ফেনী জেলা ও দায়রা আদালতের সেরেস্তার কর্মচারী বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি সংক্রান্ত জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যের অভিযোগ কাল্পনিক, ভুয়া ও বানোয়াট দাবি করে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে অভিযোগকারী আইনজীবী বলছেন কোর্ট কর্মচারীর বিবৃতি অসত্য ও ভিত্তিহীন।
আজ রোববার (২৩ জানুয়ারি) সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেসপাস সহকারী মো. মহিউদ্দিন বাবলু ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট রবিউল হক ফরহাদের আনিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানান।
প্রতিবাদলিপিতে মো. মহিউদ্দিন বাবলু বলেন, আইনজীবী ফরহাদ গত ১১ জানুয়ারি আদালতের সেরেস্তায় এসে ছাগলনাইয়া জি.আর -৪৫/২০২২ মামলার নথিড় বিষয়ে জানতে চান। নথিটি এখনো সেরেস্তায় পৌঁছায়নি বলে আইনজীবী অবহিত করি। এরপর তিনি তাঁর ভিজিটিং কার্ড দিয়ে নথি এলে সে বিষয়ে জানাতে অনুরোধ করেন। সেই মোতাবেক গত ১৩ জানুয়ারি উক্ত আইনজীবীকে নথি গ্রহণের কথা জানাই এবং নথির দায়রা রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে দায়রা সহকারীর সাথে যোগাযোগ করতে বলি। নথির দায়রা নম্বর প্রদান করা দায়রা সহকারীর কাজ হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে আইনজীবীর আনিত ঘুষ দাবির অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন।
এদিকে আদালত কর্মচারির প্রতিবাদ বিষয়ে আইনজীবী রবিউল হক ফরহাদ ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে জানান, আদালত কর্মচারীদের প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ স্বরুপ বিবৃতি অসত্য ও ভিত্তিহীন। তারা ঘুষের দাবীতে বিচার প্রার্থী মানুষ, আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীদের নিয়মিত হয়রানি করছে।
অ্যাডভোকেট রবিউল আরও বলেন, আদালত কর্মচারীদের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে একাধিক বিজ্ঞ আইনজীবী লিখিত ও মৌখিক ভাবে বিজ্ঞ বিচারকগণ বরাবরে অভিযোগ করলেও যথাযথ প্রতিকার মেলেনি। দিন দিন তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আইনজীবী ফরহাদ ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে আরও বলেন, আমার লিখিত অভিযোগ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ অবহিত আছেন তারা এই বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সেই সাথে ভবিষ্যতে এই ধরণের দুর্নীতি, অনিয়ম অব্যাহত থাকলে আমরা আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। দুর্নীতি অনিয়ম বিষয়ে আমরা আইনজীবীরা কোন ছাড় দেব না।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জানুয়ারি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমে ‘আদালত কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ, ব্যবস্থা নিতে আইনজীবীর আবেদন’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তায় কর্মরত দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ করেন আইনজীবী ফরহাদ। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা চেয়ে দায়রা জজ আদালত বরাবর লিখিত আবেদন করেন তিনি। পাশাপাশি আবেদনের অনুলিপি আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রেরণ করা হয়।
লিখিত আবেদনে ওই আইনজীবী বলেন, মাদক আইনের একটি মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী তিনি। গত ৯ জানুয়ারি মামলাটি বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য আমলি আদালত থেকে দায়রা আদালতে বদলি করা হয়। উক্ত মামলাটি আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দায়রা আদালতে পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য আছে। এজন্য গত ১২ জানুয়ারি মামলার নথি সংশ্লিষ্ট আদালতের সেরেস্তায় যায়।
অ্যাডভোকেট রবিউল হক ফরহাদের অভিযোগ, ওই মামলায় তিনি মক্কেলের পক্ষে পুট-আপ পিটিশন সহ জামিনের দরখাস্ত দাখিলের জন্য সেরেস্তায় যোগাযোগ করেন। সেখানে নিযুক্ত কর্মচারী মহি উদ্দিন বাবলু ও মহি উদ্দিন রাসেল মামলায় দায়রা নম্বর প্রদানের জন্য অনৈতিকভাবে ঘুষ দাবি করেন। দাবীকৃত ঘুষ প্রদান না করলে পরবর্তী ধার্য (৮ ফেব্রুয়ারি) তারিখের পূর্বে দায়রা নম্বর প্রদান করা হবে না বলেও তারা জানান।
আত্মপক্ষ সমর্থন পূর্বক জামিন প্রার্থনা করা হাজতি আসামির সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে রবিউল হক আবেদনে আরও বলেন, সেরেস্তার অসাধু কর্মচারীদের অনৈতিক দাবির প্রেক্ষিতে আসামি সাংবিধানিক অধিকার ও ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। এজন্য ন্যায় বিচারের স্বার্থে আবেদন গ্রহণ করে সেরেস্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানান তিনি।