হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে পালিয়ে থাকা অবস্থায় ভারতে গ্রেফতার প্রশান্ত কুমার হালদারের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জারি করা রুল শুনানির জন্য উঠছে। পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এ সময় আদালত বলেছেন, ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।
আজ সোমবার (১৬ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো.ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
এদিন ওই বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষ রুল শুনানির জন্য মেনশন করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
তিনি জানান, পি কে হালদারকে গ্রেফতার ও দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে হাইকোর্টের সুয়োমোটো রুল ছিল। মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি পি কে হালদার ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন। সেটি আদালতের নলেজে এনেছি।
আদালত বলেছেন, পি কে হালদারকে গ্রেফতারের বিষয়ে আদালতের আদেশ ছিল। এমতাবস্থায় ভারতে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। তাই ভারতকে ধন্যবাদ জানানো উচিত। কারণ সে এদেশের চিহ্নিত অর্থপাচারকারী।
আদালত আরও বলেছেন, আমাদের মেসেজ ক্লিয়ার। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অপরাধের বিরুদ্ধে আমারা জিরোটলারেন্স। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, সে যেই হোক। আমরা এ ব্যাপারে সিরিয়াস। এরপর রুলটি আগামীকাল কার্যতালিকায় রাখার আদেশ দেন আদালত।
২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে `পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে রুল জারি করেন আদেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রুলে পি কে হালদারকে গ্রেফতার ও দেশে ফিরিয়ে আনতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না এবং এ ক্ষেত্রে দায়ী ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
এদিকে চলতি বছরের গত ১৪ মে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পশ্চিমবঙ্গ থেকে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে থাকা এই বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে।
ইডি জানায়, পি কে হালদার রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, আয়কর দপ্তরের পরিচয়পত্র পি এ এন (প্যান) এবং আধার কার্ডের মতো বিভিন্ন ভারতীয় সরকারি পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগরে অবস্থান করছিলেন। তিনি সেখানে পি কে শিব শংকর হালদার নামে নিজেকে পরিচয় দিতেন ও ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দাবি করতেন।
জানা গেছে, উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পারগনার বিভিন্ন এলাকায় পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা স্থাবর সম্পত্তি কিনেছেন। বর্তমানে সেগুলো সিলগালা করা হয়েছে।
রোববার প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পি কে হালদার বাংলাদেশের মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি। আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে চেয়েছি। শুনেছি পি কে হালদার গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু তারা আমাদের এখনো অফিসিয়ালি কিছু জানায়নি। ভারত অফিসিয়ালি আমাদের জানালে তাকে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
একইদিন নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ইডি তাকে গ্রেফতার করেছে । এখন এর পরবর্তী প্রক্রিয়া হচ্ছে বাংলাদেশে নিয়ে এসে তাকে বিচারের সম্মুখীন করা। আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি আসে সেটার আওতায় আনা। এছাড়া তার বিরুদ্ধে যেহেতু ইন্টারপোলের রেড এলার্ট জারি করা আছে, সব ধরনের চেষ্টা করা হবে তাকে নিয়ে আসার জন্য। উদ্দেশ্যে হচ্ছে তাকে নিয়ে এসে বিচারের সম্মখীন করা। কারণ এ টাকাটা জনগণের টাকা।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আমাদের তথ্য উপাত্ত আছে, সেগুলো যদি ভারতকে দিই, যেভাবে পি কে হালদারকে গ্রেফতার করেছে তাদের টিম ,ঠিক সেভাবে সে গতিতে যদি কাজটি করে আমি মনে করি ৩ থেকে ৬ মাসের বেশি লাগার কথা না।