চট্টগ্রামে আইনজীবী সমিতির সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বিরোধ যেন কাটছেই না। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপে কিছুদিন বিরোধ একটু কমলেও আবার এটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ গত রোববার (১৭ এপ্রিল) আদালত ভবন এলাকায় গভীর নলকূপ বসানো নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আইনজীবীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এমনকি নলকূপ বসানো বন্ধ করতে জেলা প্রশাসন থেকে ওয়াসা কর্মকর্তাদের ডেকে আনা হলে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন আইনজীবী নেতারা।
জানা গেছে, নগরের কোর্ট হিলে সড়ক কেটে আইনজীবী সমিতি কর্তৃক গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ করার সময় তা বন্ধ করতে রোববার বিকালে ওয়াসা কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠায় জেলা প্রশাসন। ওয়াসা কর্মকর্তারা এসে তাদের অনুমতি ছাড়া কেন নলকূপ বসানো হচ্ছে তার কৈফিয়ত চায়। আর একপর্যায়ে পুলিশ ডেকে এনে নলকূপ স্থাপন বন্ধ করে দেয়। এটা নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে তাদের প্রচণ্ড রকমের কথা কাটাকাটি হয় এবং শেষ পর্যন্ত নলকূপ স্থাপন বন্ধ হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে গভীর নলকূপ স্থাপনের আগে অনুমতি নিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে ওয়াসা কিছুটা ছাড় দেয়। নলকূপ স্থাপনের পরে অনুমতি নেওয়ার সুযোগ দেয়। কেননা অনেক সময় দেখা যায় নলকূপ স্থাপন করার পর পানি মেলে না। তখন তো আগে অনুমতি নিয়েও কাজ নেই। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আইনজীবী সমিতির দ্বন্দ্বের কারণেই এই নলকূপ স্থাপন নিয়ে এত কথা হচ্ছে। আর দুই পক্ষের মাঝখানে পড়তে হচ্ছে ওয়াসাকে।’
তবে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, গভীর নলকূপ বসাতে ওয়াসার অনুমোদন নিতে হয়। এটাই নিয়ম। এই নিয়ম সবার জন্য সমান। আইনজীবীরা কোনো অনুমোদন ছাড়াই নলকূপ বসাচ্ছিল। তাই আমাদের লোকজন গিয়ে এটা বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টি এতটুকুই।
আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের আগে থেকেই গভীর নলকূপ আছে। কিন্তু সেটিতে এখন লাল পানি বের হয়। এ কারণে কতটুকু গভীরে স্থাপন করলে পরিষ্কার পানি পাওয়া যাবে সেটি টেস্ট করতে নলকূপ স্থাপন করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ওয়াসাকে দিয়ে সেই কাজেও বাদ সাধছে। আমরা তাদের সতর্ক করে দিচ্ছি বেশি বাড়াবাড়ি করলে বড় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।’
তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় নলকূপ অথবা পানি উত্তোলন করতে হলে ওয়াসার অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু আইনজীবী সমিতির নেতারা রাজস্ব ফাঁকি দিতে কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়ে ‘পরীর পাহাড়ে’ গভীর নলকূপ স্থাপন করছে। এটা এ পাহাড়ের জন্য যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ গভীর নলকূপ স্থাপন না করতে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা বাধা দিলে আইনজীবী সমিতির নেতারা তা অমান্য করেন। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।