সুপ্রিম কোর্টে তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার নির্দেশ
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেমড সেলে রাখা কেন বেআইনি নয়

বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিত আসামিকে কনডেমড সেলে রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হয়ে কনডেমড সেলে থাকা তিন আসামির দায়ের করা রিট আবেদন শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেল সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

একই সঙ্গে রুলে জেল কোডের ৯৮০ বিধি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের আগামী ৬ মাসের মধ্যে বন্দীদের বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

এর আগে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর তিনজনের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন। তিন রিট আবেদনকারী হলেন- চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেথ সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আবদুর রশিদ ও কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির মো. শাহ আলম। বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে তাঁদের আপিল এবং ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

রিটে যা বলা হয়

রিটে দেশের সব কারাগারে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও ডেথ সেলের (কনডেমড) সংখ্যা এবং একটি ডেথ সেলে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রাখার ব্যবস্থাপনা ও সুযোগ–সুবিধা নিয়ে প্রতিবেদন দিতে কারা মহাপরিদর্শকের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রিটের প্রার্থনায় বলা হয়, বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে তিনজনকে ডেথ সেলে বন্দী করে রাখা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না—এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়। রুল বিচারাধীন অবস্থায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে রিট আবেদনকারীদের (তিনজন) খেলাধুলা, শরীরচর্চা ও অন্যান্য নিয়মিত সুবিধা নিশ্চিতে পৃথক ব্যবস্থাপনায় স্থানান্তরের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রিটে স্বরাষ্ট্রসচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ), আইনসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, কারা মহাপরিদর্শকসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়।

রিটে বলা হয়, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) নিতে হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুসারে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি হাইকোর্টে আপিল করতে পারেন।

হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করার সুযোগ আছে দণ্ডিতের। সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করার সুযোগ আছে।

এ ছাড়া সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। ক্ষমার এই আবেদন রাষ্ট্রপতি যদি নামঞ্জুর করেন, তাহলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আইনগত বৈধতা পায়। অথচ বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশের পরপরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কনডেম সেলে বন্দী রাখা হচ্ছে। হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের আগে দণ্ডিতকে কনডেমড সেলে রাখা তার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।

রিট দায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এক মামলার রায়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদন গ্রহণ না করার পরই দণ্ডিত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গণ্য হবেন। এ অনুসারে সব ধরনের বিচারিক ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই কোনো ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি বলা যাবে ও ডেথ সেলে রাখা যাবে।