অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বেকসুর খালাসের রায় দিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানো বিচারক মো. মোতাহার হোসেনের অবৈধ সম্পদের খোঁজ থমকে আছে। আট বছর আগে তার সম্পদের অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও রহস্যজনক কারণে তা ধামাচাপা পড়েছে। দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না থাকায় বিষয়টি এখন আর আলোচনায় নেই।
‘অবৈধভাবে বিদেশে অর্থ পাচার’-সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন বিচারক মোতাহার হোসেন। পাশাপাশি তার বন্ধু বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে অর্থদণ্ডসহ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সে সময় ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক হিসেবে কর্মরত ছিলেন মোতাহার।
রায় নিয়ে সে সময় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বরে অবসরে যান তিনি। এরপর ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি গোপনে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন ওই বিচারক। পরে দুদকের করা আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খালাসের রায় বাতিল করে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই তারেক রহমানকে সাত বছর সাজা দেন হাইকোর্ট।
অবসরে যাওয়ার আগে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে তারেক রহমানের মামলার রায় দেওয়া হয়েছে মর্মে বিচারক মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে দুদকের কাছে। অভিযোগের পর প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
সে সময় দুদক থেকে জানানো হয়েছিল, একজন বিশেষ জজ হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তার আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও ঘুষ নিয়ে আসামিদের খালাস দেওয়ার অভিযোগ কমিশনের প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়া যায়।
মোতাহারের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান সে সময়ে দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুসন্ধান শুরুর পরপরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোতাহারকে দুদকে তলব করা হয়েছিল। তার বিদেশ ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল দুদক। এর আগেই মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান মোতাহার হোসেন। পরে ওই দুদক কর্মকর্তা অবসরে যান। এরপর আর ওই বিচারকের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের কোনো কার্যক্রম নেই।
তখন এই পলাতক বিচারককে খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল ও যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল দুদক। পরে তার ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। এরপর আর অনুসন্ধান কাজ আগায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুদকের সদস্য (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘এটা অনেক দিন আগের বিষয়। ফাইল না দেখে বলা যাবে না।’ দুদক সচিব মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।’
একাধিক সূত্র জানায়, মোতাহারের ছেলে আরিফ হাসান রাহুল লন্ডনে পড়াশোনা করেন। সেখানে তার বাড়ি রয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে দুটি ফ্ল্যাট, আদাবরে একটি বাড়ি ও বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পে একটি প্লট রয়েছে। এ ছাড়া তার গ্রামের বাড়ি নাটোরে নামে-বেনামে সম্পত্তি রয়েছে। তার আয়ের সঙ্গে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের সামঞ্জস্য নেই বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়া যায়। অনুসন্ধান না হওয়ায় কোনো কিছুই দালিলিকভাবে প্রমাণ করা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, সাবেক বিচারক মোতাহার দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় বসে দেশে-বিদেশে থাকা পরিচিতজনসহ অন্যদের আইনি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। মালয়েশিয়ায় থাকা একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, মোতাহার হোসেন ও তার ছেলে বর্তমান শরণার্থী কার্ড নিয়ে শাহ আলম শহরে অবস্থান করছেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় বসবাসরতদের এবং বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ক্রিমিনাল ও সিভিল মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন।
সূত্র: সমকাল