পিএইচডি গবেষণায় অভিসন্দর্ভ (থিসিস) জালিয়াতি রোধে পদক্ষেপ নিতে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে মর্মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) হাইকোর্টকে অবহিত করেছেন। এ প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন আদালত।
আজ রোববার (৩০ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ আদেশ দিয়েছেন।
আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন।
বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান লিংকন।
অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বলেন, পিএইচডি গবেষণায় থিসিস জালিয়াতি রোধে পদক্ষেপ নিতে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে মর্মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আদালতকে অবহিত করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ তথ্য উপস্থাপন করার পর এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আইনজীবী মনিরুজ্জামান আরও জানান, নকল করে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি নেওয়া ঢাবি শিক্ষকের থিসিসের বিষয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।
এর আগে, গত বছরের ২১ জানুয়ারি দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ও সমমানের ডিগ্রি কীভাবে অনুমোদন করা হয়, সেগুলো যথাযথ আইন মেনে হয়েছে কি-না তা জানতে চেয়ে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও ঢাবির অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
ওই প্রতিবেদন দেখে আদালত ঢাবি কর্তৃপক্ষকে আরেকটি নির্দেশ দেন। নির্দেশনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভ (থিসিস) কী প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয় এবং এ জন্য কোনো সফটওয়্যার আছে কি-না তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলেছিলেন আদালত।
রিটের প্রেক্ষাপট
২০২০ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের (থিসিস) মাধ্যমে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীর।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে একই বছরের ২২ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন।
হাইকোর্টের রুল
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে পিএইচডি ও সমমানের ডিগ্রী প্রদানের ক্ষেত্রে জালিয়াতি বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
পাশপাশি পিএইচডি ডিগ্রী প্রদানের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র (এনওসি) নেওয়ার বিধান করার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তাও রুলে জানতে চেয়েছেন আদালত।
২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি এ কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া জালিয়াতি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের বিষয়ে ঢাবি ভিসির (উপাচার্য) ব্যাখ্যা তলব করেন হাইকোর্ট।