তৃতীয় লিঙ্গের হয়ে কেউ জন্ম নিলে সে পরিবারের সম্পদের অংশ পাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেউ যদি একটু মেয়েলি স্বভাবের হয় সে মেয়ের অংশ এবং পুরুষের মতো আচরণ হলে পুরুষের অংশ পাবে; এটা ধর্মীয় নির্দেশনাও আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দেশের চারটি উপজেলায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে গৃহহীনদের উপহারের ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তৃতীয় ধাপে নির্মাণাধীন একক ঘরের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৭৪টি। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৯০৪টি হস্তান্তর হলো আজ।
এই ধাপে বরগুনায় ৪১১টি পরিবারকে জমিসহ গৃহ প্রদান করা হয়। যার মধ্যে বরগুনার সদর উপজেলাধীন খাজলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩২৯টি গৃহ আজ হস্তান্তর করা হয়েছে। যার মধ্যে ঘর পেয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের ২২ জন, ১০ জন পুনর্বাসিত ভিক্ষুক, ২০ জন শারীরিকভাবে অক্ষম, ২৭ জন স্বামী পরিত্যাক্তা নারী এবং ৪১ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এখানে আরও ১৫০টি গৃহ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পটির আঙিনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপকারভোগীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক পর্যায়ে প্রকল্পে ঘর পাওয়া একজন হিজড়াও কথা বলেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি আমার ১০ বছর বয়সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি। আমার সমাজ থেকে আমি বিচ্ছিন্ন হয়েছি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমি এক পাকা ঘর পেয়েছি, দুই শতক জমি পেয়েছি। আজকে আমি এই ঘরের মালিক। আজকে আমি আমার নিজের ঘরে বসে ঈদ করতে পারবো। বিগত ২০-২২ বছর ধরে হাত পেতে খেয়েছি, কেউ ঘরও ভাড়া দিতে চায়নি। আর এখন নিজের ঘরে বসে ঈদ করতে পারবো, এর চেয়ে আনন্দের কী হতে পারে।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এজন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটা মানুষ যখন জন্মগ্রহণ করেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কাকে কীভাবে জন্ম দেবেন, কেউ বলতে পারেন না। তৃতীয় লিঙ্গের বলে কাউকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে এটা কিন্তু আমাদের ধর্মে বলা নেই। তারাও পরিবারেরই অংশ, পরিবারেরই একজন। ভবিষ্যতে এমন কোনও শিশু জন্ম নিলে সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। সে পরিবারের একজন হিসেবেই জীবনযাপন করবে।’
তৃতীয় লিঙ্গের হয়ে কেউ জন্ম নিলে সে পরিবারের সম্পদের অংশও পাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম ধর্মেও বলা আছে, সে সম্পদের অংশ পাবে। কেউ যদি একটু মেয়েলি স্বভাবের হয় সে মেয়ের অংশ এবং পুরুষের মতো আচরণ হলে পুরুষের অংশ পাবে; এটা ধর্মীয় নির্দেশনাও আছে। আগামীতে কোনও সন্তান এভাবে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না।’
এ নির্দেশনা শুধু বরগুনার জন্য নয়, সারাদেশের সবার জন্যই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা সবার জন্যই আমি বলে যেতে চাই, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে তারা আমাদের পরিবারেরই একজন। কারণ আল্লাহর সৃষ্টির উপর কারও হাত দেওয়ার অধিকার কারও নেই।’