মুক্তিযুদ্ধের সময় মৌলভীবাজারের বড়লেখার মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনার সময় ধর্ষণের শিকার নারীদের ‘ওয়ার হিরোইন’ উপাধির দেওয়ার পাশাপাশি স্যালুট জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এমন পর্যবেক্ষণ দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৯ মে) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও কে এম হাফিজুল আলম।
আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন এম সারোয়ার হোসেন ও আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মো. মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৌলভীবাজারের তিন আসামির বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এসব অভিযোগের মধ্যে আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল ও তার ভাই পলাতক আসামি আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে ২ এবং ৫ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, আর ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগের প্রতিটিতে আলাদাভাবে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। অপর আসামি আব্দুল আজিজ ওরফে মনাইয়ের বিরুদ্ধে ১ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং ৪ নম্বর অভিযোগে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে সন্তুষ্ট জানিয়ে প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি বলেন, এ রায়ে আমি একজন নারী হিসেবে বীরাঙ্গনাদের সম্মান জানাচ্ছি, যারা এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে আসতে পেরেছেন এবং যারা আসতে পারেননি সবার প্রতি সম্মান জানাচ্ছি। এ রায়ে আমরা প্রসিকিউশন পক্ষ সন্তুষ্ট।
রায়ের পরে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি আদালতের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, বুলেটেও তো মানুষকে হত্যা করা হয়। কিন্তু যুদ্ধের সময় নারীদেরকে যে ধর্ষণ করা হয়েছে তা বুলেটের চেয়েও ভংঙ্কর শক্তিশালী ছিলো।
আদালত আরও বলেন, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ট্রমার মধ্যে তাদের সময় পার হয়েছে। সামাজিকভাবে মানুষিকভাবে শারীরিকভাবে ওই ট্রমা থেকে তারা কখনোই বের হতে পারেন না। এ মামলার ভুক্তভোগী ৫ নম্বর সাক্ষী অফিয়া বেগম প্রেগনেন্ট ছিলেন। তিনি এখনও ট্রমার মধ্যেই আছেন। তিনি কোর্টে এসে তার সাক্ষ্য দিতে পেরেছেন।
এ সময় আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, তারা (ধর্ষণের শিকার নারীরা) যুদ্ধের হিরোইন। ‘ওয়ার হিরোইন’ হিসেবে তাদেরকে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ট্রমা থেকে তারা কখনোই বের হতে পারে না। আদালত তাদেরকে স্যালুট জানিয়েছেন। নারি হিসেবে এই মামলা পরিচালনা করে আমিও তাদেরকে স্যালিউট জানাই।
রায়ে ২৪০ পৃষ্ঠার মধ্যে সারসংক্ষেপ অংশ পাঠ করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম। এরপর রায় পড়েন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার এবং সর্বশেষ দণ্ডসহ মূল রায় ঘোষণা করে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।