশ্বাস করা ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই। আমি স্বামীকে নিয়ে বাঁচতে চাই। আদালত বলেন, আপনার স্ত্রীকে দুর্বল মনে করবেন না। আমরা চাই- সংসারটা টিকুক। একে অপরের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। একজন বলছেন, এক হাতে তালি বাজে না। আমরা চাই- আগামীতে যেনো কোনো হাতেই আর তালি না বাজে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে ফায়ারম্যান স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তার স্ত্রী। ওই মামলায় স্বামীর সাজা হয় ও তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। তবে আপিল মঞ্জুর করে হাইকোর্ট ওই নারীর স্বামীকে খালাস দেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে মামলা খারিজ চেয়ে আপিল বিভাগে একটি ‘সমঝোতার আবেদন’ দেন স্বামী। বুধবার আপিল ও সমঝোতা আবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ২৫ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য রাখা হয়েছে।