ফেনসিডিলকে মাদক হিসেবে উল্লেখপূর্বক ফেনসিডিল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ঘোষণা করা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।
রাষ্ট্র বনাম বাদল কুমার পাল মামলার রায়ের ২২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ রায় দেন।
আপিল বিভাগের লিখিত রায়ে বলা হয়, পরিমাণ যতটুকুই থাকুক না কেন তা মাদক হিসেবে গণ্য হবে।
আদালত বলেন, ফেনসিডিল ওষুধ নয়, এটি মাদকদ্রব্য হিসেবে গণ্য হবে। তাই ফেনসিডিল বহন করা বা নিজের দখলে রাখা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ অপরাধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০ এর ধারা ১৯(১) সিরিয়াল ৩ এর অধীনে বর্ণিত শাস্তি পেতে হবে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছেন, আমরা মনে করি যেহেতু কোডাইন ফসফেট (codeine phosphate) কোডাইনের একটি উৎপন্ন বস্তু বা পদার্থ, তাই এটিকে মাদকদ্রব্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং অন্য কোনো তরল পদার্থের সঙ্গে কোডিন ফসফেটের মিশ্রণের যে কোনো অংশ তরল পদার্থের মোট পরিমাণকে মাদকদ্রব্যে পরিণত করে। এ ধরনের সংমিশ্রণের মোট পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে শাস্তি আরোপ করতে হবে।
আদালত আরও বলেছেন, এটা খুব স্পষ্ট যে, কোডাইন ফসফেটের অস্তিত্ব থেকে ফেনসিডিল একটি মাদকের সংমিশ্রণে পরিণত হয়। তাই ফেনসিডিল দখলে রাখা বা বহন করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০ এর ধারা ১৯(১) সিরিয়াল ৩ এর অধীনে বর্ণিত শাস্তি পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে।
আপিল বিভাগ রায়ে বলেছেন, এসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা একমত পোষণ করছি যে, হাইকোর্ট বিভাগ ফেনসিডিলকে মাদকদ্রব্য হিসেবে বিবেচনা না করে ভুল করেছেন। এ ব্যাপারে আমরা হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহী। তাই ফেনসিডিলকে মাদকদ্রব্য হিসেবে গণ্য করে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় ও আদেশ (আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড) বহাল করা হলো।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাদল পাল ২৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হন। ২০০০ সালে ওই মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
পরবর্তীতে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করা হয়। আপিল শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট খালাস দেয় বাদলকে। যুক্তি হিসেবে উচ্চ আদালত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ফেনসিডিল বহন অপরাধ নয় বলে উল্লেখ করেন।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় রাষ্ট্রপক্ষ। পরে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে ওই মামলার শুনানি হয়। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন। সেই সাথে বাদলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন।