বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

ভুয়া পরোয়ানায় কারাভোগ, ভুক্তভোগীকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল

সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কৃষি বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার মো. আওলাদ হোসেনকে ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানামূলে আটক করে কারাগারে রাখার ঘটনায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ভার্চুয়াল দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) রিপোর্টে উঠে আসা ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানার সঙ্গে জড়িত ১০ আসামিসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বশির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

আদেশের বিষয়টি অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বশির গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দানেশ ঢালী, আলমগীর, সুমন ও অরূপ রায়সহ সাভারের ১০ জনের একটি চক্র আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে জাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তৈরির সঙ্গে জড়িত, যা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ খুঁজে পেয়েছে।

আইনজীবী এমাদুল বশির জানান, আওলাদ হোসেন একের পর পরোয়ানা নিয়ে প্রথমে কক্সবাজার পরে রাজশাহী তারপর বাগেরহাট ও শেরপুরে মোট ৬৮ দিন কারাভোগ করেন। পরে হাইকোর্টের আদেশে তিনি মুক্তি পান।

ভুয়া পরোয়ানায় গ্রেফতার ও ভুক্তভোগীর স্ত্রীর রিট

আওলাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কয়েকটি ভুয়া মামলা করা হয়। এরপর আশুলিয়া থানা পুলিশ আওলাদকে ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে। পরে আওলাদের বিরুদ্ধে জাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় এবং তাকে ঢাকা, কক্সবাজার, বাগেরহাট ও শেরপুরের বিভিন্ন আদালতে হাজির করা হয়।

ওই বছরই আওলাদকে ‘বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি’, তা নিশ্চিতে হাইকোর্টে হাজির করার জন্য নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন তার স্ত্রী।

সেই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে আপিল বিভাগে) ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ভুয়া মামলায় আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন।

একইসঙ্গে ভুয়া ওয়ারেন্ট কোথা থেকে ইস্যু করা হয় এবং কারা ইস্যু করে তা খুঁজে বের করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে জারি করা ওয়ারেন্ট ভুয়া কি না, তা যাচাইসাপেক্ষে তাকে জামিনে মুক্তি দিতে শেরপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন আদালত।

এ রুল শুনানির ধারাবাহিকতায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করা হয়। এরপর আজ এ আদেশ দেন আদালত।

উল্লেখ্য, একই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বেশ কয়েকটি নির্দেশ জারি করে। ২০২০ সালের অক্টোবরে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়- যারা ওয়ারেন্ট জারি করবেন, সেই বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেটদের নাম, পদবি এবং অফিসিয়াল ফোন নম্বর অবশ্যই আদেশে উল্লেখ করতে হবে।