বেলাল আজাদ, কক্সবাজার: ‘পাঁচ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে হত্যাচেষ্টা ও অঙ্গহানি’র অভিযোগে সাংবাদিকের দায়ের করা মামলায় এক স্কুলছাত্রের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। ‘মামলার আসামী নয় বরং অভিযুক্ত শিশু ও স্কুল ছাত্র’ বিবেচনায় তৎক্ষণাৎ তাকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন বিচারক এবং আদেশ মূলে সে সাথে সাথেই মুক্ত হয়।
কক্সবাজারের শিশু আদালত নং-৩ এর বিচারক (জেলা জজ) মোঃ আবদুর রহিম গত মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) এ আদেশ দেন।
ওই স্কুলছাত্রের নাম রাহমত উল্লাহ (১৬)। উখিয়ার সোনারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র।
রাহমত উল্লাহর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহি উদ্দীন খান জানান, রাহমত উল্লাহকে ২৬ এপ্রিল বিকেলে উখিয়া থানার পুলিশ আদালতে সোপর্দ করলে, মাননীয় শিশু আদালত নং-৩ তাকে শিশু ও স্কুল ছাত্র বিবেচনায় জামিনে মুক্তির আদেশ দেন।
এর আগে ২৫ এপ্রিল রাতে র্যাব-১৫ (কক্সবাজার) রাহমত উল্লাহকে গ্রেফতার করে উখিয়া থানায় সোপর্দ করে। পরদিন ২৬ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উখিয়া থানাধীন ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোঃ ওলিউর রহমান তাকে আদালতে সোপর্দ করেন।
জানা যায়, গত ৫ এপ্রিল রাত ১০ টায় উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাইছড়ি গ্রামে কক্সবাজারের স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ওয়ান নিউজ বিডি ডটকম’র সম্পাদক ও স্বাস্থ্য সেবা উদ্যোক্তা ছলিম উল্লাহ সুজনকে ঐ এলাকার মৃত আবদুস সাত্তারের পুত্র ছৈয়দ হোসেন ও তার পুত্র এবং ভাইয়েরা মিলে ‘৫ লক্ষ টাকা চাঁদার দাবীতে হত্যা চেষ্টা ও অঙ্গহানী’ করার অভিযোগে সাংবাদিক ও স্বাস্থ্য উদ্যোক্তা ছলিম উল্লাহ সুজন নিজেই বাদী হয়ে ৯ এপ্রিল উখিয়া থানায় মামলা (জি.আর.নং-৪৫২/২০২২, উখিয়া থানাী মামলা নং-৩৭, তাং-০৯/০৪/২০২২ ইং, ধারা: ১৪৩/৩২৩/৩২৬/৩০৭/৩৮৬/৩৭৯ দঃবি) দায়ের করেন। ঐ মামলার এজাহারে ২নং ক্রমিকে ছৈয়দ হোসেনের পুত্র রাহমত উল্লাহকে বয়স ২২ বছর উল্লেখ করে আসামী করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ ওলিউর রহমান জানান, এজাহারে ২২ বছর বয়সী হিসেবে আসামী হওয়া রাহমত উল্লাহকে পলাতক আসামী হিসেবে ২৫ এপ্রিল গ্রেফতার করে উখিয়া থানায় সোপর্দ করলে, আমি যাচাই-বাছাই করে সে ‘শিশু অপরাধী’ হিসেবে আদালতে সোপর্দ করি। মামলার যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
র্যাব কর্তৃক আটকের পর আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হওয়া সোনারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণীর ছাত্র রাহমত উল্লাহ জানায়, তার বাপ-চাচাদের সাথে ছলিম উল্লাহ সুজনের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলার বিষয়টি সে জানলেও, মামলায় উল্লেখিত ঘটনা বা মামলা হওয়ার কথা সে জানত না। ২৫ এপ্রিল গভীর রাতে র্যাব তাকে ধরে নিয়ে থানায় সোপর্দ করলে সে মামলা সম্পর্কে অবগত হয়।
এই স্কুলছাত্র আরও জানায়, আমাকে গ্রেফতার থেকে শুরু করে আদালত হতে মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত আমি দুর্বিষহ কষ্টে সময়গুলো অতিবাহিত করেছি। তবে মাননীয় আদালত আমাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ায় আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
এদিকে রাহমত উল্লাহর পিতা ও একই মামলার এজাহার নামীয় ১নং ক্রমিকের আসামী ছৈয়দ হোসেন (৫৪) জানান, মামলাটির এজাহারে আনীত অভিযোগ বাস্তবতার সম্পূর্ণ উল্টো ও অনেকটা বানোয়াট। মামলায় উল্লেখিত মতে, ছলিম উল্লাহ সুজন কে কেউ আঘাত বা তার কাছে কোন চাঁদা দাবী করা হয়নি। সে থানা কে মিথ্যা তথ্য ও অর্থ দিয়ে প্রভাবিত করে মিথ্যা ও হয়রানী মূলক মামলাটি করেছে।
তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা হল, আমাদের পিতা আবদুস সাত্তারের জীবদ্দশায় ১৯৭৫ সালে যথাযথ রেজিস্ট্রি কবলা মূলে জনৈক সুলতান আহমদের কাছ থেকে ৮৫ শতক ভিটে শ্রেণীর জমি ক্রয় করে, তাতে আবদুস সাত্তার ও তার সন্তানের দীর্ঘ যুগ যুগ ধরে বসতঘর সহ শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছেন। ইতিমধ্যে ২০১৬ সালে আমাদের পিতা আবদুস সাত্তার মৃত্যু বরণ করলে আমরা ওয়ারিশ মূলে ঐ জমির মালিক হই। এই জমিতে ছলিম উল্লাহ সুজনের কোন দখল-সত্ব বা মালিকানা নাই ও কখনো ছিল না। কিন্তু একই খতিয়ানে উক্ত ছলিম উল্লাহ সুজনের দাদা মৃত হাবিব উল্লাহর কোন স্বত্ব বিহীন হয়েও নাম থেকে যাওয়ার সুযোগে সে কৌশলে নামজারী খতিয়ান সৃজন করলে, উক্ত নামজারী খতিয়ান বাতিলের জন্য মাননীয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (রাজস্ব সার্বিক) আদালতে গত ২০/০৯/২০২১ ইং নামজারী আপীল মামলা নং- ২৭/২০২১ মামলা দায়ের করা হয়।
ছৈয়দ হোসেন বলেন, এরপর থেকেই ছলিম উল্লাহ সুজন দুর্লোভের বশীভূত হয়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে আমাদের ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া ও যুগ যুগ ধরে বসতঘর সহ বসবাস করে আসা ভিটে জমি জোর-জবরদস্তি করে দখল করার অপচেষ্টা করে আসছিল। সবশেষে ৫ এপ্রিল রাত ১০ টায় সন্ত্রাসী লোকজন ও অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমাদের বসত ভিটেয় গিয়ে অতর্কিত হামলা করে আমি ও আমার স্ত্রী-সন্তানকে হামলা, আহত, শালিনতা হানি, বসত ভিটের ঘেরাবেড়া ভাংচুর, লুটপাট ও জিম্মি করে খালি স্ট্যাম্পে দস্তখত নেয়। এসময় আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আমরা প্রাণে রক্ষা পাই।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে কক্সবাজারের মাননীয় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় (উখিয়া) আমলী আদালতে গত ১৩ এপ্রিল মামলা (সি.আর. নং-১২৯/২০২২, ধারা: ১৪৩/৪৪৮/৪৫২/৪২৭/৩৫৪/৩৭৯/৩৬৪/৩৮৬/৫০৬(২)/৩৪ দঃবিঃ) দায়ের করেছি, যা উখিয়া থানায় তদন্তাধীন আছে। মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে হয়রানী মূলক মামলায় আমার ১৬ বছর বয়সী স্কুল ছাত্র কে বয়স ২২ হিসেবে উল্লেখ করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তার ছাত্র ও ভবিষ্যৎ জীবন নষ্ট করা খুবই দুঃখ জনক।
অন্যদিকে মামলার বাদী সাংবাদিক ও স্বাস্থ্য উদ্যোক্তা ছলিম উল্লাহ সুজনের বক্তব্য নিতে চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।