ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১ -এর প্রাথমিক খসড়া প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন হওয়ায় আইনের ওপর মতামত আহ্বান করা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আইনটির প্রাথমিক খসড়া (বিল) প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের যেকোনো নাগরিক/প্রতিষ্ঠান https://minland.portal.gov.bd/forms/form/Opinions এই ঠিকানায় গিয়ে প্রাথমিক খসড়ার উপর তাঁর মূল্যবান মতামত দিতে পারবেন।
আইনের উদ্দেশ্য
ভূমি মন্ত্রণালয় জানায়, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২১-এর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে- ব্যক্তি মালিকানাধীন বা সরকারি খাসভূমিসহ সরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার মালিকানাধীন ভূমিতে প্রকৃত মালিকদের স্বত্ব ও দখলভোগ নিশ্চিত করা, ভূমিলিন্সু কোনও ব্যক্তির জালিয়াতি বা প্রতারণামূলক ও অন্যের সাথে যোগসাজশে সৃষ্ট দলিলমূলে বা কোনও দলিল ব্যতিরেকেই উক্ত ব্যক্তি কর্তৃক অবৈধভাবে ভূমির দখলগ্রহণ, বা দখলগ্রহণের চেষ্টা বা এর ক্ষতিসাধন রোধ করা। অবৈধভাবে ভূমির দখলগ্রহণ, বা দখলগ্রহণের চেষ্টা বা এর ক্ষতিসাধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পেশীশক্তির ব্যবহার, বা দেশীয় বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার, ইত্যাদির মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ ও দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিত করা।
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২১-এর প্রাথমিক খসড়ায় ভূ-সম্পদ সম্পর্কিত ২২ ধরনের/শ্রেণির অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব অপরাধের শ্রেণি ও মাত্রা ভেদে ন্যূনতম ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে প্রাথমিক খসড়ায়।
এ ছাড়া শাস্তি পাওয়ার পরও আবার অপরাধ করলে আগের শাস্তির দ্বিগুণ দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি শ্রেণির অপরাধকে অজামিনযোগ্য হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, জমির পরিমাণ ও অপরাধীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বর্ধিত সাজারও বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবনায়।
আইনে চিহ্নিত অপরাধসমূহ
প্রাথমিক খসড়ায় ভূ-সম্পদ সম্পর্কিত চিহ্নিত অপরাধের মধ্যে রয়েছে- অন্যের জমির মালিক হবার উদ্দেশ্যে জাল দলিল সৃষ্টি; মালিকানার অতিরিক্ত জমির দলিল সম্পাদন; মালিকানার অতিরিক্ত জমি লিখে নেওয়া; পূর্ব বিক্রয় বা হস্তান্তর গোপন করে কোনও জমি বিক্রয়; বায়নাকৃত জমি পুনরায় চুক্তিবদ্ধ হওয়া; ভুল বুঝিয়ে দানপত্র ইত্যাদি সৃজন; সহ-উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করে প্রাপ্যতার অধিক জমির নিজ নামে দলিলাদি সৃষ্টি; সহ-উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করে নিজের প্রাপ্যতার অধিক জমি বিক্রয়; অবৈধ দখল; সহ-উত্তরাধিকারীর জমি জোরপূর্বক দখলে রাখা; অবৈধভাবে মাটি কাটা, বালি উত্তোলন ইত্যাদি; জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করা; বিনা অনুমতিতে ভূমির উপরের স্তর (টপ সয়েল) কর্তন; অধিগ্রহণের পূর্বে জমির মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত মূল্যে দলিল নিবন্ধন; জনসাধারণের ব্যবহার্য, ধর্মীয় বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জমি দখল; বিনা অনুমতিতে পাহাড় বা টিলার পাদদেশে বসতি স্থাপন; রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার কর্তৃক জমি, ফ্ল্যাট হস্তান্তর ইত্যাদি সম্পর্কিত অপরাধ; সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জমি ইত্যাদি বেআইনি দখল; নদী, হাওর, বিল ও অন্যান্য জলাভূমির শ্রেণি পরিবর্তন; অবৈধ দখল গ্রহণ ও দখল বজায় রাখতে পেশীশক্তি প্রদর্শন; সন্নিকটবর্তী ভূমি মালিকের ভূমির ক্ষতিসাধন; অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত, দেশে সিংহভাগ মামলা হয় ভূমিকেন্দ্রিক বিরোধের জেরে। ভূমি সম্পর্কিত অপরাধ ও বেআইনি কর্মকাণ্ড প্রতিকারকল্পে দাখিলকৃত দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা দীর্ঘ সময় বিচারাধীন থাকায় উভয় ক্ষেত্রে সৃষ্ট মামলাজট জনগণের জন্য যে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা নিরসনে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রাথমিক খসড়ার উপর নাগরিক ও অংশীজনের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাপ্ত মতামতের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে প্রাথমিক খসড়াটি সংশোধন করে সংশোধিত খসড়া প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রমিতীকরণের জন্য পাঠানো হবে। উক্ত প্রমিতীকৃত খসড়াটি পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর মধ্যে দিয়ে আইন প্রণয়নের পরবর্তী ধাপ শুরু হবে।