গত পাঁচ বছরে পাচারকাজে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার, বিচার ও শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে ৫৬৯ জন বিচারক এবং এক হাজারেরও বেশি পুলিশ, সরকারি আইনজীবী ও উকিলকে মানব পাচার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি।
মানবপাচার প্রতিরোধ বিষয়ক এক কর্মশালায় ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার বুধবার (১২ জানুয়ারি) এ তথ্য জানান। মার্কিন দূতাবাস থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে, রাষ্ট্রদূত মিলার এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক ঢাকার ট্রাইব্যুনাল বিচারকদের জন্য আয়োজিত বুধবার মানব-পাচার বিরোধী এক কর্মশালার উদ্বোধন করেন। ফাইট স্লেভারি অ্যান্ড ট্রাফিকিং ইন-পারসন্স (এফএসটিআইপি) প্রকল্প কর্তৃক আয়োজিত এই কর্মশালায় অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে জোরদার সহযোগিতার ফলে মানব পাচারের (টিআইপি) বিচারের জন্য সাতটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে এবং মানব পাচার প্রতিরোধে পাঁচ বছরের একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মিলার বাংলাদেশের মানব পাচার প্রতিরোধ কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধে আপনাদের সাথে সামিল হওয়া যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের অন্যতম অগ্রাধিকার। এই কর্মশালার মাধ্যমে মানব পাচার বন্ধে বাংলাদেশ সরকার, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত ও পাচারের কবল থেকে মুক্ত হওয়া ব্যক্তিদের সাথে অংশীদারিত্বের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, মানব পাচার হলো আধুনিক কালের দাসত্ব। আমাদের পৃথিবীতে এর কোনো স্থান নেই। কোথাও না। ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন থাকলেও আমেরিকা ও বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী ও বিচার বিভাগীয় অংশীজনেরা স্বীকার করেন যে, মানব পাচারের বিচার ও অপরাধ প্রমাণের হার বাড়ানো প্রয়োজন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইউএসএআইডি’র ১০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নপুষ্ট এফএসটিআইপি প্রকল্পের আওতায় বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, সরকারী আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য আয়োজিত এ সপ্তাহের কর্মশালার মতো বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো কার্যকরভাবে মানব পাচারকারীদের বিচার ও অপরাধ প্রমাণে বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের টিআইপি প্রতিবেদনে পরপর দুই বছর বাংলাদেশ পর্যায়-২’ এ অবস্থান অর্জন করেছে। এর মাধ্যমে মানব পাচার বিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ক্রমবর্ধমান সাফল্যের বিষয়টিই উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার পাচারকাজে জড়িত অপরাধীদের বিচারের জন্য বিচার বিভাগের সক্ষমতা জোরদার করেছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
গত পাঁচ বছরে ইউএসএআইডি পাচ শতাধিক বিচারক এবং হাজারেরও বেশি পুলিশ, সরকারি আইনজীবী ও উকিলকে মানব পাচার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসূচি ও তহবিলের আওতায় পাচারের কবল থেকে মুক্ত হওয়া ৩ হাজারেরও বেশি মানুষকে আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, পরামর্শ, জীবন-দক্ষতা ও ব্যবসা-উদ্যোগ বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং চাকরি প্রদানের জন্য স্থানীয় পর্যায়ের সংস্থাগুলোকেও সহায়তা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সচিব গোলাম সারওয়ার, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (জেএটিআই)- এর মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, জেএটিআইর পরিচালক (প্রশিক্ষণ) জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।