সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২২-২০২৩ বর্ষের কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে পুরো এক মাস। দুইদিনব্যাপী এ নির্বাচন গত ১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হলেও এখনো ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।
মূলত সম্পাদকের পদ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আইনজীবীদের এ নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান পদত্যাগ করায় এ নিয়ে জটিলতা আরও ঘনিভূত হয়।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, সম্পাদক পদের ভোট ফের গণনা করা হবে নাকি ভোট গণনা ছাড়াই ফল ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে এক পক্ষ বলছে ভোট আবার গণনা করতে হবে। আবার অন্য পক্ষ বলছে ভোট পুনর্গণনা বা রি-কাউন্টিংয়ের কোনো নিয়মই নেই।
জানা গেছে, এ অচলাবস্থা কাটাতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকরা বৈঠকে বসেছিলেন। পরে তাদের পক্ষ থেকে কয়েকজন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এই দুই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা পুরোপুরি জানা না গেলেও এখনো কোনো দৃশ্যমান সমাধান আসেনি।
এদিকে গত ৩১ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বারের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এর পরে কোনোভাবেই কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নেই। আবার এর মধ্যে নতুন কমিটিও আসেনি। ফলে সুপ্রিম কোর্ট বার এখন কার্যত কমিটিশূন্য।
ভোট গ্রহণের পর এই দীর্ঘ সময় পার হলেও ফল ঘোষণা না হওয়ায় হতাশ অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীরা। এ বিষয়ে সাদা প্যানেল থেকে নির্বাচিত একাধিক প্রার্থীর সাথে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে, তারা খুব হতাশা প্রকাশ করেন। দলীয়ভাবে প্যানেলের কি সিদ্ধান্ত সেই ব্যাপারেও তারা কিছুই জানেন না, কি হতে চলেছে কিছুই বুঝতে পারছেন না।
নেমপ্লেট বিতর্ক
সম্পাদক পদে ভোট গণনা নিয়ে নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা ছাড়াই কার্যনির্বাহী কমিটির সবগুলো পদে নেমপ্লেট পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
নেমপ্লেট লাগানো নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আলাদত অঙ্গন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই নেমপ্লেট লাগানোদের ‘নির্বাচিত’ বলে অভিনন্দন জানাচ্ছেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের অনেকেই নেমপ্লেট লাগানোকে স্বৈরাচারী কায়দায় রাতের অন্ধকারে পদ জবরদখল বলে সোচ্চার হয়েছেন।
যদিও পরের দিন নেমপ্লেট খুলে ফেলেন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেছেন। এসময় বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরাও নিজ দলের সমর্থনে স্লোগান দিয়ে সমবেত হয়। উভয় পক্ষের কয়েক শ’ আইনজীবীর এই মুখোমুখি অবস্থানে সম্প্রতি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
পেছনের কথা
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ দুই দিনে এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। ১৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে ভোট গণনা শুরু হয়, চলে রাত পর্যন্ত। রাত ১টার দিকে নির্বাচন উপকমিটি আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার প্রস্তুতি নিলে সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার দাবি তোলেন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা। অন্যদিকে ফলাফল ঘোষণার দাবি তোলেন বিএনপি-সমর্থিত নীল প্যানেলের সমর্থকরাও। এ নিয়ে সেদিন মধ্যরাতের পরেও পক্ষে-বিপক্ষে চলে হইচই ও হট্টগোল। অনেকে আহ্বায়কের পদত্যাগের দাবিও তোলেন।
এরপর গভীর রাত গড়িয়ে ভোররাত ৩টার দিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। ফলাফল ঘোষণা, নাকি পুনরায় গণনা, আধা ঘণ্টার বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত আসে নতুন করে গণনা করা হবে ভোট৷
রাত সাড়ে তিনটার দিকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এ ওয়াই মসিউজ্জামান আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যান। বেরিয়ে যাওয়ার আগে তিনি জানান, সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে করা আবেদন দুই পক্ষের উপস্থিতিতে পরের দিন বিকেলে অর্থাৎ শুক্রবার (১৮ মার্চ) বিকেল তিনটায় নিষ্পত্তি করা হবে।
প্রকাশ্যে এ ঘোষণা দিলেও স্বাস্থ্যগত কারণ উল্লেখ করে এর আগেই (বৃহস্পতিবার রাতে) তিনি সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে যান।
ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার বিকেলে প্রার্থী আবদুন নূর ও মো. রুহুল কুদ্দুস উপস্থিত হন। কিন্তু কমিটির প্রধান এ ওয়াই মসিউজ্জামান উপস্থিত হননি। এর মধ্যে খবর আসে সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক পদত্যাগ করেছেন। এর পর থেকে বিষয়টি সেভাবেই ঝুলে আছে।