আদালত কর্মচারী ও আইনজীবীদের দ্বন্দ্বে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত সিরাজগঞ্জের আদালত প্রাঙ্গণ। কোর্ট কর্মচারী কর্তৃক সমিতির সদস্যকে শারীরিক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে আদালত বর্জন কর্মসূচী পালন করছে আইনজীবীরা।
অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আদালতের এক কর্মচারী। এজাহারে অভিযোগ করা হয়, বাদীকে আদালতের এজলাসে গিয়ে মারপিট করা হয়েছে। মামলায় ১১ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত পরিচয়ে আরো ১৫/২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা ও দায়রা জজের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে আইনজীবীরা। সেই সাথে সংশ্লিষ্টদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী সমিতি।
এদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা জজ, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও শাহজাদপুর উপজেলা আদালত খোলা থাকলেও আইনজীবীরা না যাওয়ায় আদালতের কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।
আইনজীবীদের অভিযোগ, সিরাজগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩ আদালতের স্ট্যানোগ্রাফার ইউসুফ আলী একটি মামলায় মক্কেলের নিকট তাকে অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ১০,০০০ টাকার অবৈধ চুক্তি করে। গত ১৩ জানুয়ারি এডভোকেট আবুল কালাম উক্ত মোকদ্দমা ফিরিয়ে দেন এবং হাজিরা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ প্রেক্ষিতে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের স্টেনোগ্রাফার ইউসুফ কতিপয় সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে আইনজীবী আবুল কালামের ওপর তার কোর্ট চেম্বারে অতর্কিত আক্রমণ করে শারীরিকভাবে ব্যাপক আঘাত করে।
এ ঘটনায় আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ সদর থানায় স্ট্যানোগ্রাফার ইউসুফসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। যার জি.আর. মামলা নাম্বার ২৮/২০২২ তারিখ ১৩/০১/২০২২।
এর মধ্যে গত রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকালে অফিস কক্ষসহ সকল এজলাসে তালা লাগিয়ে আপত্তিকর ব্যানার নিয়ে কোর্ট চত্বরে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ করেছে জেলা জজ ও মাজিস্ট্রেট আদালতের কর্মচারীরা।
আদালত কর্মচারীদের শিষ্টাচার বর্হিভূত ও চরম অনৈতিক আচরণের প্রেক্ষিতে আইনজীবী সমিতি তৎক্ষণাৎ জরুরী সাধারণ সভা আহ্বান করে। সভায় সিরাজগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের কর্মচারী কর্তৃক আইনজীবীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে আদালত বর্জন কর্মসূচীসহ কোর্ট অঙ্গনের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানানো হয়। একই সাথে ওই আদালত কর্মচারীকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবী জানানো হয়।
সিরাজগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা ও দায়রা জজ অবগত থাকার পরও আইনজীবী লাঞ্ছনার ঘটনায় প্রধান আসামি ইউসুফ অজ্ঞাত স্থানে পালাতক থেকে গত সোমবার (১৭ জানুয়ারি) বাদী হয়ে এজহার পাঠিয়ে আইনজীবী সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করে।
আইনজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত আদালত কর্মচারীর সাজানো মিথ্যা করায় জেলা আইনজীবী সমিতি সিরাজগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা ও দায়রা জজের ব্যর্থতাকে দায়ী করছে এবং তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।