সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতিতে ব্যাপক অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত এক সপ্তাহে সমিতির কার্যকরি কমিটির আট সদস্যের পদত্যাগ, বর্তমান কমিটি বিলুপ্তি, ছয় বছরের জন্য ১১ আইনজীবীর নির্বাচনি কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা এবং এক আইনজীবীর সদস্যপদ স্থগিতের মতো ঘটনা ঘটেছে।
কার্যকরি কমিটির আটজনের পদত্যাগ
জানা গেছে, জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ৮ নেতা পদত্যাগ করেছেন। তাদের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেছেন নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট তপন কুমার।
পদত্যাগকারীরা হলেন, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সম্পাদক শেখ সাইদুর রহমান, অর্থ সম্পাদক জে এম আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহ-সম্পাদক (লাইব্রেরী) আব্দুল জলিল, ক্রীড়া সম্পাদক আ ক ম সামছুদ্দোহা খোকন, মহিলা সহ-সম্পাদিকা শাহানা ইমরোজ স্বপ্না, সদস্য তারেক ইকবাল অপু, শাহরিয়ার হাসিব।
তবে কমিটির বর্তমান সভাপতি এড. আবুল হোসেন-২, সাধারণ সম্পাদক এড. আ ক ম রেজওয়ান উল্লাহ সবুজ এবং সদস্য এড. ফিরোজ আহমেদ স্বপদে বহাল আছেন।
বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ৮ জন পদত্যাগ করায় সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১ খ -এর ৪ এর (চ) ধারা অনুযায়ী কার্যকরি পরিষদ বিলুপ্ত হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেউ পদত্যাগ করলে তা গৃহীত হবে এবং নির্বাচন কমিশন কমিটি পরিচালনা করবে। যা গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা আছে এবং সেই অনুযায়ী কমিটি পরিচালনা করা হবে। এছাড়া সময় অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া হবে।
ছয় বছরের জন্য ১১ আইনজীবীর নির্বাচনি কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা
সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক তোজাম্মেল হোসেনসহ নির্বাহী কমিটির ১১ সদস্যকে নির্বাচনি কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বাজেটের হিসাব বহির্ভূত ৬৯ লাখ টাকার অবকাঠামোগত কাজ ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ছয় বছরের জন্য তারা আইনজীবী সমিতির কোনো ভোট করতে পারবেন না।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সমাবেশ করেছেন আইনজীবীদের একাংশ।
আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি আবুল হোসেন (২) বলেন, ছয় দিন আগে সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গত বছরের ৩০ মে ১৪১ জন আইনজীবীর দেওয়া একটি অভিযোগপত্র নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। অভিযোগপত্রের বিষয় ছিল- আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক তোজাম্মেল হোসেন তোজামের নেতৃত্বাধীন কমিটি বাজেট বহির্ভূতভাবে ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পানির ফোয়ারা, লিফট নির্মাণসহ পাঁচটি অতিরিক্ত কাজ করেন।
তিনি বলেন, বাজেট বহির্ভূত কাজ গঠনতন্ত্রবিরোধী। তাই তাদের দুই অভিযোগে তিন বছর করে মোট ছয় বছর নির্বাচনি কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ আগামী ছয় বছর তারা বারের কোনো ভোট করতে পারবেন না।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ান উল্লাহ সবুজ বলেন, আগের কমিটির সদস্যদের নির্বাচনি কার্যক্রম নিষিদ্ধের পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। এসএম হায়দারকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, শফিকুল ইসলাম, শম্ভুনাথ সিংহ, খায়রুল বদিউজ্জামান ও শাহনাজ পারভীন মিলিকে সদস্য করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করা হয়।
আদালত চত্বরে বিক্ষোভ
এদিকে আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার পর আদালত চত্বরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আইনজীবীদের একটি অংশ। আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনের সামনে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন তারা।
আইনজীবী আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- শাহ আলম, তোজাম্মেল হোসেন তোজাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সমিতির সিদ্ধান্ত একপেশে। বাজেট বহির্ভূত খরচের কথা বলে সাবেক সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক তোজাম্মেল হোসেন তোজামসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হটকারী সিদ্ধান্ত।
এ বিষয়ে শাহ আলম বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক। কাজের অনিয়মের বিষয়ে তারা প্রমাণ দিতে পারছেন না। বাজেটের মধ্যে পাঁচটি কাজের তালিকা নেই বলে অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। আসল বিষয় হলো- উন্নয়নের পাঁচটি কাজ বাজেটের মধ্যেই ছিল।
এক আইনজীবীর সদস্যপদ স্থগিত
জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মো: সাইদুর রহমান (সাইদ) এর সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে। জেলা আইনজীবী সমিতির অফিস কক্ষের চাবি অফিসের হিসাবরক্ষক মনোরঞ্জন কুমার মন্ডলের কাছ থেকে জোরপূর্বক কেড়ে নেয়া এবং অফিসের জিনিসপত্র তছনছ করার অভিযোগ ওঠে।
এ প্রেক্ষিতে আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে তার সদস্য পদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আগামী ৩ দিনের মধ্যে অ্যাডভোকেট সাইদকে উপরোক্ত কার্যের স্বপক্ষে বক্তব্য পেশ করতে বলা হয়েছে। ব্যর্থতায় ৩ দিন পর তার সদস্যপদ চিরতরে বাতিল করা হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বার কাউন্সিলে অভিযোগ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আ.ক.ম. রেজওয়ান উল্লাহ (সবুজ) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান, বার কাউন্সিলের অর্ডার ১৯৭২ এর ৩২ (১)অনুচ্ছেদের বিধান মতে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিধায় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে।
আইনজীবী রেজওয়ান উল্লাহ বলেন, অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক। আজ বিকেলে তিনি পরিকল্পিত ভাবেই বারের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।