ভারতে সম্প্রতি নারীদের বিয়ের বয়স ২১ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এটা কার্যকর করে মেয়েদের বিয়ের বয়স ২১ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সোমবার (৩ জানুয়ারি) ‘নারীর প্রতি সহিংসতায় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ভারতে সম্প্রতি নারীদের বিয়ের বয়স ২১ করা হয়েছে। আমরাও চাই আমাদের দেশে বিয়ের বয়স ২১ করা হোক।
বক্তারা আরও বলেন, নারী নির্যাতনরোধে শুধু ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দিলেই হবে না, সব ক্ষেত্রে নজরদারি ও লোকবল বাড়াতে হবে। বিদেশে নারী পাচারের বিষয়ে বক্তারা বলেন, যারা বিদেশে পাচার হয়ে চলে যাচ্ছেন, তাদের হিসাবটা কোথাও আসে না। শুধু যারা ফেরত আসেন, আমরা সে হিসাবটাই দেখতে পাই। তাই পাচারের সংখ্যাও যথাযথ বলা যায় না।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে গত বছরের নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে শুধুমাত্র নারী ও শিশু সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা আনুমানিক ১৯ হাজার। ২০২১ সালে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ৬০২টি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা জানা যায়। এর মধ্যে স্বামী ও স্বামীর পরিবারের হাতে হত্যার শিকার হন ২৮৫ জন।
সংগঠনটি জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সমাজে ও পরিবারে অসহিষ্ণুতা বেড়ে গেছে এবং এর প্রতিফলন হিসেবে করোনাকালীন সময়ে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা অর্থাৎ ধর্ষণ, তালাক, পারিবারিক সহিংসতা, যৌন নির্যাতন, বাল্য বিবাহ, পাচার, অপহরণ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন বেড়েই চলেছে।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে সমিতির পক্ষ থেকে নারী, শিশু ও অন্যান্য নির্যাতন বন্ধে ১৪টি সুপারিশ করা হয়।
সুপারিশগুলোও মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
- সকল কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছে, সে অনুযায়ী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কার্যকরী কমিটি গঠন ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।
- দ্রুত ট্রায়ালের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
- যথোপযুক্ত বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীর সহজগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
- দ্রুত বিচার এবং সাক্ষী সুরক্ষার পাশাপাশি আধুনিক ফরেনসিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলাগুলোর যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।
- স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মী— সবাই মিলে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করা এবং
- স্থানীয় জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণে শিশু বিবাহ, পারিবারিক নির্যাতনসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরদ্ধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার সুপারিশ জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোবায়দা পারভীন, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সীমা জহুর।