ভারতের বারানসির জ্ঞানবাপি মসজিদে মুসলমানদের প্রবেশ ও নামাজ পড়ায় কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
সম্প্রতি মসজিদটির ভেতরে অবস্থিত ওজুখানার একটি জলাশয়ের ভেতরে একটি ‘শিব লিঙ্গ’ থাকার দাবি ওঠে। যদিও মসজিদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যেটিকে শিব লিঙ্গ বলা হচ্ছে সেটি আসলে পানির একটি ফোয়ারা। কিন্তু শিব লিঙ্গ থাকার বিষয়টি দাবি করার পর গত সোমবার (১৬ মে) বারানসির একটি স্থানীয় আদালত জ্ঞানবাপি মসজিদটি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
সেই নির্দেশ স্থগিত চেয়ে পরদিন মঙ্গলবার (১৭ মে) মামলার শুনানি হয় বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি পি এস নরসিংহের এজলাসে। সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেখানে কথিত শিব লিঙ্গ (যদি থাকে) থাকার কথা বলা হচ্ছে শুধুমাত্র সেই জায়গাটি যেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু মসজিদে মুসলমানদের নামাজ আদায়ে কোনো বাধা দেওয়া যাবে না।
বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নির্দেশে বলা হয়, মুসলমানদের ধর্মাচরণে অজু করা আবশ্যিক। তা করতে বাধা দেওয়া যাবে না। বারানসির জেলা শাসককে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার ব্যবস্থা তাঁকে করতে হবে, কিন্তু সে জন্য মুসলমানদের প্রবেশ ও নামাজে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না।
সেই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার।
মসজিদটির পেছনে একটি মন্দিরে উপসনা করার জন্য পিটিসন দায়ের করার পর মসজিদ কমপ্লেক্সের ভিডিও করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বারানসি কর্তৃপক্ষকে। আর এ ভিডিও করার সময়ই মসজিদের ওজুখানায় শিবলিঙ্গ খুঁজে পাওয়ার দাবি ওঠে।
মসজিদ কমপ্লেক্সের ভিডিও ধারণ বন্ধ করার জন্য পিটিশন দায়ের করে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এই পিটিশনের শুনানিতে মঙ্গলবার মসজিদ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টকে বলেন, কিভাবে (স্থানীয়) আদালত মসজিদ বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন? যখন যে কমিটিকে ভিডিও করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারা সেটি সম্পন্ন করে জমাই দেয়নি।
তাদের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন, যদি শিবলিঙ্গ পাওয়া যায় তাহলে সেই জায়গাটি সুরক্ষিত করা উচিত। কিন্তু মসজিদে নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়া যাবে না।
এদিকে বিচারক ডিআই চন্দ্রচুদ উত্তর প্রদেশের সরকারের প্রতিনিধি সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে জিজ্ঞেস করেন, কোথায় পাওয়া গেছে শিবলিঙ্গ?
এমন প্রশ্নের উত্তরে তুষার মেহতা বলেন, আমরা রিপোর্ট দেখিনি। জেনে কাল বিস্তারিত জানাব। মেহতা জানান, মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল যেন সেখানে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিরা কথিত শিবলিঙ্গতে পা না লাগান।
এদিকে জ্ঞানবাপি মসজিদটি বিখ্যাত কাশি বিশ্বনাথ মন্দিরের পাশে অবস্থিত।
পাঁচজন হিন্দু নারী কোর্টের দারস্থ হয়ে অনুরোধ করেন, পুরনো মন্দিরের বাইরের দেওয়ালে অবস্থিত মূর্তিগুলোতে এবং দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সকল দেবতাগুলোতে যেন প্রতিদিন উপাসনা করার সুযোগ দেওয়া হয়।
বারানসরি আদালত মসজিদ কমপ্লেক্স, তিনটি গম্বুজ, আন্ডারগ্রাউন্ড এবং জলাশয়ের ভিডিও করার নির্দেশ দেন।
সূত্র: এনডিটিভি